ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ২ লাখ রোহিঙ্গা শিশু : ইউনিসেফ

প্রকাশিত : ১০:০৭ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:১৬ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে দুই লাখের বেশি শিশু মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ। এ বিষয়ে জরুরি সহায়তারও আহ্বানও জানিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থার শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান জ্যঁ লিবিকে উদ্ধৃত করে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ মানবিক সঙ্কট ক্রমশ বড় আকার ধারণ করছে। আর এ সঙ্কটে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে শিশুরা। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শরণার্থীদের মোট সংখ্যার ৬০ শতাংশই শিশু।

ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে ইউনিসেফের সহায়তায় জরুরি সামগ্রী কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে লিবি বলেন, বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ক্যাম্পগুলোতে সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। সেজন্য প্রাথমিকভাবে ৭৩ লাখ ডলার প্রয়োজন।

মিয়ানমারের রাখাইনে পুলিশ ফাঁড়ি ও সেনা ক্যাম্পে হামলার পর সেনা অভিযানের প্রেক্ষাপটে গত ২৪ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল চলছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের একজন মুখপাত্র মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ইতোমধ্যে দুই লাখ ৭০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে তারা ধারণা করছেন। 

জ্যঁ লিবি বলেন, প্রতিদিন যে সংখ্যায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে তা ‘নজিরবিহীন’। ৪ থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কেবল ছয় দিনেই দুই লাখ ২০ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। তাদের বাংলাদেশে আসার এই প্রবণতা শিগগিরই থামার কোনো লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

ইউনিসেফ বলছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পাওয়া বিপুল সংখ্যক শিশু বহুদিন ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি। তারা ক্ষুধার্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ছে। রাখাইন থেকে দীর্ঘ দুর্গম পথ পেরিয়ে আসতে গিয়ে তাদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখনই তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন।

লিবি বলেন, তারা সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন সেইসব শিশুদের নিয়ে, যারা পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এরকম ১ হাজার ১২৮ জন শিশুকে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো শনাক্ত করতে পেরেছে এবং আগামী দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।

জানা গেছে, মিয়ারমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে যে তাদের একই পানিতে মলত্যাগ, গোসল, রান্না করতে হচ্ছে। ফলে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পেটের পীড়া প্রবল র‌্যাপক আকারে বেড়ে যাচ্ছে।

সেখানে দায়িত্বরত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আগে নির্মিত শিবিরগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও নতুন করে নির্মিত স্থায়ী ও অস্থায়ী শিবিরে সেসব সুবিধা নেই। ফলে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নতুন আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ও স্থানীয়ভাবে খাবার এবং বোতলজাত পানি সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এসব শিবিরে পয়ঃনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাই নেই।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, যে পানি দিয়ে রান্নাবান্না করা হচ্ছে সেই পানি দিয়েই গোসল ও বাথরুমের কাজ সারা হচ্ছে। এছাড়া উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করায় নতুন শিবিরগুলোতে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

এখনই এসব বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত অন্যান্য রোগ মহামারি আকারে দেখা দেবে বলে বেসরকারি সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তারা জানান।

আটদিন হলো বালুখালী পানবাজার শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন রেহেনা বেগম (৪০)। তিনি বলেন, ‘গত চারদিন হলো তিন বছরের সন্তান নিয়ে এ ক্যাম্পে আছি। এখানে আসার পর থেকে ছেলের পাতলা পায়খানা ও জ্বর। কোনোভাবেই ভালো হচ্ছে না। আমারও শরীরে চুলকানি দেখা দিয়েছে।

পাশেই একটি পুকুর আছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে রান্নাবান্নার কাজ সারি। পুকুরে গোসল ও কাপড় ধোয়া মানা। গত ১০ দিন ধরে একই কাপড় পরে আছি।

কোথায় পায়খানা-প্রস্রাব করেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাই তো বড় সমস্যা। একটি গর্ত খুঁড়ে সেই কাজ সারছিলাম। কিন্তু সেটিও ভর্তি হয়ে গেছে।

বালুখালী স্বাস্থ্য ক্যাম্পের সিনিয়র নার্স বিউটি বড়ুয়া বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেকেই ঠান্ডা-জ্বর, ত্বকের রোগে ভুগছেন।

এছাড়া মিয়ানমার থেকে আসার সময় আহত হয়ে অনেকে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে রোগীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আরকে/ডব্লিউএন