ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

এক নজরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের ২য় দিন

সোলায়মান শাওন

প্রকাশিত : ১০:১৯ পিএম, ৭ ডিসেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে দেশের  তথ্য প্রযুক্তি খাতের সব চাইতে বড় আসর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবন ও অর্জনবিষয়ক ধারণা নিতে আসা এ মেলায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল এই আয়োজন।

এদিন মেলায় অংশ নেওয়া সরকারি-বেসরকারি স্টলগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। যার মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পুলিশ, দুই সিটি কর্পোরেশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, দেশের ডিজিটাইজেশন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ওপদক্ষেপসমুহ দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেন।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী আবির হাসান বলেন, আমরা আগামীর ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে মেলায় এসেছি। এছাড়াও দেশে তৈরি নতুন অ্যাপ, সফটওয়্যার হচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কেও আমাদের জানার আগ্রহ অনেক। নতুন নতুন অ্যাপের সাহায্যে অনেক বড় সমস্যাও এখন সমাধান করা সম্ভব। ডিজিটালওয়ার্ল্ডে আসলে এসব বিষয়ে ব্যাপক ধারণা পাওয়া যায় তাই আজ আমরা সবাই মিলে এসেছি।

রেডি ফর টুমরো এই স্লোগান নিয়ে শুরু ৫ম বারের মতো এই প্রদর্শনীর ২য় দিনে আয়োজনে থাকছে মোট ১২টি সেশন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেশনগুলো হলো- মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, হাই স্কুলপ্রোগ্রামার কনফারেন্স, মিট নাফিস বিন জাফর, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, অপরচুনিটি ফর ইনভেস্টরস অ্যান্ড স্টার্টআপস, সাইবার সিকিউরিটি রিস্কস, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইথিক্যাল হ্যাকিং, এমপ্লয়মেন্ট অব পারসনস নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিজ ইন দ্য আইটি ইন্ডাস্ট্রি।

মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স,

পাঁচ দেশের মন্ত্রীসহ সাত দেশের প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স। এই কনফারেন্সে কি-নোট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারি-বেসরকারি খাতকে সঙ্গে নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজ করেছে। জনগণ তথ্যপ্রযুক্তির সুফলও ভোগ করছে। ফলে, বাংলাদেশে প্রযুক্তিরব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ। এই ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডেই আপনারা দেখেছেন ড্রোন, বিশ্বের উন্নত রোবট সোফিয়াকে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। এজন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে এখন কথা বলার সময় এসেছে। কারণ, দ্রুত বদলে যাওয়া প্রযুক্তি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনছে। ফলে, অর্থনীতির বিকাশ ও শিল্পায়নও দ্রুত ঘটছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই ন্যানোম্যাটেরিয়ালের বাণিজ্যিক ব্যবহার দেখা যাবে। এসবন্যানোম্যাটেরিয়াল স্টিলের চেয়েও ২০০ গুণ শক্ত কিন্তু চুলের চেয়েও পাতলা। থ্রিডি প্রিন্টেড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হবে। ১০ শতাংশের বেশি গাড়ি হবে চালকহীন। সরকার, ব্যবসা ও সাধারণ মানুষের জীবনেও এর প্রভাব দেখা যাবে। আগামীর বাংলাদেশ পৃথিবীর এসব উন্নত প্রযুক্তিগুলোকে গ্রহণের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে।

জয় বলেন, শুধু শ্রমিক নয় বিশ্ববাজারে প্রযুক্তি পণ্য ও সেবা রফতানিকারক দেশ হতে চায় বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব প্রযুক্তিতে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ গাড়ি হবে চালকবিহীন। প্রযুক্তির এই সুফল বাংলাদেশও পেতে চায়।

 

মিট নাফিস বিন জাফর,

ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর দ্বিতীয় দিনে হল অব ফেমে অনুষ্ঠিত মিট উইথ নাফিস শীর্ষক এক সেমিনারে কথা বলেন দুইবার অস্কারজয়ী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নাফিস বিন জাফর। আমি ২০০০ সালে ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর নানা ধরণের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার ও ভিজুয়াল ইফেক্টস শিখেছি। একটা ছবিতে নানা বিষয় থাকে। এমন কিছু বিষয় থাকে যা তৈরি করতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। কিন্তু এগুলো যদি আপনি অ্যানিমেশনের সাহায্যে করেন তবে সময়ও যেমন বাঁচতে তেমনি খরচটাও কমে যাবে। বাস্তব দৃশ্যকে ছবিতে অ্যানেশন ওইফেক্টস দিয়ে বাস্তবের কাছাকাছ নিয়ে আসা যায়।

