ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

ব্লু হোয়েল, আতঙ্ক না সাবধানতার বিষয়?

প্রকাশিত : ১৯:১৫, ৯ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৯:৪৮, ৯ অক্টোবর ২০১৭

ব্লু হোয়েল গেম খেলে হলিক্রসের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে—এমন একটি গুঞ্জনের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদপত্র বেশ সরগরম।  

স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবকদের মনে কিছুটা হলেও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ পরামর্শ চেয়ে বসেছেন এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি। বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে পরামর্শমূলক অনেক কিছু লিখেছেন, ইউটিউবে ব্লু হোয়েল নিয়ে অনেক ভিডিও প্রকাশিত রয়েছে যাতে এ গেমস থেকে রক্ষা পাওয়ার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করা হয়েছে।

হলিক্রস কলেজের একটি কিশোরী ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যা করেছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে সে বিষয়টিও এখনও প্রমাণিত হয়নি। কারণ, মেয়েটার শরীরে ব্লু হোয়েলের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার আত্মহত্যার ধরনটিও আরও আট-দশটা আত্মহত্যার ঘটনার মতোই বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের গোডাউন গুগল প্লে-স্টোরেও ব্লু হোয়েল নামক যে ৭টি গেমস পাওয়া যায় সেগুলোও অতি সাধারণ। আর ইউটিউবে অভিজ্ঞতা শেয়ারের ভিডিওগুলো বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বানানো বলে যাচাই করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।  

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মেট্রো গত ২২ এপ্রিল এক সংবাদে জানিয়েছে, রাশিয়ায় ১৩০ জনের মৃত্যুর পর ব্লু হোয়েল গেমসটি যুক্তরাজ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

ব্লু হোয়েল নামক গেমটি ২০১৩ সালে রাশিয়ায় তৈরি হয়। ফিলিপ বুদেকিন নামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত এক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র দাবি করে যে, সেই এই গেমের আবিষ্কারক। এ ধরণের ভয়ংকর গেমের মাধ্যমে অন্যকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার দায়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রাশিয়ায় অন্তত ১৬ জন কিশোর-কিশোরী এই গেমে অংশ নিয়ে আত্মহত্যা করার পর বুদেকিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে দোষ স্বীকার করে তিনি বলেন, যারা গেমস খেলেন তারা সমাজের উচ্ছিস্ট। তাদেরকেই আত্মহত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া তার উদ্দেশ্য।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এমন একটি আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ভারতীয় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে গড়া বেঞ্চ সেই মামলা পরিচালনা করছেন।

ইন্টারনেটে কোথাও খুঁজে না পাওয়া গেলেও গেমটি পাওয়া যায় কীভাবে? এ নিয়ে অসংখ্যবার গুগলে সার্চ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি এটি। সুতরাং এটি সহজলভ্য কোনো গেম নয়। তাই আতঙ্কের পরিবর্তে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ডা. সৈকত তার ফেসবুকে লিখেছেন, একটি নাম্বার ( +917574999093) থেকে কল বা মেসেজ আসে। কলটি রিসিভ করলে কিংবা মেসেজ ওপেন করলে গেমটি ডাউনলোড হয়ে যায়। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন ওই নাম্বারে কল না করতে। কিন্তু এই নাম্বারে কল করলে ওপাশ থেকে বলা হয় ‘আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন তা সঠিক নয়।’ ডা. সৈকত আরো পরামর্শ দিয়েছেন ‘popcorn carnival’ শিরোনামের কোনো লিংকে ক্লিক থেকে বিরত থাকতে। ইউটিউবে এমন শিরোনামে খোঁজ করে একটি ভিডিও লিংক পাওয়া যায় যেখানে ভারতীয় একটি মেয়ের কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। তবে সেটি কোনো স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যম নয়।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, `ব্লু হোয়েল` বা Blue whale এর অর্থ নীল তিমি। নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে আসে- তারা আত্মহত্যা করে বলে অনেকের ধারণা! একারণেই গেমের নাম রাখা হয়েছে ` Blue whale ` বা নীল তিমি।

গেমটির লিংক মেসেজ বা ফোন নাম্বারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ইনস্টলকারীকে সবগুলো স্তর খেলার জন্য বাধ্য করা হয়। ব্লু হোয়েল গেমটি ৫০টি লেভেলে বিভক্ত। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্লু হোয়েল সম্পর্কিত খবর থেকে জানা যায়, গেমটি ডাউনলোড করলে আর আনইনস্টল করা যায় না। গেমের নিয়ন্ত্রণকর্তা (অ্যাডমিন) আপনার আইপি এড্রেস, মেইলের পাসওয়ার্ড, ফেসবুক পাসওয়ার্ড, কনট্যাক্ট লিস্ট, গ্যালারী ফটো এমনকি আপনার ব্যাংক ইনফরমেশন, লোকেশান জেনে নেয়।

