ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এসিসিএ: স্বপ্নের পেছনে ছুটে চলা

সোলায়মান শাওন

প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ১ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৬:৪৫ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার

অনেকের কাছে স্বপ্নের ক্যারিয়ার চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক অথবা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই এসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফাইড একাউন্টেন্টস (এসিসিএ) এ পড়াশুনা শুরু করেন এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। তবে সবাই পৌঁছাতে পারেন না কাংখিত স্থানে। হতে পারেন না সার্টিফায়েড একাউন্টেন্ট। স্বপ্ন ভঙ্গের এসব নানান দিক নিয়েই ইটিভি অনলাইনের দুই পর্বের বিশেষ প্রতিবেদনের আজ ১ম পর্ব।

এসিসিএঃ কী এবং কীভাবে?

এসিসিএ সম্পর্কে জানতে হলে আগে বুঝতে হবে এসিসিএ কী। সেসাথে জেনে নেওয়া যাক এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

এসিসিএ বা এসোসিয়েশন অব চার্টার্ড সার্টিফাইড একাউন্টেন্টস হচ্ছে পেশাদার হিসাবরক্ষণকারীদের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ১৯০৪ সালে যুক্তরাজ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এর নাম ছিল লন্ডন এসোসিয়েশন অফ একাউন্টেস (এলএএ)। ১৯৮৪ সালে এর নাম হয় চার্টার্ড এসোসিয়েশন অব সার্টিফায়েড একাউন্টেন্টস (সিএসিএ)। সবশেষ ১৯৯৬ সালে বর্তমান এ নাম পায় সংস্থাটি।

১৯৭৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানটিকে “রয়্যাল চার্টার” হিসেবে আখ্যায়িত করেন ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এসিসিএ এর সদস্যরাই শুধুমাত্র নিজেদের সার্টিফাইড চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে এবং তারা এসিসিএ এর সমস্ত নিয়ম কানুন এবং পেশাদারি নীতি মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। এই সার্টিফাইড চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হতেই তরুণদের যত দৌড়ঝাপ।

এসিসিএ এবং সিএ’র মধ্যে পার্থক্য

চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হতে হলে পড়তে হবে সিএ অথবা এসিসিএ। সিএ এবং এসিসিএ দুইটাই চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের সংস্থা হলেও এদের মধ্যে আছে কিছু মৌলিক পার্থক্য।

সিএ পড়ে সাধারণত বাংলাদেশে কার্যক্রম থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ করা যাবে। সিএ এর পড়াশুনা হচ্ছে আর্টিকেল এবং থিউরিটিক্যাল। অন্যদিকে এসিসিএ পড়ে দেশ ও দেশের বাইরের প্রতিষ্ঠানেও একাউন্টেন্ট হিসেবে কাজ করা যাবে। আর এখানের পড়াশুনা থিউরিটিক্যাল এবং প্র্যাকটিক্যাল। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের অডিট করা যাবে না সরাসরি। সত্ত্বাধিকারী হওয়া যাবে না কোন ফার্মের।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, সিএ পাসের কোন নির্দিষ্ট নম্বর নেই। অন্যদিকে এসিসিএ পাস করতে হলে পেতে হবে নির্দিষ্ট ৫০ শতাংশ নম্বর।

মাধ্যমিক বা ও-লেভেল অথবা উচ্চ মাধ্যমিক বা এ-লেভেল শেষ করেই ভর্তি হওয়া যায় এসিসিএ এবং সিএ প্রোগ্রামে। তবে সিএ-তে ভর্তি হতে হলে ফলাফলে কিছু শর্ত আছে। অন্যদিকে এসিসিএ-তে ফলাফলজনিত কোন শর্ত নেই।

স্বপ্ন

এবার আলোচনা করা যাক স্বপ্ন নিয়ে। এসিসিএ-তে ভর্তি হওয়ার সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যে চটকদার বার্তা দেয়া হয় তা হল, একটি ধাপ (এসিসিএ সম্পূর্ণ করতে মোট তিনটি ধাপ থাকে) সম্পন্ন হলেই মোটা বেতনের চাকরি। দেশ-বিদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও চার্টার্ড একাউন্টেন্টদের ব্যাপক চাহিদা বলে জানানো হয়। বিশ্বের ১৮০টি দেশে এমন একাউন্টেন্টরা কাজ করছে বলেও জানানো হয় এসব প্রতিষ্ঠান থেকে।

