ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে

প্রকাশিত : ০৯:৩০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৬:২৭ পিএম, ১ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

বাংলাদেশের রাজনীতির যে গতি-প্রকৃতি, তাতে দৈব-দুর্বিপাক ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই। আমার সামান্য যেটুকু জ্ঞান, তাতে এটা আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি।

প্রার্থী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অন্তত যা বিবেচনায় আনে, এনেছে, আনবে এবং আনা উচিত-

১. ধনী

২. কম বয়সী

৩. কর্মঠ

৪. মাঠে সক্রিয়

৫. জনপ্রিয়

৬. কেন্দ্রে সক্রিয়

সন্দ্বীপে দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন প্রয়াত মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বীপবন্ধু হিসেবে যিনি এখনও দ্বীপের মানুষের কাছে পরিচিত। কিংবদন্তিতুল্য মানুষটির প্রতি মানুষের ভালোবাসাকে মূল্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে সন্দ্বীপে নৌকার দায়িত্ব দিয়েছে তার সন্তান মাহফুজুর রহমান মিতাকে। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন এ আসন থেকে নৌকার প্রার্থী। সেবার জিতেছিল বিএনপি। দ্বিতীয় হয়েছিলেন মিতা। তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। মিতা ২০০৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন। যদিও পরে আর সে নির্বাচন হয়নি।

এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আর, সন্দ্বীপে দলের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন মিতা। বিএনপিবিহীন এ নির্বাচন নিয়ে নানান কথা আছে। এরপরও, সরকার গঠিত হয়েছে। সংসদ বসেছে। তাতে, আইন তৈরি হচ্ছে। যারা ওই নির্বাচনকে মানছেন না, তারাও কিন্তু সেই সংসদে বানানো আইনগুলো মেনে চলেছেন। সেই সংসদে মাহফুজুর রহমান মিতাও এমপি। কিছুই থেমে নেই।

একদম আনাড়ি মানুষও দায়িত্ব পেলে নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারেন। মেধা থাকলে, সামান্য ক্ষমতায় অনেকে অনেক কঠিন কাজও শেষ করতে পারেন। এমপি হবার পর- মুস্তাফিজের রক্ত যার ধমনিতে- তিনি নিজেকে মেলে ধরবেন না এটাই সবার কাম্য।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে বাবা মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে ছেলে মাহফুজুর রহমান অতি স্নেহভাজন হয়ে আছেন। মিতা ঢাকায় থাকেন। বড় ব্যবসায়ী। আয় রোজগার বেশ ভালো। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে ওঠাবসা তার। এখন রাজনীতি করতে কানেকশন লাগে, কানেকশন। সাথে টাকাও। এলাকায় মিতার ভালো ভোট ব্যাংক আছে বাবার কারণে। আর এখন নিজেরও কিছু অনুসারী তৈরি করতে পেরেছেন। দলে যারা উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান আর পৌর চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ টিটুর বিরোধী তারা সরল অংকে মিতার অনুসারী। এমন নানা যোগ বিয়োগে মিতার পাল্লা বেশ ভারী।

মনোনয়ন দৌঁড়ে বিশ্বাস করুন মিতার কাছাকাছি আপাতত কেউ নেই। যাদের মনে করা হচ্ছে, তারা রাজনীতির এখনকার কৌশলের কাছে অসহায়। দক্ষতা বলুন আর এই কৌশল, আপাতত মাহফুজুর রহমান মিতা ছাড়া আমার পর্যবেক্ষণ আর বিচারেও কেউ নেই।

কিন্তু, এরপরও বলি সন্দ্বীপে এখন আর আওয়ামী লীগ নেই। আছে মিতা লীগ, নইলে শাহজাহান লীগ বা টিটু লীগ। এমনিতে সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগ-বিরোধী পক্ষ খুব শক্তিশালী, খুব। আওয়ামী লীগে নিবেদিত প্রাণ কিছু মানুষ আছে বলেই দল আছে। সাংগঠনিক কাঠামোটা এখনো আছে। এর সাথে ব্যক্তির ভাবমূর্তি যোগ হয়েছে। তো, এই শক্ত সংগঠনের এখন কিন্তু খুব বাজে অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে দলে প্রভাবশালী, উপজেলা চেয়ারম্যান আর পৌর মেয়র ৬ মাস ধরে কোনঠাসা। তাদের অনুসারীরা বেকায়দায়। পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ছাত্রলীগে, যুবলীগে এখন মিতার রমরমা অবস্থা। এই রমরমা ভাব সাংগঠনিকভাবে উত্থিত নয়। নেতা-কর্মীদের প্রায় সবাই ব্যক্তি অনুসারী হয়ে গেছেন।

আওয়ামী লীগের গৃহদাহ কোনোভাবেই আগামী নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নে প্রভাব ফেলবার মতো হয়নি এখনো। কিন্তু, হয়ে যেতেও পারে। এটি আশাবাদ নয় যদিও, বিচিত্র কিছুও নয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন হলে, সন্দ্বীপে যে কেউ জিতবে। বিএনপি নির্বাচনে এলেও আওয়ামী লীগ যদি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো করে, দিনের ১১টার মধ্যে সব ভোট নেয়া শেষ করে ফেলে, তাহলে সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারেন। যদি সেভাবে না হয়?

মিতা আবারো দলের মনোনয়ন পাবেন, এটা বুঝতে গবেষক হতে হবে না। এজন্য, প্রচারস্বর্বস্ব কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সত্যায়নেরও দরকার নেই। নির্বাচন কাছাকাছি এলে এমন ফরমায়েশি কাজ আরো সামনে আসবে। সেদিকে, নজর না দিয়ে, সময় নষ্ট না করে বরং নিজেদের মালিন্য দূর করার উদ্যোগ নেয়া দরকার।

আপনাদের আওয়ামী লীগার হওয়া দরকার। এখন কি হয়ে আছেন, বোঝেন?

সোহেল মাহমুদ, আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক