ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সংস্কার চান মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নারী কোটাধারীরাও

প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:২৯ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার

ওরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। পড়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে। তাদের কেউ ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে কোটা সুবিধা পেয়েছেন। তবে অনেকেই সেই সুবিধা নেননি। কোটা সুবিধাপ্রাপ্ত এসব লোকেরা এবার কোটা সংস্কারের দাবিতে যুক্ত হচ্ছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। কেউ সরাসরি আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন আবার কেউ কোটা সংস্কারের পক্ষে দাবি জানাচ্ছেন ফেসবুকে।

তাঁদেরই একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ছাত্র রামিম হাসান। ফেসবুক পোস্টে রামিম লিখেন, ‘আমার দাদা ৭১`এর শহীদ। আমার বাবা, বড় চাচা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। দুজন মিলে গুলি খেয়েছেন ছয়টি। ছোট চাচা গুলি খাননি, তবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। একাত্তরে দেশকে দিতে কিছু বাকি রাখেনি আমার পরিবার। আমি গর্ব করি, আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তবে আমি নৈতিকভাবে কোটা সংস্কারের পক্ষে, সম্ভব হলে বিলুপ্তিরও বিপক্ষে নই’।

এদিকে কোটা সংস্কারের পক্ষে দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান গোলাম রাব্বানিও। তিনি জানান, ‘কোটা প্রথার সংস্কারের জন্য আমিও দাবি জানাচ্ছি। যৌক্তিক একটি সমাধানের মাধ্যমে কোটা প্রথার সংস্কার জরুরি। আমার বাবা দেশকে স্বাধীন করতে নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেননি। তাই দাবি জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব কোটা প্রথা সংস্কারের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তি দিন’।

ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী ইফতেখার জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এ কোটা প্রথার দ্রুত সংস্কার জরুরি। জেলা কোটা, নারী কোটা, মুক্তিযুদ্ধ কোটা ও  উপজাতি কোটাসহ এত কোটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিছু যৌক্তিক কোটা রেখে বাকি কোটাগুলো দ্রুতই সংস্কার করা উচিত।

এদিকে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থী সোনিয়া সোনি জানান, নারীকোটা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সরকারি চাকুরি করতে চাই না। মেধা ও যোগ্যতা দেখিয়ে চাকুরি করতে চাই। তাই বিসিএসসহ সরকারি সব চাকুরিতে কোটা ব্যবস্থার বিলুপ্তির দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে কেবল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাই নন, আন্দোলনে নেমেছেন কোটাসুবিধা ভোগকরা নারী শিক্ষার্থীরাও। গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন নারী শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দাবি, ‘কোটা দিয়ে কামলা নয়, মেধা দিয়ে আমলা চাই’। এমনই এক নারী শিক্ষার্থী তানিয়া হক। তিনি বলেন, আমরা কোটার বিনিময়ে বিশেষ সুবিধা চাই না। এ সুবিধা আমাদের মর্যাদা বাড়ায়নি, বরং গোটা নারী সমাজকে আরও ছোট করেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞানের ছাত্রী নুসরাত জাহান বলেন, যেহেতু মেয়েরা এখন অনেক বেশি পড়াশোনা করছে, তাই তারা চাচ্ছে না যে সময়, শ্রম আর মেধার বিনিয়োগ এতদিন ধরে তারা করেছে সেটা বৃথা যাক। কিন্তু এমন নয় যে তারা ছেলেদের থেকে এগিয়ে যেতে চায়। মেয়েরা তাদের মেধার স্বীকৃতিটা চাইছে।

 এমজে/