ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

‘প্রথমে প্রতিভার পরে আমার প্রেমে পড়েছিলেন হুমায়ূন’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৯:২৯, ১৩ নভেম্বর ২০১৭

হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর যাদুকর। যখন যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীকে উপজীব্য করে সাহিত্য রচনা ও সেই একই শ্রেণীকে সাহিত্যমুখী করার মধ্য দিয়ে তিনি একটি নতুন ধারার বা চিন্তার জন্ম দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রেও একটি পরিচ্ছন্ন ধারার জন্ম দেওয়া ও সাধারণ শিক্ষিত সমাজকে নাটকমুখো করার ক্ষেত্রেও তার অবদান অনন্য। হুমায়ূন আহমেদের এর তুলনা হুমায়ূন আহমেদ নিজেই।

পৃথিবীর সব শক্তিশালী সৃজনশীল লোকদের মতো তাঁর জীবনেও হয়তো কষ্ট ছিল, একাকিত্ব ছিল, স্বপ্ন ছিল, অপূর্ণতা ছিল। হয়তো বলছি এজন্য এটা আমাদের পাঠক হিসেবে ভাবনা। কিন্তু অন্য সবার মতো তাঁরও আশ্রয় ছিল। নির্ভরতা ছিল। হ্যাঁ, তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন। তাঁর স্ত্রী। তাঁর সন্তানদের মা। তিনি কী বলেন? তা জানতেই খ্যাতিমান এ অভিনেত্রীর মুখোমুখি হয় একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদের কোনো অসম্পূর্ণ কাজটি আপনি করছেন?

মেহের আফরোজ শাওন: হুমায়ূন আহমেদ দুটি অবুঝ শিশুপুত্র রেখে গেছেন। এই শিশুদের মানুষ করাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আবার এটাও সত্য যে, তার কাজগুলো তিনি যেভাবে করতে পারতেন, পৃথিবীর অন্য কারো পক্ষে সেভাবে করা সম্ভব নয়।

একুশে টিভি অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদের অপূর্ণ স্বপ্ন কী? যা তিনি করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু করতে পারেননি? গোপন লালিত স্বপ্ন…

মেহের আফরোজ শাওন: (খানিকটা বিমর্ষ...) তাঁকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হয়েছিল। তখন তিনি আফসোস করেছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আমাদের দেশে একটা ক্যান্সার হাসপাতাল করা দরকার। তখন তিনি ক্যান্সার হাসপাতাল নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি যদি সময় পেতেন তাহলে ক্যান্সার হাসপাতাল করার জন্য একটা উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখাতেন।

একুশে টিভি অনলাইন: তিনি নেই। তাই বলে কী তার স্বপ্নগুলোও অপূর্ণ থেকে যাবে? আপনি আছেন। তাঁর অনেক শুভ্যার্থী আছে...

মেহের আফরোজ শাওন: দেখুন, আমরা সবাই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছি। খেয়াল করলে দেখবেন, এই ভাষণের প্রতিটা দিকের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য আছে। গলার স্বর, বঙ্গবন্ধুর বডি ল্যাংগুয়েজ, অঙ্গুলি নির্দেশনা, দৃষ্টি… সব ম্যাচিং করা। ভাষণটা বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন বলেই, সারা দেশের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি-আপনি দিলে কিন্তু তা হতো না। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই।

ঠিক তেমনি হুমায়ূন আহমেদ ডাক দিলে যে কাজটি হতো, আমি শাওন সেই ডাক দেওয়ার সাহস রাখি না। হুমায়ূন আহমেদের জন্য কাজটি যতটা সহজ ছিল, আমার বা আমাদের জন্য কাজটি ঠিক ততোটাই কঠিন।

তবে আমি সরকারের কাছে, দেশের জনগণের কাছে, বিশেষ করে আপনারা যারা গণমাধ্যমে কাজ করছেন তাদের কাছে আবেদন রাখব, সবাই মিলে হুমায়ূন আহমেদের এই অপূর্ণাঙ্গ স্বপ্নটি রূপ দেওয়া সম্ভব।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার এবং হুমায়ুন আহমেদ-এর একটা আলাদা ভূবন আছে। যেটা একান্তই আপনাদের। সেখানে পৃথিবীর অন্য কারো কোনো অংশীদারিত্ব নেই। এই জীবন- অর্থাৎ আপনাদের পরিচয়, ভালো লাগা তৈরি হওয়া, প্রেম নিবেদন, বিয়ে। এখানে অনেক কিছুই দেশের মানুষ- অর্থাৎ যারা ওনাকে ভালবাসেন তারা জানেন না। কখনো সেভাবে মুখ খোলেন নি। খুলবেন কখনো?

মেহের আফরোজ শাওন: অবশ্যই মুখ খুলব। আমি আপনাদের কাছেই বলব। গণমাধ্যম আমাদের সঙ্গে জনগণের যোগসূত্র। তবে আরো সময় হোক। আমাদের একটা সময় আছে ভীষণ কষ্টের। সেটি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকেই প্রথমে বলব।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: হুমায়ুন আহমেদ মারা যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে লিখেছিলেন ‘দেয়াল’। পরে তাঁকে ‘দেয়াল’ কিছুটা সংশোধন করতে হয়েছিল আইনগত কারণে। এটা নিয়ে তাঁর কী কোনো অস্বস্তি ছিল?

