ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

কোটা সংস্কার ও চাকরিতে প্রবেশের বয়স

শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া উচিত : এমএম আকাশ

প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৭:২৩ পিএম, ৯ মে ২০১৮ বুধবার

বিসিএসসহ সরকারি সব ধরণের চাকরিতে প্রচলিত কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হয়েছে। ছাত্রদের টানা আন্দোলনের একপর্যায়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাদ দেওয়ার কথা বলেছেন। যার কারণে ছাত্ররা আন্দোলন স্থগিত করে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হলেও কোটা বাতিলের ব্যাপারে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। কবে প্রজ্ঞাপন জারি হবে সেটি নিয়েও স্পষ্ট কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে। আশা-নিরাশার দোলাচলে কাটছে চাকরি প্রত্যাশীদের সময়।

এদিকে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। কাল বুধবার দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।   

এ পরিস্থিতিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের গতিপ্রকৃতিসহ সামগ্রিক বিষয়, প্রশ্নফাঁস, পরীক্ষা পদ্ধতি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা, কোচিং বাণিজ্য, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল মোকাদ্দেমের (এম এম আকাশ)।

তিনি মনে করেন, কোটা সংস্কার ও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন অবশ্যই এটি কার‌্যকর হবে। তবে কিছু জটিলতার কারণে একটু সময় লাগছে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।

একুশে টিভি অনলাইন : প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণার প্রায় এক মাস হতে চলল। এখনও কোটা বাতিলে প্রজ্ঞাপন জারি হচ্ছে না, এর কারণ কী বলে মনে করছেন?

এম এম আকাশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন চাকরিতে কোনো কোটা থাকবে না। কিন্তু আদিবাসী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় নিয়োগ দেওয়া হবে। এ বিশেষ ব্যবস্থা আগে নির্ধারণ করতে হবে। তারপর নিয়োগ প্রক্রিয়া কোন ধরণের হবে সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে। এরপর কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এজন্যই হয়তো একটু সময় লাগছে। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোটা বাতিলের ঘোষণা একবার দিয়েছেন, অবশ্যই কোটা বাতিল হবে। কিন্তু কিছু কারণে একটু সময় লাগছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে।

একুশে টিভি অনলাইন : কোটা সংস্কার আন্দোলেন জড়িত থাকার কারণে গভীর রাতে হল থেকে তিন শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোটা  সংস্কার আন্দোলনের নেতাদেরকেও হয়রানির অভিযোগ উঠছে।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

এম এম আকাশ: শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ভূমিকা শিক্ষার্থীবান্ধব ছিল না। এ ধরনের সংকটের ক্ষেত্রে প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে বা ঐতিহ্যগতভাবে যে ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে সেই রকমটা এখনও দেখছি না। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসন শুধু প্রশাসকই নয়, শিক্ষকও বটে। শিক্ষকসুলভ আচরণ, শিক্ষকসুলভ আলোচনা বা কথাবার্তার প্রয়োজন ছিল সেগুলোর প্রচণ্ড ঘাটতি রয়েছে। সে ঘাটতির কারণেই শিক্ষকদের ওপর শিক্ষার্থীদের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সুফিয়া কামাল হলে যে ঘটনা ঘটেছে তার প্রেক্ষিতে প্রভোস্টের ভূমিকা ছিল খুবই অনভিপ্রেত এবং অশিক্ষক সুলভ না। এ সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। এখানে দূরদর্শিতা এবং শিক্ষকসুলভ আচরণ খুবই প্রয়োজন।

কেন গভীর রাতে হল থেকে তিন শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হলো? এটি অবশ্যই বাংলাদেশের মূল্যবোধের পরিপন্থী। এটা আমাদের দেশের জন্য কাম্য না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও শোভনীয় নয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের এক ধরনের বোধের যে প্রকাশ সেটা শুধু কোটা সংস্কারের অবস্থান না। আমাদের আবাসিক হলগুলোতে যেরকম মিনি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পাস তৈরি করে রাখা হয়েছে, হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মতো। যেখানে একজন শিক্ষার্থীর ন্যূনতম পরিবেশ দরকার পড়াশোনার জন্য, তার সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সেটা আমরা আবাসিক শিক্ষকরা নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে হলগুলোর অব্যবস্থাপনাও শিক্ষার্থীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তার প্রকাশটাও কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘটেছে। বিশেষ করে হলের দায়িত্বে থাকা প্রভোস্ট বেশির ভাগ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শিক্ষার্থী যদি কোনো ভুল করে থাকে বা অসৎ আচরণ করে থাকে তাহলে যে অনুযায়ী বা সেই মাত্রা হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়া ছাত্রীদের বের করে দেওয়া উচিত হয়নি। এটা বাংলাদেশের মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না। এটা আমেরিকার বা অন্য দেশে হলো হয়তো কিছু না হতো তাদের সংস্কৃতি আলাদা। কিন্তু এটা বাংলাদেশের জন্য এটা বড় ব্যাপার। শিক্ষার্থীরা যে অপরাধ  করুক বা করুন রাত শেষে তার বিচার করতে পারত প্রশাসন।

একুশে টিভি অনলাইন : শিক্ষার্থীদের একাংশ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো আন্দোলন করে যাচ্ছে। আপনি এটা কিভাবে দেখছেন। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক কি না?

এম এম আকাশ : চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির জন্য যে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা এর অবশ্যই যৌক্তিকতা রয়েছে। সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলো একে একে মেনে নেওয়া। বয়স নির্ধারণ করা হয় কর্মক্ষেত্রে শারিরীক দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জন্য। কিন্তু আমরা তো চাকতি-ই দিতে পারছি না। যেহেতু কর্মসংস্থান দিতে পারছি না, সেখানে বয়সের বাধ্যবাধকতা থাকাটা অযৌক্তিক। যারা আন্দোলন করছেন, তাদের দাবি যুক্তিসঙ্গত। চাকরি পাবে কী পাবে না সেটা নিয়োগ পরীক্ষায় নির্ধারিত হবে। কিন্তু সে আবেদন করার অধিকার রাখে।

একুশে টিভি অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ।

এম এম  আকাশ: একুশে পরিবারকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।

 টিআর / এআর