ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বিলুপ্তির পথে চাঁপাইয়ের মৃৎশিল্প

প্রকাশিত : ০৪:৪১ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৪:৫৩ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মৃৎশিল্প নানামুখী সংকটে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। ফলে এর উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অনেকে এই পেশায় থাকলেও সংসার চালাতে পারছেন না। অভাবের তাড়নায় নিত্য সময় কাটাচ্ছেন। কুমার সম্প্রদায়ের কোনো কোনো ঘরে চুলো জ্বলে না। একবেলা আধবেলা খেয়ে দিনানিপাত করছেন মৃৎশিল্পীরা। এক সময়ের কর্মব্যস্ত কুমারপাড়ায়  এখন শুনসান নিরবতা।

মাটির তৈরি সামগ্রীর চাহিদা কমতে থাকায় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিল্পটি এখন বিলুপ্তির পথে। এমনকি নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে পুরো পাল সম্প্রদায়। দিন দিন আধুনিক জিনিসপত্রের ভীড়ে বিলিন হতে বসেছে বাঙালি জীবনের হাজার বছরের ঐতিহ্য বহনকারী মাটির তৈরী তৈজস সামগ্রী।  

স্টিল, চিনামাটি, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র বাজারে আসার পর মানুষ আর মাটির তৈরি হাঁড়ি, থালা, গ্লাস, মসলাবাটার পাত্র, মাটির ব্যাংক ও খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি ব্যবহার করছেন না। এখন শুধু গবাদিপশুর খাবারের জন্য গামলা, কলস ও হিন্দুদের পূজা-পার্বণের জন্য নির্মিত কিছু সামগ্রীর চাহিদা রয়েছে।

গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অবশ্য এখনও দৈনন্দিন প্রয়োজনে কিছু মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করেন। কিন্তু মাটির তৈরি সৌখিন জিনিসপত্রের বাজার চাহিদা তেমন একটা নেই বললেই চলে। ফলে কুমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া কুমার পাড়া,নতুন বাজার, চুনারিপাড়া ও রাজারামপুর কুমার পাড়ার প্রায় ৩ শ’ পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত। মহানন্দা নদী থেকে মাটি সংগ্রহ করে ছোট বড় সবাই নাওয়া-খাওয়া ভুলে রকমারি সামগ্রী তৈরির কাজে সারাদিনই ব্যস্ত থাকতেন মৃৎ শিল্পিরা। তবে কিছু দিনের ব্যাবধানে প্রায় ৫০ টি পরিবার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

বারোঘরিয়া নতুন বাজারের কুমার ভিকু পাল বলেন, যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় আমরা মাটির জিনিস তৈরি করে আসছি। এ পেশার সঙ্গে আমরা জড়িত থাকলেও আমাদের উন্নয়নে বা আর্থিক সহায়তায় সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বিভিন্ন এনজিও বা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বাপ-দাদার আমলের স্মৃতিকে কোনোরকম ধরে আছি। তিনি বলেন, সরকার যদি সহজ শর্তে ঋণ দিত, তাহলে এই শিল্পকে উন্নয়নের পাশাপাশি আরও সমৃদ্ধ করা যেত।

বারোঘরিয়া কুমার পাড়ার কুমার শিল্পি নিলু রানী পাল ও একই এলাকার সোনা পাল জনান, মহানন্দা নদী থেকে এক সময় মাটি সংগ্রহ করা গেলেও এখন মাটি ক্রয় করতে হয়। এছাড়া জালানির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। অন্যদিকে দিন দিন মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় এখন আমাদের এ পেশায় থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। বংশীয় রীতি মতে এ পেশায় থাকলেও নতুন প্রজন্মের ছেলে- মেয়েরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। যুক্ত হচ্ছে ভিন্ন পেশায়।

আরকে/এআর