মেহের আফরোজ শাওন: না, হুমায়ূন আহমেদ কখনো অস্বস্তি নিয়ে কোনো কাজ করতেন না। তিনি স্বর্নিভর ছিলেন। কখনো কারো মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তিনি যখন যা করতে চেয়েছেন তা করেছেন। কখনো কারো দিকে তাকিয়ে থাকেন নি। ‘দেয়াল’ নিয়েও তাঁর কোনো অতৃপ্তি বা অস্বস্তি ছিল না।

একুশে টিভি অনলাইন: তিনি যদি আজ বেঁচে থাকতেন তাহলে ‘ডুব’ নিয়ে কী বলতেন?

মেহের আফরোজ শাওন: (আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, পরে নিজেকে সামলে বলেন) আমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে চাইনা। সময়ই অনেক কিছুর উত্তর দেয়।

একুশে টিভি অনলাইন: মেহের আফরোজ শাওন- এর অনেক গুণ। ভাল গান গায়, ভাল অভিনয় করে। হুমায়ূন আহমেদ কী শাওনের এসব প্রতিভার প্রেমে পড়েছিলেন, নাকি ব্যক্তি শাওনের প্রেমে পড়েছিলেন?

মেহের আফরোজ শাওন: (হেসে) আমার তো মনে হয় দু’টো বিষয়ই পরিপূরক। তবে হ্যাঁ, তিনি প্রথমত আমার প্রতিভার প্রেমে পড়েছিলেন, এরপর তিনি আমার প্রেমে পড়েছিলেন।

একুশে টিভি অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদের তিনটি জনপ্রিয় চরিত্র আছে। হিমু, মিসির আলী ও শুভ্র। কোন চরিত্রটি আপনার পছন্দ?

মেহের আফরোজ শাওন: আমার পছন্দ মিসির আলী। ভারী ব্যক্তিত্ব, বাস্তববাদী, যুক্তিসংগত দৃষ্টি ‍যিনি পোষণ করেন।

একুশে টিভি অনলাইন: কিন্তু হুমায়ুন আহমেদের মধ্যে হিমুর মতো একটা বোহেমিয়ান ভাব ছিল।

মেহের আফরোজ শাওন: হুমায়ুন আহমেদ যখন যে চরিত্রটা লিখতেন তিনি তখন সেই অবস্থায় নিজেকে নিয়ে যেতেন। এই অদ্ভুত ক্ষমতা তার ছিল।

একুশে টিভি অনলাইন: তিনি কখনো আপনার মধ্যে ‘রূপা’কে খুঁজেছিলেন?

মেহের আফরোজ শাওন: ( হা..হা..হা…) না ভাই, তবে একটা বিষয় খেয়াল করবেন, রূপা চরিত্রটা কিন্তু স্পষ্ট না। তার সঙ্গে হিমুর দেখা হয় না। শুধু ফোনে কথা হয়। তাদের প্রেম মিলনাত্মক না। না বললেই নয়, হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলেছেন, মানুষ হিমু বা রূপা’র মধ্যে মজা খোঁজে। কিন্তু আমি এখানে একটা মেসেজ দিতে চেয়েছি। যা হয়তো অনেকেই বুঝে না।

একুশে টিভি অনলাইন: হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সেই সুদূর মার্কিন মুল্লুকে হাসপাতালে, তিনি মারা যাওয়ার আগে আপনার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল?

মেহের আফরোজ শাওন: তিনি যখন কথা বলতে পারতেন, তখন আমার সঙ্গে তাঁর শেষ কথাটি ছিল পারিবারিক। তিনি আমাকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আমি আগামীতে তা আপনাদের বলব। এখনো সে সময়টা আসেনি।

একুশে টিভি অনলাইন: সমসাময়িক লেখক সাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ- এর জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। তাঁর মৃত্যুর পরও জনপ্রিয়তা কমেনি, বরং বাড়ছে। এরপরও আপনার কী মনে হয় তিনি তাঁর কোনো প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন?

মেহের আফরোজ শাওন: হুমায়ূন আহমেদকে পাঠক ও দর্শকরা ভালবাসেন। তাঁদের কাছে তিনি অমলিন। গণমাধ্যম হুমায়ুন আহমেদকে হৃদয়ের মণিকোঠায় রেখেছেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্রের কাছে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আজ রাষ্ট্রের উচিত ছিল তাঁর জন্মদিন পালন করা। রাষ্ট্র তাঁকে কোনো সম্মান দিতে পারেনি। তাঁর নামে কোনো সড়ক, ভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল- কিছুই করা হয়নি। এটা খুবই দু:খজনক।

একুশে টিভি অনলাইন: আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা মেয়েদের অনুকূলে নয়। সেই জায়গা থেকে আপনার লড়াইটা কেমন?

মেহের আফরোজ শাওন: লড়াই তো প্রতিটা মুহুর্তে করছি। তিনি মারা যাওয়ার পর অনেকে চেয়েছিল আমি সব ছেড়ে দিয়ে নিতান্ত গৃহবধূ হয়ে সাধারণ জীবনযাপন করব। কিন্তু জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আমি কাজ করতে চাই।

একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মেহের আফরোজ শাওন : আপনাকেও ধন্যবাদ। ইটিভি অনলাইনের প্রতি শুভকামনা রইল।

/ এআর / 

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি