ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

বরফ ফুরোলে হারায় যে গ্রাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫৯, ৭ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৭:২৭, ১২ অক্টোবর ২০১৭

আন্দিজ পর্বতমালায় ইনকাদের গ্রাম জনশূন্য হয়ে পরে পানির অভাবে৷ হিমবাহের বরফ ফুরালে এমনটি হয়। পাহাড়ের উপরের মানুষজন উপত্যকায় নেমে আসেন৷ এই অবক্ষয় রোখার পন্থার খোঁজ চলছে পেরুতে ৷

পেরুর ইয়াউইয়স-কচাস ন্যাশনাল পার্কে আগে অনেক হিমবাহ ছিল, এখন সেগুলো উধাও হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও রবেহিলডো তাইপের কাছে এখানকার প্রকৃতি অপরূপ৷ হিমবাহের হ্রদের পানি যতদিন না উধাও হচ্ছে, ততদিন চার হাজার মিটার উচ্চতায় এই মনোরম উপত্যকাটি সেখানকার বাসিন্দা রবেহিলডোর খুবই প্রিয় ৷ তিনি বলেন, আমার জন্মানোর সময়েই এখানকার হিমবাহে কোনো বরফ ছিল না৷ শীতে আজও কখনো-সখনো বরফ পড়ে৷ ওপরে গিরিপথে বরফ পড়ে থাকে, কিন্তু শীত শেষ হলেই এখন যেরকম দেখাচ্ছে, সেরকম দেখায়৷

নীচের উপত্যকায় রবেহিলডোর নিজের গ্রাম মিরাফ্লোরেস৷ প্রবীণরা বলেন, এখানে শিগগিরই জলাভাব দেখা দিতে পারে ৷ কেননা তারা পিতৃপুরুষের কাহিনি জানেন৷ ইতিমধ্যেই উপত্যকায় জীবনধারণ কঠিন হয়ে উঠছে৷ টুরিস্টরা আসেন বটে, কিন্তু বস্তুত এখানকার মানুষদের পেশা কৃষিকাজ৷

ওদিকে চাষবাস ক্রমেই অনিশ্চিত হয়ে উঠছে৷ বহু লোকে গ্রাম ছেড়েছে৷ রবেহিলডো নিজেও একবার বছর চারেকের জন্য গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিলেন; রাজধানী লিমায় ওয়েল্ডিং-এর কাজ শিখেছিলেন৷ পরে তিনি গ্রামে ফিরে আসেন৷ তাঁর জীবনদর্শন হলো, মানুষ যখন যায়, তখন একটা কিছু শিখতে যায়৷ আমি দূরে গিয়ে যা শিখেছি, তা আমি এখানে যারা ছোট, তাদের শেখাতে পারি, যাতে তারা আরো উন্নতি করতে পারে৷

তা সত্ত্বেও রবেহিলডো একটি ব্যতিক্রম৷ একেবারে নীচে, আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে, সেটা স্বচক্ষে দেখা যায়৷ এ ধরনের নতুন নতুন গ্রামে যারা থাকেন, তারা পাহাড় এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন, কেননা সেখানে জলবায়ুর কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ কাজেই তারা এখন শহরেই ভাগ্যের সন্ধান করতে পছন্দ করেন৷ নতুন বাসিন্দা মার্লেনে লাসারো বলেন, অনেক কিছু বদলে গেছে৷ আগে যখন নিয়মিত বর্ষা হত, তখন যেরকম ফসল পাওয়া যেত, আজ তা পাওয়া যায় না৷ আজকাল হয়ত একবার বৃষ্টি হলো, তারপর মাসের পর মাস কোনো বৃষ্টি নেই৷ সব কিছু খুবই অনিশ্চিত৷

ওপরে, মিরাফ্লোরেস গ্রামের কাছেও দেখা যায় যে, বহু চাষি ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছেন৷ পেরু সরকার জার্মান সহযোগিতায় এই প্রবণতা রোখার চেষ্টা করছেন৷ মাছের চাষ, পশুপালন, আলপাকা পশম, এ সব এখনও চলে৷ ছোট ছোট খেতগুলোয় নতুন করে লাঙল দেওয়ার আগে বছর দুয়েক ফেলে রাখা যায়৷ তবে কিছু নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ মিরাফ্লোরেস গ্রামের বাসিন্দা ইল্ডা লারা কাস্তিয়া জানালেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখানে শুঁয়োপোকা বেড়েছে, অসময়ে ঠান্ডা পড়ছে, ভু্ট্টায় পোকা ধরছে৷ এর ফলে শুঁটি কিংবা আলুর গাছগুলো মরে যাচ্ছে৷

একেবারে ওপরে, চার হাজার মিটার উচ্চতায়, ইনকাদের গ্রাম উয়াকিস৷ পানি না থাকায় একশ’ বছর আগে গ্রামের বাসিন্দারা গ্রামটি ছেড়ে অন্যত্র যেতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ মিরাফ্লোরেস গ্রামটির পত্তন সেই বাস্তুহারাদের হাতে৷ সে যাবৎ মানুষজনের আশঙ্কা যে, মিরাফ্লোরেস গ্রামেরও সেই দশা হতে পারে৷

সূত্র:ডয়েচে ভেলে

/এম/এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি