ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ছিনতাই হওয়া আইফোন উদ্ধার করল ট্রাফিক সার্জেন্ট

সোলায়মান হোসেন

প্রকাশিত : ১০:৩৬ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৩৬ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

রাজধানীর মিরপুরে ছিনতাই হওয়া এক ব্যক্তির দামী আইফোন উদ্ধার করেছে ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্ট। উদ্ধার হওয়া সেই আইফোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ফিরিয়েও দিয়েছেন ফোনের মালিকের কাছে। বিলাসবহুল এ মোবাইলটির উদ্ধারকারী পুলিশের সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে মিরপুরের কালসী মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এর ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার। একটি প্রাইভেট কার থামিয়ে তার কাগজপত্র দেখছিলেন তিনি। এমন সময়ই ঐ গাড়িতে থাকা মুফতি মুনতাসির আহমেদ নামের এক ব্যক্তির আইফোন ছিনিয়ে নেয় এক যুবক। হঠাৎ করেই মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে প্বার্শবর্তী এক বস্তিতে দৌড়ে পালিয়ে যায় ঐ যুবক।

তাৎক্ষণিকভাবে ঐ যুবককে ধাওয়া করেন সার্জেন্ট ঝোটন এবং তার দুই কনস্টেবল মিজান ও আশরাফ। প্রায় এক ঘণ্টার ওপর সাড়াশি অভিযান চালান তিনি। তারপরেও মুঠোফোনটি না পাওয়াতে অনেকটা নিরাশ হয়েই চলে যান মুঠোফোনটির মালিক মুনতাসির আহমেদ। যাওয়ার আগে ঐ সার্জেন্টকে যোগাযোগের জন্য একটি নম্বর দিয়ে যান।

সার্জেন্ট ঝোটন ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “ঐ ব্যক্তি চলে যাওয়ার পর আমি আবারও ঐ বস্তিতে যাই। প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমি মুঠোফোনটি উদ্ধারের চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে মুঠোফোনটি না পেলে সারারাত অভিযান করব এই মর্মে বলে আসি। কিছুক্ষণ পর একজন এসে জানালো বস্তিটির এক ময়লার ভাগাড়ে মুঠোফোনটি পরে আছে। আমি ও আমার সাথের কনস্টেবলরা গিয়ে মুঠোফোনটি নিয়ে আসি”।

মুঠোফোনটি এর মালিককে ফিরিয়ে দিতে বেশ বেগও পেতে হয় পুলিশকে। ফোনটির মালিক যে নম্বর দিয়েছিলেন তা ঐ মুঠোফোনটিরই নাম্বার। অন্যদিকে মুঠোফোনটিতে থাকা সিমের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেন এর মালিক মুনতাসির আহমেদ। যে কারণে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না সার্জেন্ট ঝোটন। মিরপুর ১০ নম্বর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বে থাকা পুলিশের জ্যেষ্ঠ্য সহকারি কমিশনার ইয়াসমিন সাইকা পাশা মোবাইল সংযোগ অপারেটরের সাথে যোগাযোগও করেন। কিন্তু তারাও পুলিশকে ঐ গ্রাহকের বিষয়ে কোনো তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি।

এরপর মুনতাসির আহমেদের দিয়ে যাওয়া নাম্বারের সূত্র ধরে ফেসবুকে তার আইডি পায় পুলিশ। সেখানেই যোগাযোগ করে আজ শুক্রবার সকালে তাকে মুঠোফোনটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

মুঠোফোনটি পেয়ে আনন্দিত মুনতাসির ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আমি তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম যে আইফোনটি আমি ফেরত পাব। আর তাই সিমের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলাম। আমার মোবাইল বন্ধ থাকার পরেও আমাকে খুঁজে বেড় করেছেন সার্জেন্ট ঝোটন। যে দায়িত্ববোধের পরিচয় তিনি দিয়েছেন তাতে আমি পুলিশের এমন কাজে খুবই মুগ্ধ। আমরা অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করি। তবে এই ঘটনায় বুঝলাম যে সবাই এক না”।

মুঠোফোন উদ্ধার করা তো আপনার কাজ না। তবুও কেন এমন করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সার্জেন্ট ঝোটন বলেন, “আসলে ঘটনাটা আমার চোখের সামনেই ঘটল। তাই কেমন যেন এক তাগিদ অনুভব করলাম। খাতা কলমে আমার দায়িত্ব কী সেদিকে আর তখন খেয়াল ছিল না”।

এ বিষয়ে জ্যেষ্ঠ্য সহকারি কমিশনার ইয়াসমিন সাইকা পাশা ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “পুলিশকে ঘিরে অনেকেরই অনেক নেতিবাচক ধারণা আছে। কিন্তু আমরা প্রতিনিয়ত এমনিভাবে জনগণকে সেবা দিয়ে আসছি। অনেক সময়ই প্রচলিত দায়িত্বসীমার বাইরে গিয়ে কাজ করি। আর সার্জেন্ট ঝোটন আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক চৌকস কর্মকর্তা। সে সবসময়ই ভালো কিছু করতে চায়। আপনি এই যে, আমার সাথে কথা বলছেন একটু আগেই রেডিও বার্তায় মেসেজ পেলাম যে, সার্জেন্ট ঝোটন এক ব্যক্তিসহ এক চোরাই মোটর সাইকেল আটক করেছে। তার এমন কাজে ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি বাড়ছে”।

এসএইচএস/টিকে