গেমের শুরুতে আপনার কাছে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হবে যে, আপনি এর থেকে আর বেরুতে পারবে না, আপনি সর্বশেষে মৃত্যুবরণও করতে পারেন, আপনি কি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আগ্রহী? আপনি ‘ইয়েস’ অপশন ক্লিক করা মাত্রই পা দিয়ে দেবেন মৃত্যু ফাঁদে।

গেমটির প্রথম ১০টা লেভেলে নিয়ন্ত্রণকারী কিছু মজার মজার নির্দেশনা দেন- যেমন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা, চিল্লাচিল্লি করা, উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা, পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে অ্যাডমিন হাতিয়ে নেবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন।

প্রথম ১০টা লেভেল পার করার পর আপনাকে তৈরি করা হবে পরের ১০টি লেভেলের জন্য। ১৫ লেভেল পর্যন্ত চলবে আপনার তথ্য হাতানোর কাজ। ১৫ লেভেলের পর আপনাকে কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে। যেমন নিয়ন্ত্রণকারী আপনাকে বলতে পারে আপনার হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকুন।

প্রথম ২০টা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার পর অ্যাডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করে। আপনি টেরই পাবেন না প্রথম ২০ ধাপে সংগ্রহ করে ফেলা আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে মোহাক্রান্ত বা হিপনোসিস পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করা হবে।

আপনি তখন ভাববেন এই গেম ছাড়া আপনার বেঁচে থাকা অসম্ভব। আপনাকে শীতের দিনে খালি গায়ে ঘুরতে বলা হবে, বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা, বন্ধুর মোবাইল চুরি করা, আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার সাথে দুর্ব্যবহারের মিশন দেয়া হবে আপনাকে।

আবার এসবের প্রমাণের ছবি বা ফটো এডমিনকে পাঠাতে হবে আপনার! এভাবেই বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে কৌশলে আলাদা করে ফেলা হবে আপনাকে এবং আপনি পৌঁছে যাবেন ২৫তম লেভেলে! তখন আপনাকে মাদক বা ড্রাগ নেবার আমন্ত্র জানানো হবে। এভাবেই সম্মোহিত করে করে আপনাকে ৩০তম লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। ৩০তম লেভেল আপনি অতিক্রম করার পর গেম নিয়ন্ত্রণকারী হঠাৎ আপনার সাথে একটু চিট শুরু করবে! ৩১তম লেভেল আনলক করবে না। এতোদিনে আপনি গেমটিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।

তারপর কিছুদিন আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন- বলবে ৩১তম লেভেল আনলকড ! আপনার নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে! আপনি হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবেন না, ড্রাগ নেবার মাত্রা বাড়াতে থাকবেন আপনি!

এরপর নির্দেশনা আসবে আপনার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে শারীরিকভাবে মেলামেশা করে গোপনে ছবি তুলে আপলোড করতে বা নিজের শরীরে একাধারে শ খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে। এভাবেই চলে যাবেন আপনি ৪০তম লেভেলে !

এবার আপনি ভীত হয়ে গেমার টিমকে অনুরোধ করবেন আপনাকে মুক্তি দেবার জন্য! আপনি কাঁদবেন, হাতজোড় করবেন, চাইবেন গেমটি আনইনস্টল করার জন্য! তখন শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং! গেমার টিম বা এডমিন তখন আপনারই পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেবার হুমকি দেবে, আপনি বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবেন ৪১তম স্তরে !

৪১ থেকে ৪৯তম লেভেলে আপনি প্রচন্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হবেন। পঞ্চাশতম স্তরে আপনাকে মুক্তির শর্ত দেয়া হবে! বলা হবে আপনাকে নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে তাদের কে ছবি পাঠাতে এবং নিশ্চিত দশ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারেন তবে আপনি মুক্ত!

আপনি সেটা পারবেন না আর, কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন আপনার মস্তিষ্কে চলে যাবে ততোক্ষণে! আপনি মোবাইলের স্ক্রীণে, তখন নির্দেশ আসবে- `নিচের দিকে তাকাও- লাফ দাও- মুক্তি পাও! আপনি মুক্তি পেতে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন।

এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স, ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ভীষণ করুন ! All i want ও Ranway গানের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে। দুটো মিউজিকই বেশ আগ্রহ সৃষ্টিকারী।

রাশিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগালে ব্লু হোয়েলের ভিকটিম পাওয়ার দাবি করেছে সংবাদমাধ্যম মেট্রো এছাড়া আরো কয়েকটি ভয়ংকর গেম সম্পর্কে সাবধান হওয়ার পরামর্শে দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- দ্য ঘোষ্ট পিপার চ্যালেঞ্জ, দ্য কুকিং চ্যালেঞ্জ, আইস অ্যান্ড সল্ট চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি