ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গহনা-সাঁজগোছ ছাড়া বিয়ে, ফেসবুকে তোলপাড়

প্রকাশিত : ১২:২৭ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৮:১৫ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭ সোমবার

নববধূ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভারী মেকআপ, মাথা থেকে পাতা পর্যছন্ত সোনা-গহনা ও দামী শাড়িতে মোড়ানো একটি মুখ। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে হেঁটে সেই ধারণার পরিবর্তন করেছেন পেশায় ডাক্তার ও ‘আরোগ্য’ নামক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তাসনিম জারা। দাদীর সাদা শাড়ী পরে কোন রকম সাজুগুজু-গহনা ছাড়াই সম্প্রতি বিয়ে করেন তিনি।


বিয়ের দিনের সেই ছবি ৯ আগস্ট নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জারা। আর কেন এমনটা করছেন তাও লিখেছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। সেই স্ট্যাটাস ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে। ফেসবুকে তাসনিমের পোস্টটি ২৮ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এক লাখ সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। পোস্টটিতে দেড়হাজারের বেশি মন্তব্য পড়েছে।


তাসনিম ও তার বরের ছবি দিয়ে এএফপি একটি নিউজও করেছে। নিউজের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ ব্রাইড্‌স স্টিরস সোস্যাল মিডিয়া স্টোর্ম’।

তিনি লিখেন, `আমাদের সমাজে নববধূ মানেই অনেক টন মেকআপ,ভারি পোশাক ও গহনা। যা অনেকের বা তার পরিবারের সামর্থ্যে থাকে না। অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও বিয়ের কনের এটি করতে হয়। এমনকি আমি এই পর্যন্ত যতগুলো বিয়েতে অংশ নিয়েছি বেশিরভাগ সময় মানুষের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল, বউকে সুন্দর লাগছে কি না, সে কি পরিমাণ সোনা পরেছে, তার পোশাকের দাম কত। এই সব প্রশ্ন শুনতে শুনতে নববধূ অনেক চাপ অনুভব করে। সে অনেক টাকা, সময় ও শক্তি খরচ করে সেরা মেকআপ নিয়ে নিজেকে সুন্দর দেখাতে চায়। সবশেষে তাকে আর তার মত দেখা যায় না। কারণ আমাদের সমাজ মনে করে নববধূর গায়ের রং তাদের নিজের বিয়ের জন্য যথেষ্ঠ নয়।`


ডা. তাসনিম আরও লেখেন, অনেকে মনে করে গহনা ছাড়া বউয়ের সাজ অসম্পূর্ণ। তার ওপর তার নিজের পরিবারের সক্ষমতার ওপর সে কি পরিমাণ সোনা পড়বে তা নির্ভর করে। সে বাধ্য। কারণ সমাজ তাকে বলবে, তুমি একটি মেয়ে, কেন তোমার বিয়েতে তুমি সোনা পড়নি?

নববধূর দিকে ভাল করে তাকালে দেখা যায়, সে অনেক দামি শাড়ি পরে আছে , যা পরে সে ঠিকমত হাঁটতে পারছে না এবং সে এই পোশাক আর কোন বিয়েতেও পরতে পারবে না। কিন্তু এই সমাজ তাকে এই পোশাক ছাড়া অন্য কোন উপায়ে গ্রহণ করবে না।

তার মানে এই নয় যে, আমি বিয়েতে সাজসজ্জার বিরোধী। কোন মেয়ে যদি মেকআপ,গহনা ও দামি পোশাকে সজ্জিত হতে চায় তাহলে সেটি অবশ্যই করবে। কিন্তু সমস্যাটা হল তার বিয়ের দিনের সাজসজ্জাকে কেন্দ্র করে সে তার অনেক সময় নষ্ট করে। সমাজ যখন তাকে বিয়ের দিন পুতুলের মত দেখতে চায় তার মানে হলে সে নিজে দেখতে যা,তা তার বিয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

তাসনিম বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। বিয়ের দিন আত্মবিশ্বাসী থাকার জন্য একটি মেয়ের রং ফর্সাকারী ক্রিম,সোনার গহনা কিংবা দামি শাড়ীর কোন প্রয়োজন থাকা উচিত নয়। তাই আমি আমার বিয়েতে আমার দাদীর শাড়ি বেছে নিয়েছি,কোন মেকআপ নেইনি কিংবা কোন গহনাও পরিনি। মানুষ এটিকে সাধারণ বলেছে,কিন্তু আমার কাছে এটিই অনেক বিশেষ কিছু,কারণ আমি জানি এটি আমার কাছে কি।`

যদিও এই সিদ্ধান্ত নিতে তাকে অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানান তাসনিম।

তাসনিমের ভাষায়, আমি মেকআপ না করায়, গহনা না পড়ায় অনেকে আমার সঙ্গে কোন ছবি তুলেনি। কারণ আমাকে দেখতে নাকি নববধূর মত লাগছে না। যদিও আমার পরিবারের কিছু সদস্য আমাকে সমর্থন করেছে। বিশেষ করে আমার বর খালিদ। সে শুধু আমাকে সমর্থনই করে নি বরং গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে বের হওয়ায় ও আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করে।


ফেসবুকে তাসনিমের পোস্টটি ২৮ হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এক লাখ সাত হাজারেরও বেশি মানুষ। পোস্টটিতে দেড়হাজারের বেশি মন্তব্য পড়েছে।