ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ এভ্রিলের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৫৩ পিএম, ২ অক্টোবর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ১০:৪১ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার

বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মেয়ে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। যার মাথায় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের মুকুট। যদিও সেই মুকুট নিয়ে চলছে বিতর্ক, তবে বিষয়টিকে চ্যালঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন এই বিউটি কুইন। যাকে নিয়ে এতো বিতর্ক সেই মেয়েটি অনেক সাহসী ও প্রতিবাদী। অনেক ছেলেকে নিজ হাতে পিটিয়েছেন এভ্রিল। এ কারণে বন্ধুরা তাকে ‘মাফিয়া গার্ল’ বলে ডাকেন। বিষয়টি নিয়ে তার অবশ্য কোনো অভিযোগ নেই। বরং এ নামে ডাকাটাকে উপভোগ করেন এভ্রিল। এটা তার সাহসী ও প্রতিবাদী চরিত্রের স্বীকৃতি মনে করেন এই তরুণী।

এ বিষয়ে এভ্রিলের বক্তব্য হচ্ছে- বন্ধুরা আমাকে এই নামে ডাকে। আমি মাফিয়াদের মতো আচরণ করতাম। মাফিয়া বলতে আন্ডারগ্রাউন্ডের মাফিয়া না। আমি যখনই দেখতাম, কোনো ছেলে কোনো মেয়েকে টিজ করছে তখন আমি ছেলেটাকে পিটাতাম। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, অনেক ছেলেদের আমি মেরেছি। আমাকে অনেকবার ছিনতাইকারীরা ধরেছিল। আমি ওদেরও পিটিয়েছি। আমাকে ‘মাফিয়া গার্ল’ডাকা হয় শুধুমাত্র প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য।

চট্টগ্রামে একটা নিয়ম প্রচলিত আছে। মেয়েরা একটু বেশি সুন্দরী হলেই বিয়ে দিয়ে দেয়। চারিদিক থেকে তখন প্রস্তাব আসে বিয়ের। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিলের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছিলো। কিন্তু প্রতিবাদি এই মেয়ে পরিবারের সেই চাপটি সামলে নিতে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন।

এভ্রিল বলেন, আমার বয়স যখন ষোল, তখন বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমাদের চিটাগাংয়ে একটা নিয়ম আছে, মেয়েরা একটু বেশি সুন্দরী হলে সবাই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে। বিয়ের জন্য ফ্যামিলিকে খুব বেশি ‘প্যারা’ দেয়। এটা চিটাগাংয়ের স্বাভাবিক ঘটনা। আমার ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটে। ছোটবেলায় খুব সুন্দরী ছিলাম আমরা দুই বোন। প্রতিবেশীরা বাবাকে বলত, আপনাদের মেয়েকে বিয়ে দেন। এগুলোতে প্রভাবিত হয়ে বাবা রাজি হয়ে যান। আমাকে বিয়ের চাপ দেন। আমি খুব বেশি দুরন্ত ছিলাম। আমি নিজের মতো থাকতে চাইতাম। অল্প বয়সে বিয়ের প্যারার মধ্যে ঢুকে যেতে চাইনি। বাবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ওখান (চট্টগ্রাম) থেকে চলে আসি। আমি স্টাডি করব, নিজের ক্যারিয়ার গড়ব। এখন অ্যাকচুয়ালি বাবার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ফ্যামিলির বাকিরা আমাকে সাপোর্ট দেয়।

দুরন্ত এই মেয়েটির আরও একটি গুন রয়েছে। সে বাংলাদেশের প্রথম হাইস্পিড লেডি বাইক রাইডার। তার লক্ষ্য হাইস্পিড লেডি বাইকার হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেকে তুলে ধরা। এভ্রিল মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাইক চালানো শিখেছেন। এরপর আস্তে আস্তে মোটরবাইক চালানো তার শখে পরিণত হয়। মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন নৈপুণ্য দেখাতে পারদর্শী হয়ে উঠেছেন এভ্রিল। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতাসম্পন্ন এভ্রিলের বাইক নৈপুণ্য প্রদর্শনী, বাইক চালানোর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। এ কারণে  অনেক আগেই সেলিব্রেটি বনে যান তিনি। বর্তমানে এই তরুণী ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের অ্যাক্টিভিটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।

এভ্রিল মনে করেন, মোটরসাইকেল চালানো কিংবা উচ্চতর প্রযুক্তি গ্রহণ করার মতো বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তিনি। ভবিষ্যতে তিনি বাইক-সম্পর্কিত যেকোনো উদ্‌যাপন এবং উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখতে চান। বাংলাদেশের তরুণী-নারী বাইকারদের প্রশিক্ষণের জন্য একটি বাইক প্রশিক্ষণ স্কুল পরিচালনা করারও ইচ্ছা রয়েছে তার।

এভ্রিল বলেন, ১৪ বছর বয়সে বাবা আবু তাহেরের বাইকেই তার হাতেখড়ি। তবে ওই সময় বাবার এতে সায় ছিল না। কিন্তু বাইকের প্রতি তার ঝোঁক ছিল প্রচণ্ড। তাই মামার কাছ থেকে বাইক চালানো শিখে নেন। তখন তিনি ডিসকোভারী চালাতেন। এরপর সিসির ব্যাপারটা বোঝার পর হাই সিসির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ভাইয়ের হোন্ডা সিডিআই ১৫০ সিসি চালাতে শুরু করেন।

বর্তমান বিতর্ককে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল। এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মধ্যে যে জেদটা কাজ করছে সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেখাব। ভালো পারফর্ম করলে মানুষ সব ভুলে যায়। আমিও ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে গিয়ে কিছু একটা করব। বাংলাদেশকে দেখিয়ে দেব। তখন আমি সেটার জবাব দিয়ে দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বমঞ্চে গিয়ে আমাকে পারতেই হবে। আমি যেহেতু বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি, আমাকে পারতেই হবে। দেশের মান-সম্মান আমাকে রাখতেই হবে। এতগুলো মানুষ আমাকে এত কথা শুনিয়েছে, সবাইকে জবাব দিতে হবে। এটা আমার নিজের কাছে নিজের কমিটমেন্ট। ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সমালোচনার জবাব দিব।’

 এক নজরে জান্নাতুল নাঈম এভ্রিল

বয়স : ২০ বছর

শখ : বাইক চালানো, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলা, দাতব্য কাজ

অন্যান্য গুণ : সাঁতার, বোলিং, গান গাওয়া, জিমন্যাস্টিক

দক্ষতা : বাইক চালানো, মনমরাদের মন ভালো করে দেয়া

জেলা : চট্টগ্রাম

স্বপ্ন : নিজেকে এমন অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যেখানে মানুষ প্রতিটি কথার মূল্য দেবে

সামাজিক কর্ম : ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত

পছন্দের খাবার ; সব ধরনের বাঙালি ও চাইনিজ খাবার

প্রিয় রং : কালো

পোশাক : মানিয়ে যায় এমন সব পোশাক

//এআর