ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘুরে আসুন প্রত্নতত্ত্বের শহর কুমিল্লা

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ১০:১২ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

কুমিল্লা শহরকে ‘পর্যটনের শহর’ বললে অত্যুক্তি হবে না। কিংবা একে পুরাকীর্তি বা প্রত্নতত্ত্বের শহরও বলা যেতে পারে। হাজার বছরের পুরাতন ঐতিহাসিক নিদর্শন, স্থাপনা, পুরাকীর্তির স্বাক্ষাত পেতে ঘুরে আসুন কুমিল্লায় থেকে।

রণ সমাধিক্ষেত্র : কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও বৃটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সকল ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থণাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাধিক্ষেত্রের ৭৩৬টি কবর আছে।

ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির :  কুমিল্লা সাহেব বাজার এলাকায় রানী ময়নামতি প্রাসাদ ও মন্দির অবস্থিত। এটি একটি প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনা। স্থানীয়ভাবে এটি রানী ‘ময়নামতি প্রাসাদ’ নামে পরিচিত। ১৯৮৮ সালে এর খনন কাজ শুরু হওয়ার ফলে একটি বৌদ্ধ মন্দিরের চারটি নির্মাণ যুগের স্থাপত্য কাঠামো উন্মোচিত হয়। খননের সময় এখান থেকে বেশ কিছু পোড়ামাটির ফলক ও অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি ৮ম থেকে ১২শ শতকের প্রাচীন কীর্তি বলে ধারনা করা হয়। এখানে বছরের পর বছর ধরে সনাতন ধর্মালম্বীদের লোকনাথ পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতি ৭ বৈশাখ থেকে মাসব্যাপী বড় পরিসরে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।

শালবন বিহার : এটি বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম শালবন বৌদ্ধ বিহার। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে ‘বার্ড’ এর কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল, গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার।

১৮৭৫ সালের শেষ দিকে বর্তমান কোটবাড়ি এলাকায় একটি সড়ক তৈরির সময় একটি ইমারতের ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। সে সময় আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষকে একটি দুর্গ বলে অনুমান করা হয়। ধ্বংসাবশেষটিকে রণবংকমল্ল হরিকেল দেবের তাম্রশাসনের (খৃষ্টীয় তের শতক) দুর্গ ও বিহার পরিবেষ্টিত পট্টিকেরা নগর বলে হয়। বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। ধারণা করা হয়, এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন এবং ধর্মচর্চ্চা করতেন। নানা সময়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে।

এছাড়া এখানে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিমের সংমিশ্রণে রয়েছে আরও অনেক স্থান। সে সব স্থানের মধ্যে রয়েছে কবিতীর্থ, আনন্দ বিহার, লালমাই পাহাড়, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, রানী ময়নামতি প্রাসাদ, মরানীর কুঠি, বলেশ্বর দীঘি, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, ভোজ রাজার বাড়ি, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, ময়নামতি জাদুঘর প্রভৃতি। বলা যায় ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ভাণ্ডার কুমিল্লা।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে কুমিল্লা যাওয়া যায়। ননএসি বাস ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা এবং এসি বাস ২৫০-৩০০ টাকা। কুমিল্লা শহরে পৌঁছতে সাধারণত সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা। বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে এশিয়া লাইন, তিশা, বিআরটিসি এবং ইকোনো সার্ভিস।

অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ : শহর থেকে বিভিন্ন জায়গা ঘোরার জন্য রয়েছে কার, হায়েস, সিএনজি এবং ইজিবাইক।

থাকার ব্যবস্থা : পর্যটকদের থাকার জন্য কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হোটেল নুরজাহান, বার্ড গেস্ট হাউজ, হোটেল কিউ প্যালেস, হোটেল গোল্ডেন ইন এবং রেড রুফ ইন। ভাড়া পড়বে প্রতি রাত ১৫শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা।

 

আর/ডব্লিউএন