ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

রোহিঙ্গা নিধন এখনও চলছে

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৪৩ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার

মিয়ানমারে এখনও জাতিগত নিধন অভিযান চলছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, দেশটির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ নানা কারণ দেখিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠায়নি।

নিবন্ধে বলা হয়, গত আগস্টে নিধন অভিযান শুরু হলে গণধর্ষণ ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে ৬ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দাবি করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশ যে কাজটি করেছে তা প্রশংসার। তবে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে বেশ ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করে তারা।

এদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করে ফাঁদে পা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। তাদের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি বিশ্বদৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যে মিয়ানমারের নাগরিক, তা প্রমাণ কর হবে। এটা কার্যত অসম্ভব। আশির দশকে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় মিয়ানমার। শুধু তাই নয়, এরপর থেকে তাদের সব ধরণের সরকারি কাগজ-পত্র দেওয়া বন্ধ করে দেয় সরকার। আর সাম্প্রতিক সহিংসতায় রোহিঙ্গারা যখন মিয়ানমার ছেড়ে পালালো, তখন তাদের অনেকের সম্বল ছিল শুধু গায়ে জড়ানো কাপড়টুকু। সেনারা তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবার ফলে সঙ্গে নেবার মত কোনকিছু ছিলোনা অনেকের-ই। এখন খুব কম সংখ্যক রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফেরত যেতে ইচ্ছুক। কারণ এখনো সেনাবাহিনী সেখানে জ্বালাও-পোড়াও অব্যাহত রেখেছে। এখনো রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে প্রতিদিন। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা ।

মিয়ানমার সরকার অঙ্গীকার করেছে যে, প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলেও, পরবর্তীতে তারা নিজেদের বসত ভিটায় ফিরে যেতে পারবেন। তবে সরকারি এ আশ্বাসে যুক্তিযুক্ত ভাবেই রোহিঙ্গারা আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ, ২০১২ সালেও একবার মিয়ানমারের উত্তর রাখাইনে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জেরে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে জায়গা দেয় সরকার। তাদের এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। যেতে দেওয়া হয়নি তাদের নিজনিজ ঠিকানায়।

এছাড়াও, রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সহিংসতার পর্যাপ্ত প্রমাণাদি থাকা স্বত্বেও সু চি’র সরকার সেনাবাহিনীর অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বহিরাগত বা বিদেশী তদন্তকারীদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ তালিকায় রয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি-ও। তাকে মিয়ানমারে প্রবেশের ভিসা দেয়া হয় নি! বিদেশী সাংবাদিকদের রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলে প্রবেশে দিয়ে রাখা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির ফলে সু চি বিশ্বের কাছে মুখ খোলার জায়গা পেয়েছে। তবে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নির্যাতন বন্ধে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। এমনকি রাখাইন রাজ্যের নিধন অভিযানকে তিনি কোন গুরুত্ব-ই দেননি।

সার্বিক এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে একটি কঠিন অবস্থার মুখে দাঁড় করিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নির্যাতন এবং হত্যাযজ্ঞকে ‘জাতি নিধন’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে, দেশটিতে কোন ধরণের অবরোধ আরোপের পক্ষে তিনি মত দেননি। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অবরোধ আরোপ করা হলে তা মিয়ানমারের গনতন্ত্রায়ন ব্যাহত করবে। তবে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা মিয়ানমারে জাতিগত নিধন অভিযান বন্ধ করতে বারবার আহ্বান জানিয়ে আসলেও সে বিষয়ে কর্ণপাত করছে না সূচি। তাই দেশটিতে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানও থামছে না।

সুত্র: ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল
এমজে/