ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

সংকটাপন্ন রাজিব:

ফিরে আসুক বুকের ধন, স্রষ্টার কাছে স্বজনদের প্রার্থনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:২২, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২০:১৫, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ৩০ নম্বর বেডে টানা ১৩ দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ডাক্তাররা কিছুক্ষণ পরপর জানাচ্ছেন রাজীবের অবস্থা অবনতির দিকে। স্বজনদের কেউ কেউ ধরেই নিয়েছে রাজীবের জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। টগবগে তরুণের স্বপ্ন এভাবে নি:শেষ হয়ে যাবে সেটি মেনে নিতে পারছেন না তারা।  

কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের চোখ এখন রাজীবের শয্যাপাশে মনিটরের সিগন্যাল বাতির দিকে। অন্যদিকে কিছুক্ষণ পরপর আইসিইউতে স্বজনদের আনাগোনা, হৃদয় নিংড়ানো আর্তনাদ আর সজল চোখের প্রার্থনায় ভিজে যাওয়া হাতের পরশে রাজীব ফিরে আসবে। কিন্তু রাজিব চোখ মেলে না বহুদিন,কথা বলে না। প্রাণ যায় যায়। এ যেন এক অন্তহীন অপেক্ষা!

এই নিদারুন কঠিন অপেক্ষার প্রহর কবে শেষ হবে তা জানেন না স্বজনেরা, তবে আশায় আশায় বুক বেঁধে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছেন তারা।  

অস্ত্রোপচারের পর ডান হাতের কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। দেখে মনে হবে সোজা হয়ে বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছেন। হাত,পা, চোখসহ শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া নেই। শুধু হৃদস্পন্দনটা ধীর লয়ে উঠানামা করছে।

আজ সোমবার দুপুরে চিকিৎসকরা জানান, রাজীবের এই মুহূর্তে ‘প্রেসার ১২০/৭০। হার্ট বিট ১৪০, জ্বর ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জিসিএস লেবেল ৩ রয়েছে।’

ভেন্টিলেটর মেশিনে রেখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রাজীবকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তার হার্ট নড়াচড়া করলেও ব্রেন একেবারেই কাজ করছে না। জিসিএস বা গ্লাসগো কমা স্কেল মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে রোগীর কনসাসনেস লেবেল নির্ধারণ করা হয়। জিসিএস লেবেল সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বনিম্ন ৩ থাকে। ৭-৮ পর্যন্ত থাকলেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। রাজীবের জিসিএস সর্বনিম্ন ৩।

বাসের চাপায় রাজীব ডান হাত হারালেও মস্তিষ্কের মাঝামাঝি ডানদিকে থেতলে যাওয়াই শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণ। চিকিৎসার ভাষায় একে ব্রেন কনটিউশন (মস্তিষ্ক থেতলে যাওয়া) বলে। এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীন, চিকিৎসা নেই বলে চিকিৎসকরা জানান।

আইসিইউ’র বাইরে অপেক্ষমাণ রাজীবের খালা জাহানারা বেগম বলেন, ‘টানা ১৩ দিন ছেলের মুখে কথা শুনি না। আর কত অপেক্ষা করবো! কবে সে ফিরে আসবে, কথা বলবে? খালা বলে বুকে জড়িয়ে নেবে সেদিকে চেয়ে আছি। এইভাবে তার চুপ থাকা আর সহ্য হচ্ছে না আমার। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন রাজীবের সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এই কথা মানতে বুকটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল থেকে রাজিব আইসিইউতে রয়েছে। অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামানের গঠিত মেডিকেল টিমের তত্ত্বাবধানে রাজীবের চিকিৎসা চলছে।

গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাতের অপারেশনের পর বুধবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

কেআই/ এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি