ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

গৃহকর্মী থেকে মাইক্রোসফটের দূত ফাতেমা

প্রকাশিত : ০৮:১০ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৫০ এএম, ৩ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ফাতেমা আক্তার। বর্তমানে বয়স ১৬। দু’বছর বয়সে গৃহকর্মী মায়ের কোলে চড়ে যেতে হয়েছে এবাড়ি থেকে অন্য বাড়ি। ৯ বছর বয়সে পড়াশোনা ছেড়ে তাকে হতে হয়েছিলো গৃহকর্মী। বয়স ১১-তে বাল্য বিবাহের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন আশার আলো পাঠশালার কল্যাণে।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ১৬ বছর বয়সী সেই ফাতেমা বেগমকে শুভেচ্ছাদূত বানিয়েছে বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফট। আর ইউটিউবে মাইক্রোসফট এশিয়া তার একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করছে। ফাতেমা এখন অনেক মেয়ের কাছেই অনুপ্রেরণা।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তসংলগ্ন গ্রাম নাখারগঞ্জ। গ্রামের বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ৫ শতাংশ জমির ওপর ফাতেমাদের বাড়ি। সম্পদ বলতে এটুকুই।

ফাতেমা জানান, সে দক্ষিণ রামখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময অধিকাংশ দিন না খেয়ে চার কিলোমিটার হেঁটে বড় বোন আমেনার সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করত। অভাব ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। এর মধ্যে বড় বোন আমেনার বিয়ের খরচ জোগাতে সুদের ওপর টাকা ধার করতে হয় বাবাকে। আরো সংকটে পড়ে তারা।

অভাবের কারণে ওই সময় লেখাপড়া বন্ধ করে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নেয় ফাতেমা। দুই বছর এভাবে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে থাকে ফাতেমা। একদিন বাবা তাকে ডেকে পাঠান বাড়ি। সেই ডাকে বাড়িতে এসে ফাতেমা দেখল ২৫ বছর বয়সী একজনের সঙ্গে তার বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন। কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না সে।

এ সময় স্থানীয় আশার আলো পাঠশালার পরিচালক বিশ্বজিৎ বর্মণসহ সংগঠনের কয়েকজন যুবক এসে এই বিয়েতে বাধা দেন। তখন ফাতেমাকে বিনা পয়সায় লেখাপড়া করানোর দায়িত্ব নেয় আশার আলো পাঠশালা।

ফাতেমা এখন নাগেশ্বরী রায়গঞ্জ ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি মাইক্রোসফট অফিস ও কম্পিউটার গ্রাফিকস ডিজাইনে দক্ষ সে। আশার আলো পাঠশালার কম্পিউটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে ফাতেমা।

মাইক্রোসফট বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও লাওসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির জানান, আশার আলো পাঠশালার অংশীদার ইয়াং বাংলার আগ্রহে আমরা এই পাঠশালায় যাই। সেখানে ফাতেমা আমার সঙ্গে ইংরেজিতে এত সাবলীলভাবে কথা বলে যে মুগ্ধ হয়ে যাই।

তখন আশার আলো পাঠশালায় কম্পিউটার ল্যাব করে দেয় মাইক্রোসফট। ফাতেমাসহ অনেক মেয়েই শেখে তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেই মাইক্রোসফটের তত্ত্বাবধানে ফাতেমাকে নিয়ে তৈরি হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র। এরপরই তাকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ মনোনীত করা হয়।

উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করার প্রয়াস নিয়ে কুমার বিশ্বজিৎ বর্মণ স্থানীয় কিছু যুবককে নিয়ে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আশার আলো পাঠশালা।

একে//