ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মায়ের স্বপ্ন: সৈয়দ নুরুলইসলাম   

প্রকাশিত : ১১:৩২ পিএম, ১৪ মে ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:০২ এএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সম্ভবত: ১৯৭৭ সাল। আমার মেট্রিক পরীক্ষার বছর। অভাব অনটনের সংসার। দুবাই ফেরত ছোট মামার সাথে মায়ের কোন এক বিকেলে রান্না ঘরে বসে আলাপচারিতার কিছু কিছু শব্দ পাশের ঘরের মাটির দেয়ালের ফাঁক গলে আমার কানে আসছিল। ছোট মামার মুখে মেঝ ছেলের প্রসঙ্গ শুনে কান খাড়া করতেই শুনতে পেলাম, মামা বলছেন `বুবু তোমার ১০ ছেলে মেয়ের এই অভাবের সংসারে তোমার মেঝ ছেলেকে দুবাই পাঠিয়ে দাও। বড় ছেলের একার পক্ষে এতবড় সংসারের বোঝা টানা সম্ভব হবেনা`।     

মা উত্তরে মামা কে বলেছিলেন, না ভাই, আমি আমার ছেলেকে দুবাই পাঠাবোনা। আমার বড় ছেলে এম.কম পাশ করেছে। মেঝ ছেলেকেও আমি এম.কম পাশ করাবো। তাহলে আমার বাকি চার ছেলে এম.কম পাশ করবে। প্রয়োজনে আমি তার বাবার জমি বিক্রি করে তাকে এম.কম পাশ করাবো। মামা হতাশ হয়ে বললেন, ভালোভাবে চিন্তা করে দেখ। আমি দুবাই ফিরে গিয়ে ভিসার ব্যবস্থা করবো। মা আবারও মামাকে বলল, না ভাই, আমার ছেলে এম.কম পাশ করে একদিন দুবাইতে বেড়াতে যাবে। টাকা কামাতে না!!তুমি দোওয়া করো।

মা তোমার সেই দিনের সাহসী সিদ্ধান্ত শুধু আমাকে না, তোমার ৬ ছেলেকে আজ মহান আাল্লাহ পাক কতদূর নিয়ে এসেছে। আমরা সবাই তোমার স্বপ্নের এম.কম পাশ। তোমার নাতি নাতনিরা আজ বিলাত বা আমেরিকায় পড়ালেখা করে- কেউ দেশে ফিরেছে, কেউ দেশে ফেরার অপেক্ষায়। তোমার ছেলে মেয়েরা আজ সত্যি সত্যি দুবাই সহ দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ায়।

আশির দশকে তোমার যে ছেলে স্বপ্ন দেখেছিল ফ্রিজ টেলিভিশনের মেকানিক হয়ে দুবাই গিয়ে সংসারের হাল ধরবে। সেই ছেলে তোমার সেইদিনের এক সাহসী সিদ্ধান্তের উপর দাঁড়িয়ে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ঠিকানা ওয়েল গ্রুপের পতাকা হাতে বাকি ৫ ভাইয়ের হাত ধরে আজ পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়।

মা, আমার কাছে প্রতিটা দিন মায়ের দিন। প্রতিটা দিন মা দিবস।

ঘুম থেকে উঠে তোমার সঙ্গে ফোনে কথা না বলে ঢাকায় আমার দিন শুরু হয়না। তারপরও আজ বিশ্বব্যাপী সব ছেলে মেয়েরা মায়ের কথা ভাবছে। তাই আমিও তোমাকে নিয়ে আজ আলাদা করে ভাবছি।

মা দিবসে তোমার প্রতি আমার অনেক অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা। আমার জীবনজুড়ে তুমি, তুমিই আমার জীবন, তুমিই আমার প্রান। তুমিই আমার ঠিকানা। (ফেসবুক থেকে নেওয়া)

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ওয়েল গ্রুপ।

এসি