ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

যে কারণে মনোনয়ন পাননি মনি

প্রকাশিত : ০৭:০৭ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৮ বৃহস্পতিবার

গত নির্বাচনে এক লাখ ৮০ হাজার ভোট পেয়ে খুলনার মেয়র নির্বাচিত হন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। বিগত সিটি নির্বাচনে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন তিনি। বর্তমান মেয়র হিসেবে তিনি এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন- এমনটাই আশা করেছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের একাংশ ও মনির সমর্থকরা। প্রার্থী হিসেবে নগর বিএনপির পক্ষ থেকে তার একক নামই কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে মনোনয়ন দেয় নি। মনোনয়ন দিয়েছে নগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে।

গত দু`দিনে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, সুশীল সমাজ ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান মেয়র। এগুলো হচ্ছে- দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব, মনির চেয়ে খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর জনপ্রিয়তা বেশি হওয়া এবং খুলনা সিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়ায় নগরবাসীর নেতিবাচক মনোভাব।

নেতাকর্মীরা জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পরই মেয়রের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাদের। পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স, ড্রেন ও রাস্তা

সংস্কারসহ যেকোনো বিষয়ে কর্মীরা মেয়রের কাছে গেলে তিনি সমাধান দিতেন না। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তিনি পরিচিত পেয়েছেন `বিধি মোতাবেক মেয়র` হিসেবে। নগরীর অধিকাংশ সচেতন মানুষই এটা জানেন।

এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে প্রায় তিন মাস মেয়র খুলনায় ছিলেন না। নেতাকর্মীদের আরেকটা বড় ক্ষোভের কারণ গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবরণের দিনও তিনি কোনো দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেননি। উল্টো হাসিমুখে বেলুন উড়িয়ে নগরীর সবুরণনেছা বিদ্যালয়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। ফেসবুকে ছবিটি ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন মেয়র। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধান না করায় তার প্রতি সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বাড়ছিল।

এদিকে খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে মেয়র মনিরুজ্জামান মনির চেয়ে নগরের সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর জনপ্রিয়তা বেশি। কেন্দ্রীয় বিএনপির একাধিক জরিপে এটিই উঠে এসেছে। তৃণমূল নেতারাও মঞ্জুর বিষয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ।

এছাড়া গত নির্বাচনে মঞ্জু মনিকে মেয়র নির্বাচিত করতে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করেন। মেয়র মনিও বিষয়টি অস্বীকার করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাবনা অন্তত সেই কৃতজ্ঞতা থেকেও মেয়র মনি এবার মঞ্জুর পক্ষে কাজ করে তাকে বিজয়ী করতে চেষ্টা করবেন।

অন্যদিকে এবার খুলনায় মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনা। তিনি মঞ্জুকে ছাড় দিতে চাইলেও মনিকে ছাড় দিতে চান নি। মূলত খুলনায় মঞ্জুর সর্বজনীন জনপ্রিয়তাই মনিকে বঞ্চিত করেছে।

কেন্দ্রীয় বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় মেয়র পদে কেন্দ্রের প্রথম পছন্দ ছিলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। যদিও মঞ্জু শুরু থেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন না। তিনি মনিকে দিয়ে নির্বাচন করাতে চেয়েছিলেন। মনোনয়ন ঘোষণার দিন তারেক রহমান মঞ্জুকে নির্বাচন করতে বলেন। এরপর মঞ্জু নির্বাচন করতে রাজি হন।  

এসব বিষয়ে মনিরুজ্জামান মনি বলেন, দল যা ভালো মনে করেছে, সেটা করেছে। এ বিষয়ে তার বলার কিছু নেই। আর উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ বা সময় দিয়ে এগুলো বিচার করা যায় না।

অবশ্য মেয়রের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি ও এবারের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি বলেন, নির্বাচিত মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার পরেই তার পদমর্যাদা খাটো করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় প্রশাসন ব্যবস্থার কারণে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। মঞ্জু বলেন, মনিরুজ্জামান মনির বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও কর্মীদের কথা না শোনার অভিযোগ থাকতে পারে; কিন্তু তার সততার বিষয়ে নগরবাসীর মধ্যে কোনো প্রশ্ন নেই। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সৎ মানুষ হিসেবে তার জনপ্রিয়তা ছিল এবং আছে। কিন্তু দল মনে করছে, নির্বাচন আমার করা উচিত। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। এটার সঙ্গে জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার সম্পর্ক নেই।
/ এআর /