ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ডায়মন্ড যার ক্ষতি তার!

প্রকাশিত : ০৩:১৬ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার

ডায়মন্ড মূল্যবার একটি ধাবত। এই ডায়মন্ড সবাই পেতে চায়। এছাড়া একটা বড় আকারের ডায়মন্ড নিজের কাছে থাকা মানে অর্থশালী হওয়া। তাইতো সবাই ডায়মন্ড সংগ্রহ করতে চায়। কিন্তু নীলরঙের একটি ডায়মন্ড যে পরিবারের কাছে গেছে সেই পরিবারেরই ক্ষতি করেছে। তেমননি একটিন ডায়মন্ডের খোঁজ পাওয়া গেছে।
সতেরো শতকে ফরাসি রত্ন ব্যবসায়ী জিন ব্যাপ্টিস্ট ট্যাভার্নিয়ার ভারতে এসে এক দেবীর মূর্তি থেকে ১১৫.১৬ ক্যারটের নীলরঙের একটি ডায়মন্ড চুরি করেন। আর রত্নটি সেই দেবীর চোখের জায়গায় লাগানো ছিল।

১৬৬৯ সালে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই এটি ট্যাভার্নিয়ারের কাছ থেকে কিনে নেন। ১৬৭৩ সালে তিনি একে আবার কাটানোর ব্যবস্থা করেন।

তখন এটি ‘দ্য ব্লু ডায়মন্ড অব দ্য ক্রাউন’ অথবা ‘ফ্রেঞ্চ ব্লু’ নামে পরিচিত ছিল। ৭২ বছর বয়সে গ্যাংগ্রিনে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

চতুর্দশ লুইয়ের রাজস্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রক ছিলেন নিকোলাস ফুকুয়েট। তিনি কিছু উৎসবে এ ডায়মন্ডটি নিজের শোভাবর্ধনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন।

এর কিছুদিন পরই রাজার সঙ্গে কিছু কারণে তার সম্পর্ক খারাপ হয় এবং তাকে ফ্রান্স থেকে নির্বাসন দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে রাজা এ শাস্তি পরিবর্তন করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পিগনেরল দুর্গে ফুকুয়েটকে ১৫ বছর বন্দি রাখা হয়।

পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার সূত্রে এ ডায়মন্ডটি পান রাজা ষোড়শ লুই। তার স্ত্রী মেরি অ্যান্টোইনেট এটি ব্যবহার করতেন। ফরাসি বিদ্রোহে দুজনেরই শিরশ্ছেদ করা হয়েছিল।

একসময় এ ডায়মন্ডটি যায় ইংল্যান্ডের লর্ড ফ্রান্সিস হোপের কাছে। তিনি আমেরিকার এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। দুজনেরই টাকা ওড়ানোর অভ্যাস ছিল।

ফলে একসময় তারা ডায়মন্ডটি বেচে দেন এবং পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য তাদের আরও ঘিরে ধরেছিল।

ডাচ রত্ন ব্যবসায়ী উইলহেলম ফলসের হাতে ডায়মন্ডটি পড়লে তিনি এটিকে আবারও কেটেছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজের ছেলের হাতে তিনি খুন হন। ছেলেটি নিজেও আত্মহত্যা করেছিল।

গ্রিক বণিক সাইমন মাওনকারিডস একবার ডায়মন্ডটির মালিক হয়েছিলেন। খাঁড়া পাহাড় থেকে গাড়িসহ পড়ে স্ত্রী, সন্তানসহ মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

নীল রঙের এ ডায়মন্ডটির সর্বশেষ মালিক ছিলেন আমেরিকার নাগরিক এভালিন ওয়ালশ ম্যাকলিন। ডায়মন্ডটি কেনার আগপর্যন্ত তার জীবন বেশ চমৎকারভাবেই কাটছিল।

ডায়মন্ডটি তিনি মাঝে মাঝেই গলায় ঝোলাতেন। এমনকি কখনও কখনও নিজের পোষা কুকুরের নেকলেসেও শোভা পেতো সেটি। এরপরই যেন তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।

প্রথমে মারা যান তার শাশুড়ি। এরপর মাত্র নয় বছর বয়সে মারা যায় তার ছেলে। পরবর্তী সময়ে আরেক নারীর আশায় তাকে ছেড়ে যান তার স্বামী। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত এক মানসিক হাসপাতালে মারা যান।
এরকম আরও কিছু ঘটনা পরে ঘটে ওই ডায়মন্ডের কারণে। অবশেষে ১৯৫৮ সাল থেকে ডায়মন্ডটি স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়ামেই রাখা হয়। এরপর থেকে রত্নটিকে ঘিরে আর কোনো দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি।

তথ্যসূত্র: মেন্টাল ফলস।
এসএইচ/