ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ভাসমান বীজতলায় ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বানভাসীদের

প্রকাশিত : ১১:৪৭ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৬:৫৯ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৭ রবিবার

বন্যাকবলিত এলাকায় কলা গাছের ভেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় বীজতলা ডুবে যাওয়ার কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে দেশের ১৪ জেলার ৫৬টি উপজেলায় ৭২০টি ভাসমান আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এসব বীজতলায় উৎপাদিত আমন চারা কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও কলার ভেলা বা পচা কচুরিপানার ওপর ভাসমান বীজ তলা তৈরিতেও কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা এখন ভাসমান বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভাসমান বীজতলায় নতুন আশা দেখছেন হাওর ও বন্যা দুর্গত এলাকার কৃষকরা। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

মৌলভীবাজার
বন্যার পানি এখনো নামেনি। এদিকে রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরির সময়ও শুরু হয়ে গেছে। এই অবস্থায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় মৌলভীবাজারের বন্যাপ্লাবিত উপজেলায় কৃষকেরা কলাগাছের ভেলায় রোপা আমনের ‘ভাসমান’ বীজতলা করেছেন।

কলগাছের ওপর কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরি করছেন কৃষক। ছবি সংগৃহিত

কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় এই ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। তিন উপজেলার কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিচু এলাকা থেকে বন্যার পানি না নামায় বীজতলার জন্য কলাগাছ দিয়ে ১০ মিটারের ভেলা বানানো হয়েছে। এর প্রস্থ দেড় মিটার। কচুরিপানা বিছিয়ে ভেলার ওপর কাদামাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর বীজ ফেলা হবে।


জুড়ীর কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বলেন, একেকটি ভাসমান বীজতলায় এক কেজি অঙ্কুরিত বীজ ছিটানো যায়। তাতে যে চারা জন্মাবে, তা এক বিঘা জমিতে রোপণ করা সম্ভব। জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে বীজতলা তৈরির মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। আর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে রোপা আমনের চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু নিচু এলাকার জন্য এবার বিআর-২২ জাতের রোপা আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এটি বিলম্ব জাতের। আগস্ট মাসের শেষ দিকে এই জাতের ধানের চারা রোপণ করা যাবে।


সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার কুলাউড়ায় ১৯ হাজার হেক্টর, জুড়ীতে ৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর এবং বড়লেখায় ৮ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ দিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তিন উপজেলায় হাকালুকি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। পরে আরও দুই দফা টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এসব এলাকায় বন্যা হয়। এতে কিছু আউশ ধানও নষ্ট হয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ
প্রতিবছরই কিশোরগঞ্জে আমনের বীজতলা তৈরি নিয়ে দেখা দেয় নানা বিড়ম্বনা। সাধারণত অপেক্ষাকৃত উচু জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়। কিন্তু অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যায় জমির পানি না সরলে কিংবা বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় কৃষকদের। দেখা দেয় আমন চারার সংকট। তবে কৃষকদের এ বিড়ম্বনা যেনো শেষ হতে চলেছে।


কিশোরগঞ্জে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে আমন ধানের ভাসমান বীজতলা তৈরি। এতে করে আশার আলো দেখছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে জেলার ১০টি উপজেলায় ১৪৬টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।

ভাসমান বীজতলায় মৌসুমী শাক-সবজিও চাষ করা যায়। ছবি সংগৃহিত

জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে অর্ধেকের বেশি হাওর অধ্যুষিত। কৃষি বিভাগ জানায়, বাড়ির পাশের বদ্ধ ডোবা কিংবা হাওরের পানিতে কচুরিপানা দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। এসব মাচায় তৈরি করা হয় বীজতলা। এতে বাড়তি কোনো খরচ নেই। বীজতলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ওই মাচায় সবজি চাষ করা যায়। কয়েকবার সবজি চাষ করার পর মাচার পঁচা কচুরিপানা দিয়ে জমিতে জৈব সার তৈরি করা যায়। ফলে ভাসমান বীজতলা তৈরি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।


১৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও সোয়া এক মিটার প্রস্তের একেকটি ভাসমান মাচায় ধানের চারা দিয়ে এক বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করা যাবে। বিনা-৭ ও বিআর-২২ জাতের এসব চারা রোপন করা যাবে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটিয়াদী, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর ও কিশোরগঞ্জ সদরের কয়েকটি এলাকায় এ বীজতলা তৈরি করা হয়েছে।
//এআর