এছাড়াও বাংলাদেশে এসিসিএ পড়ে অক্সফোর্ড ব্রুক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স (সম্মান) সমমানের বিএসসি ইন এপ্লায়েড একাউন্টিং এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করা যায়। পাশাপাশি এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করা যায় ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকেও।

এমনি স্বপ্নের গল্পে বিভোর তরুণেরা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়ে ভর্তি হয় এসিসিএ-তে।

স্বপ্ন কেনার খরচ

একজন শিক্ষার্থী যদি এক ধাপেই উতরে যেতে পারেন তাহলে তার খরচ হবে ৪ বছরে তিন থেকে চার লক্ষ  টাকা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে স্বপ্নের এ যাত্রায় কোথাও এটা বলা থাকে না যে, অনেকের ক্ষেত্রেই এক বারেই এ যাত্রা সম্পন্ন হয় না।

সাধারণত তিন থেকে চার বছরের কোর্স হলেও বাস্তবিক অর্থে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় বছর। অনেকের প্রয়োজন হয় এর থেকেও বেশি। আর এখানে বলে রাখা ভাল যে, এসিসিএ পড়ার সময়ের সাথে খরচের হিসেবটা সমানুপাতিক।

শুরুতেই দিতে হবে প্রাথমিক নিবন্ধন ফি ৪০পাউন্ড। সাধারণ বাৎসরিক ফি ৭৯ পাউন্ড। তবে প্রথম বছরে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য বাৎসরিক ফি ৪৬ পাউন্ড। পুনঃনিবন্ধন ফি ৭৯ পাউন্ড।  

তিন ধাপে মোট ১৪টি পত্রের পরীক্ষা দিতে হবে।

এসিসিএ এর গ্লোবাল ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, নলেজ ধাপে পরীক্ষার জন্য খরচ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়। তবে  “স্কিল” ধাপের পরীক্ষার জন্য খরচ হবে সর্বনিম্ন ১০০ পাউন্ড থেকে সর্বোচ্চ ২৬৯ পাউন্ড।

আর প্রফেশনাল ডিগ্রির জন্য একজন শিক্ষার্থীর খরচ হবে সর্বনিম্ন ১২৯ পাউন্ড থেকে সর্বোচ্চ ২৯৮ পাউন্ড।

খরচের এ হিসাব ১৩ নভেম্বর ২০১৭ থেকে ৭ মে ২০১৮ পর্যন্ত প্রযোজ্য।

অন্যদিকে ফাউণ্ডেশন ধাপে, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুণতে হবে সর্বনিম্ন ৭৪ পাউন্ড, এরপর ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষার জন্য নিবন্ধ করলে খরচ হবে ৭৮ পাউন্ড। আর ৭ মে’র মধ্যে পরীক্ষার ফি জমা দিলে এর জন্য খরচ হবে ২৩৮ পাউন্ড।

 

এছাড়া এসিসিএ অনুমোদিত যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের এসিসিএ’র বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা দিয়ে থাকে তাদের কাছে ১৪টি পত্র পড়াশুনা করতে প্রতিটির জন্য খরচ হবে ১০হাজার টাকা করে।

এ খরচগুলো ২০১৭- ১৮ সালের জন্য হ্রাসকৃত মূল্য। সাধারণত এর খরচ উপরে প্রদর্শিত খরচের থেকে বেশি। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা মানের সাথে মিল রেখে মূল্য পরিশোধ করতে হয় বলে এর খরচ বছরের পর বছর উর্ধমুখীই হয়ে থাকে। এর সাথে যুক্ত করতে হবে বই এর খরচ।

অর্থ্যাত কেউ যদি এক বারেই এসিসিএ পাস করে যেতে পারেন তাহলেও তার কমপক্ষে প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ হবে।

বি:দ্র: লাখ লাখ টাকায় কেনা এ স্বপ্ন ভঙ্গের বাস্তব চিত্র প্রকাশিত হবে আগামী পর্বে।