ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

ফেসবুকে তোলপাড়

বিসিএস ফি কমানোর দাবিতে সোচ্চার চাকরিপ্রার্থীরা

প্রকাশিত : ১২:৩২, ১২ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ২০:০১, ১২ জুলাই ২০১৭

‘ভারতে লাগে ২৫ রুপি, বিসিএস আবেদনে ফি ৭০০ টাকা কেন’-এই শিরোনামে মঙ্গলবার একুশে টেলিভিশন অনলাইনে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পিএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে আবেদন ফি নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বিসিএস ফি যৌক্তিক স্তরে কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন। বেকার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা আবেদন ফি নেয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক উল্লেখ করে এটি কমিয়ে আনার বিষয়ে পিএসসিকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ করেছেন বহু চাকরিপ্রত্যাশী। কেউ কেউ আন্দোলনে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত  হয়। এতে বলা হয়েছে, চাকরি প্রার্থীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার ফি বাতিল করেছে। এখন রাষ্ট্রায়ত্ব কিংবা বেসরকারি কোনো ব্যাংকেই আবেদন করতে টাকা লাগে না। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানে (পিএসসি) আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭০০ করে  টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশের চাকরি প্রত্যাশী তরুণেরা। তাদের প্রশ্ন ব্যাংকে আবেদনে টাকা লাগে না, তবে বিসিএসে কেন? পিএসসির মাধ্যমে প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা নিয়ে কী করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়? এমনকি আমাদের পাশের দেশ ভারতের সিভিল সার্ভিসে আবেদন করতেও ফি নেয়া হচ্ছে নামেমাত্র, ২৫ রুপি।    

প্রতিবেদন তৈরিতে তিনজন বিশেষঞ্জের মত নেয়া হয়েছে। চাকরি প্রার্থিদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিসিএস আবেদনের ক্ষেত্রে ফি নমিনাল (নামেমাত্র) করার বিষয়ে মত দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। অন্যদিকে চাকরি প্রার্থীদের বেকার জীবনের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিসিএসে আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিবেন বলে জানিয়েছিলেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক।

প্রতিবেদনটি এদিন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের কাছে সর্বাধিক পঠিত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। সংবাদটি পড়ে অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। কেউ কেউ চাকরিপ্রার্থী বন্ধুদের ট্যাগ করেছেন। ফেসবুকে উঠে ঝড়।

সুব্রত মিয়া নামের একজন তরুণ এই প্রতিবেদনের মন্তব্য (কমেন্ট) বক্সে লিখেছেন যে, ‘যেখানে সংবিধানে বেকারদের বেকার ভাতা দেওয়ার কথা আছে। সেখানে আমাদেরকে উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে সরকারকে। কেন এই পরিহাস?’

আল আমিন বিশ্বাসের মন্তব্য ছিল, ‘আমাদের টাকা নিয়ে ঘাটতি বাজেটটা পূরণ করবে নাকি?.....আল্লাহ-ই জানেন এরপর আবার ফির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট না দিতে হয়!!’

 দেব দুলাল গুহ নামে অপর একজন মন্তব্য করেন, ‘পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বেকার ছাত্রদের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে বিসিএসের আবেদন ফি কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে ‘

 কাবিল উদ্দিন সালেহীর মন্তব্যটা ছিলো একটু ঝাঝালো। তিনি লিখেন, ‘বিসিএস পরীক্ষার ফিস অবশ্যই কমাতে হবে । টাকা কি গাছে ধরে । চাইলেই ৭০০।’

‘৩৮ তম বিসিএস: আওয়ার গোল ( লারজেস্ট জব গ্রুপ অব বাংলাদেশ)’ নামক ফেইসবুক গ্রুপে এ তামজিদ আহমেদের মন্তব্য হলো, ‘আবেদনই করব না,গত বছর ধার করে আবেদন করেছিলাম। এবার সেটাও সম্ভব না।’

মুহাম্মদ নাজমুল হাসান নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে অনেকেই টাকার পাহাড় জমাইছেন। আর এ দেশের দুই কোটি বেকারের জন্য কারো মায়াকান্না ছাড়া কিছু আছে বলে মনে হয় না। আসলে কি বলবেন? আপনার, আমার বুকফাটা আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছুবে বলেও আমার মনে হয়না...’

 মোহাম্মদ  ইলিয়াসের মন্তব্যে ছিল আক্ষেপের সুর। তিনি লিখেন, PSC, NTRCA ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাগুলো চাকরি প্রার্থী অসহায়, নির্যাতিত ও শোষিত বেকারদের কাছ থেকে যে পরিমাণ টাকা নিচ্ছে তা চিন্তার বাইরে। কারণ বড়লোক বাবার সন্তানদের সরকারি বা বেসরকারি চাকরির কোন প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানদের।’

বিসিএস: আওয়ার গোল ( লারজেস্ট জব গ্রুপ অব বাংলাদেশ) নোমে অন্য একটি ফেসবুক গ্রুপেও খবরটি বেশ সারা ফেলেছে।  সজীব ওয়াহিদ এই গ্রুপে মন্তব্য করেন, ‘প্রজাতন্ত্রের যেহেতু কর্মী প্রয়োজন সেহেতু নিয়োগ পরীক্ষার খরচাটাও প্রজাতন্ত্রের বহন করা উচিত। বেকারদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নেওয়াটা এক রকম অত্যাচার বৈ কিছু নয়।’

চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের কথা উল্লেখ করে রায়হান ফয়সাল মন্তব্য করেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংকের মত বিসিএস পরীক্ষায়ও আবেদনের ক্ষেত্রে  টাকা না নেওয়া উচিত। কারণ অনেকে টাকা এত হওয়ায় অ্যাপ্লাই করে না।’

প্রিয়ঙ্কা দাশ নামের অন্য একজন আবেদেনের ক্ষেত্রে ফি কমানোর কথা বলেছেন। তিনি লিখেন, ‘দুইশ টাকা করলে নিলেও উপকার হয়, বাকি ৫০০ টাকায় পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বই কিনা যায়।’

তবে ফয়সাল আহমেদ তার মন্তব্যে বলেন,  ‘কেন টাকা দিতে হবে। আমরা বেকার টাকা পাই কোথায়। সরকার টাকা না নিলে কি হয়। এখন দেখি বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগেও টাকা লাগে। আমরা টাকার জন্য আবেদন করতে পারিনা। আর তারা টাকার পাহাড় গড়ে।’

ভিন্ন রকম প্রস্তাব রেখেছেন মীর আন-নাজমুস-সাকিব। তিনি তার মন্তব্যে লিখেন, ‘আবেদন ফি পার্ট পার্ট করে নিলে ভালো হতো... প্রিলিতে ২০০, প্রিলিতে টিকে রিটেন দিলে আরও ৩০০ আর রিটেন পাস করে ভাইভা দিলে আরও ২০০।’

চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান বেকারদের কাছ থেকে ফি বাবদ ৭০০ টাকা নিলেও সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি অংশে বেকারদের সরকারি সাহায্য পাওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে। মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ১৫ নং অনুচ্ছেদের (ঘ) ধারায় সামাজিক নিরাপত্তার অধিকারে এই অঙ্গীকার করা হয়। অথচ বাস্তবতা এর উল্টো। তাই বিসিএসে আবেদন ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে বহু চাকরি প্রার্থী জানিয়েছেন।

//এআর

‘ভারতে লাগে ২৫ রুপি, বিসিএস আবেদনে ফি ৭০০ টাকা কেন’ খবরটি পড়তে ক্লিক করুন।

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি