ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঘুরে আসুন স্বর্গশহর পুনাখায়

প্রকাশিত : ০৩:০১ পিএম, ২২ আগস্ট ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১২ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

পুনাখা ভুটানের অনন্য একটি শহরের। এটিকে শুধু শহর বলছে ভুল হবে। যেন স্বর্গ। দেখে মনে হবে বিধাতা যেন নিজ হাতে এটি গড়েছেন! শহরটি স্তরে স্তরে সাজানো। স্বচ্ছ পানির অকৃত্রিম লেক, ঐতিহাসিক স্থান, সৃদৃশ্য স্থাপনা, আকাশচুম্বী পাহাড়, সবুজ বৃ্ক্ষপল্লব কী নেই এখানে। সবই তো আছে। একটি শহরে এত বৈচিত্র পৃথিবীর অন্যত্র পাওয়া দুস্কর।



তথ্যমতে, ভুটানের রাজধানী থিম্পু থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার। এটি সত্যিই হৃদয় জুড়ানো এক শহর। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য চমৎকার স্থাপনা রয়েছে এখানে। সময়-সুযোগ নিয়ে অবশ্যই ঘুরে আসবেন পুনাখা থেকে।

পুনাখা যাওয়ার পথে যাত্রাবিরতি হয় দোচুলায়। দোচুলা ভুটানিদের পূণ্যভূমি। অসংখ্য ধর্মীয় নকশাখচিত ছোট ছোট ধর্মীয় পতাকায় ছেয়ে আছে। মূল আকর্ষণ এখানকার বৌদ্ধমঠ। খাড়া পাহাড়ের উপর বিশাল বৌদ্ধমঠ; স্থাপত্যশৈলী আর শিল্পশৈলীর নজরকাড়া স্থাপনা। দর্শণার্থী আর পূণ্যার্থীদের ভিড়ে বৌদ্ধমঠটি বেশ জনসমাগম। ভূপৃষ্ট থেকে ১০০৩১ ফুট উচ্চতায় এই দোচুলায় দেখা মিলবে ওই দূরে হিমালয় পবর্তশৃঙ্গের রেখা। দোচুলায় সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয় ১০৮টি চরটেন। দোচুলা থেকে পুনাখার দূরত্ব মাত্র ৪১ কিলোমিটার।


পাহাড়ের পর পাহাড় অতিক্রম করতে করতে ক্লান্ত মন পুনাখায় এসে চঞ্চল হবে। সহোদর নদী ‘মো চু’ আর ‘ফো চু’। নদী দুটি যেখানে এসে মিশেছে ঠিক সেখানে দুই নদীকে ঘিরে পুনাখা জং। দূর থেকে নদীর সঙ্গমস্থল আর পুনাখা জংয়ের প্যানারোমা দৃশ্য অসাধারণ।


পুনাখা জংকে বলা হয় আনন্দপ্রম প্রাসাদ। এটি আসলে পুনাখার প্রশাসনিক ভবন। ৬০০ ফুট সুদীর্ঘ এই জংটি তৈরি হয় ১৬৩৭-৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভুটানের প্রথম রাজা উজেন ওয়াংচুক এই পুনাখা জং থেকেই তার রাজত্ব পরিচালনা শুরু করেন। বর্তমানে ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ এই পুনাখা জংটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শীতকালীন বাসস্থান। ভুটানে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা দানের সবচেয়ে বড় আশ্রম। মূল ভবনটিও কাঠের। ভবনের দেয়ালজুড়েই বিশ্বাস আর ধর্মীয় অনুভূতির চিত্রকর্ম। পুনাখা জংয়ে প্রবেশমাত্র দেয়ালের ডান দিকে চোখে পড়বে বিখ্যাত বৌদ্ধজ্যোতিষ চিত্র।


ভারত আর চীনা শিল্পের সংমিশ্রণে জ্যোতিষচিত্রটি মানুষের জীবনছবি। মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বেঁচে থাকার গূঢ় রহস্যই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই চিত্রটিতে। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই একটি খোলা করিডোর। করিডোরকে ঘিরে চারিদিকে দুইতলা সমান স্থাপনা, ছোট ছোট অসংখ্য ঘর আর ঘরের প্রতিটি স্থানজুড়েই শিল্পের পরম ছোঁয়া।


জংয়ের শেষপ্রান্তে রয়েছে একটি মন্দিরে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধর সুবিশাল মূর্তি। বুদ্ধর একপাশে দ্বিতীয় বৌদ্ধ শিষ্য গুরু আর অন্যপাশে ভুটানের প্রতিষ্ঠাতা ঝাবদরাংয়ের মূর্তি।


মন্দিরের মূল আকর্ষণ বুদ্ধের জীবনচিত্র। মন্দিরের দেয়ালজুড়ে চিত্রকর্মগুলো ১২টি পর্বে বুদ্ধের জীবন আর বৌদ্ধধর্মের ব্যুৎপত্তির ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানে ফটোগ্রাফির বিষয়বস্তুর অভাব নেই।

কখন যাবেন
যেকোনো সময় যাওয়া যায়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর সবচেয়ে ভালো সময়। সেপ্টেম্বরে যেতে হলে এখনই ভিসার জন্য আবেদন করুণ।

যাবেন কীভাবে
বাংলাদেশ থেকে প্রথমে কলকাতা যেতে হয়। সেখান থেকে সরাসরি ভুটানের পারো শহরে বিমান যায়। এছাড়া ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে সেখান থেকে বাসে ফুন্টসোলিং যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে সরাসরি ফুন্টসোলিং যাওয়ার বাসও রয়েছে।

কোথায় থাকবেন
ভুটানের পারো এবং থিম্পুতে প্রচুর হোটেল রয়েছে। এর তুলনায় পুনাখায় কম। তাই আগে বুকিং করে নেওয়া ভালো। সূত্র : দ্য মনিটর।
//এআর