তিনি  আরও বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে হলে প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানতে হয়। যেহেতু আমি একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী তাই আমার এ সম্পর্কে ধারণা ছিল। বাকিটা আমি কাজ করতে শিখেছি। শুরুতে যে কাজ করতে আমার এক মাস লেখেছি, পরবর্তীতে সেই একই কাজ আমার করতে কয়েক মূহূর্ত লেগেছে। তাই আমি তরুণদের বলবো আপনারা হাল ছাড়বেন না। কাজ টাকে রপ্ত করতে পারলে আপনি এর ভেতর আনন্দ খুঁজে পাবেন। কাজের মধ্যে আনন্দ না থাকলে আপনি কোনো দিনও সেই কাজে সফল হতে পারবেন না।

নাফিস বলেন, অ্যানিমেশন ফিল্মে বিজ্ঞানের সবোত্তম ব্যবহার হয়। এখানে যেমন গ্রাফিক্স লাগে তেমনি লাগে গনিত, জ্যামিতি, ভিজুয়াল ইফেক্টস। এটা আসলে একটা গল্প বলার মত। দৃশ্যকল্পগুলোকে সফটওয়্যারে সাজাতে হয়। এজন্য স্টোরি টেলিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 

সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইথিকাল হ্যাকিং’

 ইওয়াই ল্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারজানা রহমানের সঞ্চালনায় ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইথিকাল হ্যাকিং’- সেমিনারে কি নোট স্পিকার হিসেবে ভারতের প্রিস্টন ইনফো সলিউশনের প্রধান তথ্যপ্রযুক্তি কর্মকর্তা রিজওয়ান শেখ। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের এক জরিপের ফলাফল থেকে জানান, প্রতি ৭৫ জন হ্যাকারদের মধ্যে মাত্র এক জন ‘ইথিক্যাল ওয়েতে’ হ্যাকিং করে। এই যদি হয় হ্যাকারদের অবস্থা, তাহলে সামনে কিন্তু ভয়াবহ দিন। তরুণদের বলব, তোমরা নিজেদের নিরাপদ রাখতেই হ্যাকিংটা শেখ। এতে নিজেদের জন্য কাজ করা হবে, দেশের সাইবারনিরাপত্তা ইস্যুতে কাজ করার সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া করো না তোমরা। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়ের শিক্ষক কেএম সালাউদ্দিন, ঢাকা ব্যাংকের সিইও এ এম এম মঈনুদ্দিন, ম্যাশ টেকনোলজির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজালাল সোহানি।

সেমিনারে বক্তারা সাইবার ক্রাইম ইউনিট কিভাবে আইপি অ্যাড্রেস ট্র্যাক করে হ্যাকারদের সনাক্ত করে, কিভাবে তাদের শাস্তি দেয়, শাস্তির বিধানগুলো কি, এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

এদিকে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়রকে স্মরণ করেছেন নগরবাসী।  তথ্যপ্রযুক্তির এই আসরে নগরবাসী ঢু মারছে  উত্তর সিটি করপোরেশন স্টলে। সেই স্টলেইএকটি ছবি টাঙ্গানো আছে। পাশেই আছে শোক বই। এই বইতে মেয়রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখছেন নানান কথা।সেসব কথায় রয়েছে আনিসুল হকের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

একজন শোক বইতে লিখেছেন, ‘যেখানেই থাকো ভালো থেকে প্রিয় মেয়র’।

স্টলের শোক বইতে মেয়রের প্রতি ভালোবাসা ও স্মৃতি চারণ করেছেন পুরান ঢাকা থেকে আসা আবির। তিনি বলেন, আমি শোক বইতে একটি কথাই লিখেছি, ‘যেখানেই থাকো ভালো থেকে প্রিয় মেয়র। আমরা তরুণরা তোমাকে মনে রাখবো’।

আয়োজনের ৩য় দিন শুক্রবার ১৩টি কনফারেন্স ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

নানা আয়োজনে চার দিনব্যাপী ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড চলবে ৯ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত। প্রতিদিন মেলা চলবে সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে কোনো প্রবেশ ফি নেই। তবে এতেযেতে চাইলে www.digitalworld.org.bd এ ঠিকানায় গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। মেলা প্রাঙ্গণেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

 

এসএইচ/