ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রোহিঙ্গা সংকট

জাতিসংঘে ১২ নোবেল বিজয়ীর খোলা চিঠি

প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৩২ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী ও বিশিষ্টজনেরা। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১২ নোবেলজয়ী ও ১৫ বিশিষ্টজন। তাদের মধ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসও রয়েছেন। বুধবার ঢাকায় ইউনূস সেন্টার থেকে চিঠিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, মেইরিড মাগুইর, বেটি উইলিয়ামস, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু, শিরিন এবাদি, তাওয়াক্কল কারমান, মালালা ইউসুফজাই, ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বোনিনো প্রমুখ।

নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকট পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বান করায় জন্য প্রথমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আবার মনে করিয়ে দিতে চাই, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবীয় ট্র্যাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, তার অবসানে আপনাদের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আপনাদের এ মুহূর্তের দৃঢ়সংকল্প ও সাহসী সিদ্ধান্তের ওপর মানব ইতিহাসের ভবিষ্যৎগতিপথ অনেকটাই নির্ভর করছে।

চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমণে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বহু গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে।

আতঙ্কের বিষয়, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে এ এলাকায় প্রায় একবারেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, ফলে দারিদ্র্যপীড়িত এ এলাকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্থানীয় সরকার সূত্রগুলোর মতে, দুই সপ্তাহে তিন লাখেরও বেশি মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মৃত্যুর মুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের এ ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিদিন আরও খারাপ হচ্ছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে গত বছরের শেষে আমরা কয়েকজন নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকরা এ বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আমরা আবার আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্ভাব্য সব হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে নিরীহ বেসামরিক মানুষের ওপর নির্বিচার সামরিক আক্রমণ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়, ফলে এ অসহায় মানুষকে নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে এবং রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হতে না হয়। মিয়ানমার সরকার যে যুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে, তা একেবারেই আজগুবি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর এবং পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়কালে বার্মা তার সীমানাভুক্ত রোহিঙ্গাসহ সব জাতিগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক বলে স্বীকার করে নেয়। সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্বও দেয়।
চিঠিতে আনান কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অবিলম্বে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা, দেশটি থেকে শরণার্থীর প্রবাহ বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিতভাবে পীড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানানো, যেসব শরণার্থী এরই মধ্যে দেশ ত্যাগ করেছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান ও রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, বিশ্ববাসী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা পালন করেছে, এটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।