ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

যে শহরে পুলিশ মাত্র একজন, তাও আবার অন্ধ

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ৮ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৫:২৮ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

চীনের লানবা শহর। সিয়া চং রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরে লানবা শহরের চারপাশের এলাকা ৩৮ কিলোমিটার। এখানে আছে ৩টি প্রশাসনিক গ্রাম, ১৩টি ছোট গ্রাম। গত ১২ বছরে এখানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়নি। বিষয়টি অবাক হওয়ার মতোই। বিস্ময়ের আরও বাকি আছে। দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ওই শহরের নিরপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন একজন মাত্র পুলিশ অফিসার। তার নাম প্যান ইয়ং। বয়স ৪৫ বছর। তিনি একাই সারা শহর টহল দিয়ে বেড়ান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ওই পুলিশকর্মী চোখে দেখেন না।


ইয়ং গ্লুকোমায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন ২০০২ সালে। তারপরও তার চাকরি আছে। কারও করুণায় নয়, চাকরিটি আছে তার দক্ষতায়। কারণ তিনি একাই যেভাবে শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন, তাতে তাকে সরানোর প্রশ্নই ওঠে না। তিনি রোজ নিয়ম করে পুলিশের পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েন কাজে। অবশ্য তার স্ত্রী থাকেন সঙ্গে।


প্যান ইয়ংয়ের দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও নিজের শহরটাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। চেনেন সেখানকার মানুষজনকে। তাই সিয়া চং পুলিশ স্টেশনের ওই একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তাকে কর্তৃপক্ষ কখনই সরানোর চিন্তা করেনি।

১৩টি গ্রামের দায়িত্বে আছেন প্যান ইয়ং। তার দক্ষতার কারণে সেখানে গত ১২ বছরে কোনো খুন-খারাবি হয়নি। চুরি-ছিনতাই হয়নি। ঘটেনি কোনো দুর্ঘটনাও। অবশ্য এর পেছনে আরও একজনের নীরব ভূমিকা রয়েছে। তিনি প্যানের স্ত্রী তাও হংগিং। তিনি লোকাল রেলওয়ে স্টেশনের রক্ষী। প্রতিদিন তিনিও সারা শহর চক্কর মারেন পুলিশ স্বামীর সঙ্গে। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন প্যানের স্ত্রী। তিনি মনে করেন, ভাগ্যে ছিল বলেই তারা দু’জন একসঙ্গে।

প্যান ইয়ং অবশ্য ছোট থেকেই অপরাধের বিরুদ্ধে সরব। তিনি বেড়ে উঠেছেন পুলিশ থানা চৌহদ্দিতেই। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্যান বলেন, আমার পদটা বড় নয়। তবু আমি আমার পুলিশের এই পেশাটাকে ভালোবাসি। অপরাধকে কখনও প্রশ্রয় দিইনি। তার স্ত্রীও একমত হয়ে বলেন, প্যান কাজপাগল মানুষ।

চোখ হারিয়ে একসময় বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন প্যান ইয়ং। ধরে নিয়েছিলেন, জীবন শেষ। জীবনের সেই চরম হতাশার সময়ে পাশে পান তাও হংগিংকে। প্যানের কথায়, তাওয়ের সঙ্গে বিয়ের পর, ও ভরসা দিল। নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। ও না থাকলে কবেই হারিয়ে যেতাম! কৃতজ্ঞচিত্তে গণমাধ্যমকে বলছিলেন প্যান। চীনের ওই শান্ত শহরে তাদের এখন সুখের জীবন।

লানবা শহরের বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে নেই। তারা মনে করেন, এই দম্পতি যা করছেন তা অবিশ্বাস্য। প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারাও খুশি। এ দু’জনের এমন সাফল্যের কথা তারাও ভাবতে পারেননি কখনও।

সূত্র : এই সময়।

//এআর