ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা ভালো ফলাফল আনবে না: মিয়ানমারের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত : ০৫:০৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের উপর কোনো ধরণের নিষেধাজ্ঞা কারও জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দেশটির অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ তুন তুন নাইং।

মিয়ানমার টাইমসকে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এর মানে হচ্ছে কোনো দেশকে অর্থনৈতিকভাবে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাধা দেয়া। তারা আমাদের অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার ও দেশের সঠিক উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে এবং এটা ভালো কিছু নয়।’

মিয়ানমারের রাখাইনে গত ২৪ আগস্ট রাতে সেনা ও পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনায় ব্যাপক দমনাভিযানে নামে দেশটির সেনাবাহিনী। বিদ্রোহী দমনের নামে সাধারণ রোহিঙ্গাদের উপর নৃসংশ নির্যাতন শুরু হয়। যাকে জাতিসংঘ জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা।

এ প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মিয়ানমার টাইমস বলছে, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে কয়েক বছরের উন্নয়নের পর দেশটির বর্তমান অর্থনীতিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

তবে ইউ তুন তুন নাইং নিষেধাজ্ঞায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে অর্থনীতির উপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, বাণিজ্য এবং সহযোগিতার মাত্রা কম থাকায় এতে কোনো সমস্যা হবে না।’

তবে জাতিগত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দেশটিকে পেছনের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এটি দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংস্কারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

মিয়ানমার এখনও গণতান্ত্রিক যাত্রা ও জাতীয় ঐক্যের পথে শুরুর দিকে রয়েছে বলে মনে করছেন মিয়ানমার টাইমস।  প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তুলনামূলকভাবে দেশটির অর্থনীতি দ্রুত অগ্রগতি লাভ করছে। আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) তিনগুণ বেড়েছে, যা ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

দেশটিতে নতুন বিনিয়োগ আইন কার্যকর করা হয়েছে এবং শিগগিরই নতুন কোম্পানি আইনও অনুমোদন পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এছাড়া বেশ কিছু বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দরে বড় ধরনের বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। ফলে নতুন নতু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে এসব কিছুই বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত হবে না জানিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখপাত্র ইউ জ্য হতেই বলেন, ‘কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা চলছে সেটি কোনো ব্যাপার নয়; তবে গণতন্ত্রের রূপান্তর, অভ্যন্তরীণ শান্তি বজায় রাখা এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা পশ্চিমাদের উচিত হবে না।’

নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে মিয়ানমারের অর্থনীতিতে তা সীমিত প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করেন ইউ তুন তুন। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যবসা বাণিজ্যের উপর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিয়ানমারের ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের তুলনায় ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কম হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারের অর্থনীতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারবে না।’

ডব্লিউএন