ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

উন্নয়ন-অগ্রগতির অনবদ্য সাফল্য গাঁথা

ড. শামসুল আলম

প্রকাশিত : ১০:২৬ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৬:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভেতর দিয়ে বাঙালি জাতি তার সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে অমিত সম্ভাবনার এই বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির সকল সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতির সামনে ‘দিনবদলের সনদ’ তুলে ধরে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ‍সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে এই দিনবদলের সনদ তথা নির্বাচনী ইশতেহারে কেবল পাঁচ বছরের নয়, ২০২১ সালে আমরা কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই তার একটি রূপকল্প তুলে ধরা হয়।

দিন বদেলের সনদ, ‘রূপকল্প-২০২১”, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচির প্রতি জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন প্রদান করে। ফলশ্রুতিতে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মাহজোট সরকার বাংলাদশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজ শুরু করে।

ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অতীতের পুঞ্জিভূত সমস্যা, চরম অব্যবস্থাপনা এবং বিশ্বমন্দার পটভূমিতে বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে সাফল্যের স্বাক্ষর সেখেছে তা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান।

অর্থনেতিতক ও সামাজিক খাতে সামষ্ঠিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয়, কর্মসংস্থান, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ‍বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতে দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে সরকারের সাফল্য অভূতপূর্ব। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংকটের জাল ছিন্ন করে উন্নয়নের আগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামানে রেখে অর্থনৈতিক ও সামাজকি উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়দি রূপকল্পভিত্তিক “বাংলাদশে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১০” প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এ পরিকল্পনার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করা, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান ৩৭ শাতংশে উন্নীত করা, বেকাত্ব ও অর্ধ-বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার ৬০০ কিলো ওয়াট-ঘণ্টায় উন্নীত করা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের জন্য তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারকে সর্বত্র শক্তিশালী করা।

এ লক্ষ্যসমূহ অর্জনের প্রথম ধাপ হিসেবে ইতোমধ্যে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ( ২০১১-১৫) বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিকল্পনাটি তার বাস্তবায়ন মেয়াদের অর্ধকালে উপনীত হয়েছে।

দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি ছিলো ৭২ বিলিয়ন ডলারেরও কম এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১০২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় অর্থাৎ ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের তুলনায় সাড়ে তিন গুণ।

বর্তমান সরকারেরর দায়িত্ব গ্রহণকালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৫ দশমিক ১ শাতাংশ যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ এ উন্নীত হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ধারাবাহিক উচ্চপ্রবৃদ্ধি একটি বিরল ঘটনা। ইতোপূর্বে মাথাপিছু জিডিপি দ্বিগুণ হতে ২০ বছর অপেক্ষা করতে হলেও বর্তমানে মাত্র ৭ বছরে তা ‍দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস-এর ‘২০৫০ সালের বিশ্ব (World in 2050)’ শীর্ষক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন অনুযায়ী আসন্ন বছরগুলিতে যে তিনটি দেশ সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি-ধারা প্রদর্শন করবে তার অন্যতম হলো বাংলাদেশ।

এ প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে ক্রয়ক্ষমাতা অনুযায়ী পরিমাপকৃত মোট দেশজ উৎপাদনের মানক্রমে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩১ তম; অর্থাৎ ২০১৬ সালে বাংলাদশে ছিল বিশ্বের ৩১ তম বৃহৎ অর্থনীতি। প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বক্রমিক ধারায় ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উঠে আসবে ২৮তম স্থানে এবং ২০৫০ সালের বাংলাদশে হবে বিশ্ব অর্থনীতির ২৩তম শীর্ষ কুশীলব।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৮ কোটি টাকা, যা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সাড়ে চার গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, উন্নয়ন খাতে অর্থায়ন, অনুন্নয়ন খাতের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও ঋণ গ্রহণে ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষাসহ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। বর্তমানস সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বৃ্দ্ধি করেছে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ছিল মাত্র ২৪ হাজার ৫শত কোটি টাকা, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩ শত কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানী, যোগাযোগ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংশ্লিষ্ট ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণের বিষয়গুলো।

 

এম/টিকে