ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আজকের তারুণ্যই গড়বে আগামীর বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০৩:৫৮ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:০২ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার

বাংলাদেশের মানুষের প্রাণশক্তি অফুরন্ত। আমাদের শিক্ষার্থীরা বাসে ঝুলে অনেক কষ্ট-পরিশ্রম করে পড়াশোনা শিখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তারা বেড়ে ওঠে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে অক্লান্ত প্রাণশক্তির স্ফূরণ ঘটে। আজকের এই তারুণ্যই আগামীর বাংলাদেশ গড়বে বলে আমার বিশ্বাস। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনার প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ

বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিভা নিয়ে প্রফেসর কায়কোবাদ বলেন, ১৯৯৯ সালে বুয়েটের ছাত্রদের নিয়ে আমরা একটি প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় গেলাম আইআইটি কানপুরে। ভারতের আইআইটিগুলোর সুনাম সারা পৃথিবীজুড়ে। তারা খুব আশাবাদীও ছিল যে, সেই প্রতিযোগিতায় তারাই প্রথম হবে। কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা গেল, প্রতিযোগিতায় প্রথম হলো বুয়েট আর দ্বিতীয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তা-ই নয়, পরের বছরও আমরা একই প্রতিযোগিতায় গেলাম এবং প্রথম হলাম। তখন স্বাগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আমাকে বললেন, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে তো আমরা কখনো ইতিবাচক কিছু শুনি নি। আর গতবারের প্রতিযোগিতার পর আমি আমাদের শিক্ষকদের বলে দিয়েছিলাম কঠোর প্রস্তুতি নিতে। তারা সারা বছর প্রস্তুতি নেয়ার পরও তোমরা আবার প্রথম হলে কী করে? আমি বললাম, আমাদের শিক্ষার্থীরা বাসে ঝুলে অনেক কষ্ট-পরিশ্রম করে পড়াশোনা শিখতে আসে। যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে দিয়ে তারা বেড়ে ওঠে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে অক্লান্ত এই প্রাণশক্তির স্ফূরণ ঘটে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ তার বক্তব্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির বিভিন্ন ঐতিহাসিক অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এশিয়ার প্রথম  নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন একজন বাঙালি। আমি একবার ভারতের গোয়া-য় ন্যাশন্যাল ইন্সটিটিউট অব ওশেনোগ্রাফিতে গেলাম। সেখানে দেখলাম দশজন বিজ্ঞানীর ছবি, যাদের পাঁচজনই জন্মগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের মাটিতে। আর এটা তো আজ প্রমাণিতই যে, রেডিও আবিষ্কারের স্বীকৃতি মার্কনি পেলেও মূলত স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুই ছিলেন এর আবিষ্কর্তা।


বাংলাদেশের মানুষের জীবনমুখী দক্ষতা প্রসঙ্গে ড. কায়কোবাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস শহরে একবার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা তখন সুযোগ বুঝে বিস্তর জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। সে তুলনায় আমাদের মানুষ অনেক ভালো। আমরা এতগুলো মানুষ একটি ছোট্ট দেশে একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে অনেক ভালো আছি।  আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় যখন বন্যা হয়, এত সম্পদ আর এত প্রস্তুতির পরও ওদের বহু মানুষ মারা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ দূর্যোগে ঠিকই বেঁচে থাকার পথ করে নেয়। আমাদের উদ্যম ও জীবনীশক্তি  অতুলনীয়। পৃথিবীর মাত্র এক-সহস্রাংশ ভূমির এই দেশে আমরা বাস করছি মোট বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর ২৪ সহস্রাংশ মানুষ! এত অল্প জায়গায় সীমিত সম্পদ নিয়ে এত মানুষ কীভাবে টিকে আছে এটাই তো একটা বিস্ময়। জাতিসংঘের উচিত পৃথিবীর অন্যান্য দেশকে বলা যে, এদের কাছ থেকে শেখো কীভাবে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়।

তিনি বলেন, জাতি হিসেবে আজ আমাদের চরিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন জরুরি। তাই আমাদের উচিত একটি উন্নয়ন-অনুকূল সংস্কৃতির লালন ও বিকাশ ঘটানো। আমি মনে করি, এমনই একটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন যা মানুষের চরিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। মুক্ত অলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পরিচালক সমন্বয় মিসেস সুরাইয়া রহমান।  


*১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মাসিক মুক্ত আলোচনায় এই বক্তব্য দেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।