ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

ব্যস্ততাও হতে পারে সুস্বাস্থ্যের নিয়ামক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৩, ২৩ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২১:১৪, ২৬ আগস্ট ২০১৭

একুশ শতকের জীবন অনেক গতিশীল। দম ফেলার ফুরসত নেই কারোরই। অফিস - বাসা-রাস্তাঘাট সর্বত্রই দেখা যায় ব্যস্ততার প্রতিচ্ছবি। আগে যেটুকু ফুরসত মিলত, সেটুকুও এখন গিলে খাচ্ছে স্মার্টফোন আর সোস্যাল মিডিয়া। এ কারণেই সবার ভেতরে চাপা এক দীর্ঘশ্বাস, ‘আহ! জীবনটা যদি শুয়ে বসে আরামে কাটিয়ে দেয়া যেত!’ কিন্তু বাস্তবতা এসে দুয়ারে কড়া নাড়লেই বোঝা যায়, এ চাওয়া কখনই পূরণ হওয়ার নয়।

তাই বলে এ নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ব্যস্ততার উপর আমরা এতটাই বিরক্ত হয়ে উঠেছি যে, এর ভালো দিক নিয়ে ভাবা হয়নি কখনই। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে, যাতে আমাদের ভাবনার জায়গাগুলো ধাক্কা খেতে বাধ্য। কারণ, এসব গবেষণার ফল একটা দিকেই ইঙ্গিত করছে, ব্যস্ততাই আমাদের সুস্বাস্থ্যের প্রধান নিয়ামকগুলোর অন্যতম। এসব গবেষণার তথ্যানুযায়ী, আমাদের আয়ু বৃদ্ধি, দেহের শক্তি ধরে রাখা, মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার করে তোলা ও স্মৃতিভ্রংশকে দূরে রাখা— সবকিছুতেই ভূমিকা রাখে ব্যস্ততা।

সম্প্রতি মার্কিন বিশেষজ্ঞদের এক গবেষণায় উঠে আসে, সকালে দ্রুত ঘুম ভাঙার মতো কারণ যত বেশি থাকে, রাতের ঘুমও তত গাঢ় হয়। শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্টদের ওই গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাকে হাতে নিয়ে যারা উদ্দেশ্যপূর্ণ ও ব্যস্ত জীবন যাপন করেন, তাদের মধ্যে নিদ্রাহীনতা দেখা যায় কম। গবেষণায় উঠে আসা বিষয়গুলো নিবন্ধ আকারে প্রকাশিত হয়েছে স্লিপ সায়েন্স অ্যান্ড প্র্যাকটিস শীর্ষক জার্নালে।

গত বছর, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানীদের আরেক গবেষণায় উঠে আসে, মস্তিষ্কের ওপর ব্যস্ততার ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে অনেক। ৩০০ প্রাপ্তবয়স্কের উপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে অনেকখানিই বাড়িয়ে তোলে ব্যস্ততা। গবেষণার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো, ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যকরী ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। বিশদ বিবরণসহ গবেষণা নিবন্ধটি ছাপা হয়েছে ফ্রন্টিয়ার্স ইন এজিং নিউরোসায়েন্সে।

ব্যস্ততার সপক্ষে এ রকম আরো বিস্তর গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে। তবে ব্যস্ততার এসব সুফল পেতে হলে একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, এ ব্যস্ততা আমাদের মানসিক চাপের কারণ হয়ে উঠছে কিনা বা ব্যস্ততার মধ্যে আমরা যা করছি, তাতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ কতটুকু। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট লিন্ডা ব্লেয়ারের মতে, ‘আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া কাজের চাপ রূপ নিতে পারে মানসিক চাপে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে অতিমাত্রায় স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ আমাদের উদ্বেগ, বিষন্নতা, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ হ্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর কারণে একই সঙ্গে সারাদেহে প্রদাহ, হৃদরোগের মতো ভয়াবহ সমস্যাগুলোও দেখা দিতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যস্ততার মধ্যে আমরা যা যা করছি তার উপর যতক্ষণ আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকছে, শুধু ততক্ষণই ব্যস্ত থাকা ভালো।’

মোদ্দাকথা হলো, নিয়ন্ত্রিত ব্যস্ততাই হয়ে উঠতে পারে সুস্বাস্থ্যের অন্যতম প্রধান নিয়ামক।

কেআই/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি