ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

চিকিৎসক ও জনবল সঙ্কটে ধুঁকছে কুর্মিটোলা হাসপাতাল

আলী আদনান

প্রকাশিত : ০৫:১৮ পিএম, ৬ জুন ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০১:০২ পিএম, ৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা সেনানিবাসের আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের পাশে এবং হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু-এর বিপরিতে চমৎকার দৃষ্টিনন্দন কাচঘেরা দুটি ভবন। পাশাপাশি দাঁড়ানো ১২ তলার ভবন দুটি দেখে বাইরে অপরিচিত কারো বোঝার জো নেই যে, এগুলো হাসপাতাল ভবন। সবুজ কাচে ঘেরা এই হাসপাতালের নাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল।

২০১২ সালের ১৩ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলোর চেয়ে এর বিশেষত্ব হচ্ছে- হাসপাতালের পরিবেশ নির্মল। অন্যান্য হাসপাতালগুলোর মতো ঘিনঝি নয়, খোলামেলা বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। রোগীর চাপও মাত্রাতিরিক্ত না হওয়ায় রোগী ও তার অ্যাটেনডেন্টদের দুর্ভোগ পোহাতে হয় না। মাত্র ১০ টাকার টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃংখলভাবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর সুযোগ মেলে রোগীদের। আর ভর্তি হতে লাগে মাত্র ১৫ টাকা। পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যায়ও কম। অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ও চিকিৎসা সরঞ্জামে সুসজ্জিত এই হাসপাতালে কম খরচেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা সবার জন্য। এ নিয়ে রোগীরা বেশ সন্তুষ্ট।

তবে হাসপাতালটির তিনটি বড় সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। প্রথমত : জনবল, দ্বিতীয়ত: অবস্থান বা যোগাযোগ। তৃতীয়ত : সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও ফ্রি ওষুধের সীমাবদ্ধতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভালো সেবা দেওয়ার জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য জনবল থাকা প্রয়োজন, তা না থাকায় ধুঁকছে হাসপাতালটি। মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল দিয়ে এখানে সেবা কার্যক্রম চলছে। কষ্ট করে হলেও চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বনানী, কাকলী পেরিয়ে জিয়া কলোনি বা এমইএস বাসস্ট্যান্ড এবং বিশ্বরোডের মাঝামাঝি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অবস্থান। এ দুটি বাসস্টপ ছাড়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে বাসস্টপেজ তৈরি করা হলেও সেখানে বাস থামছে না । সে কারণে হাসপাতালে আসা যাত্রীদের এই দুটি বাস স্ট্যান্ডে নামতে হয়। হেটে হাসপাতালে আসতে হয়।
দূরত্ব হিসাব করে দেখা যায়, জিয়া কলোনি থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় পৌনে ১ কিলোমিটার। আবার জোয়ার সাহারা থেকে দূরত্ব ১ কিলোমিটারের বেশি। এখন কোনো রোগীকে হাসপাতালে আসতে হলে হেঁটেই আসতে হয়। এই পথটুকু পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে আসতে চাইলে বিকল্প যানবাহনের কোনো ব্যবস্থা নেই।
আবার, হাসপাতালটির বিপরীত দিক অর্থাৎ গাজীপুর, টঙ্গী, এয়ারপোর্ট উত্তরা, কুড়িল হতে হাসপাতালটিতে আসতে চাইলে অনুরূপভাবে হাসপাতালের অবস্থানের উল্টোদিকের জোয়ার সাহারা অথবা জিয়া কলোনির বাসস্টপে রোগীদের নামতে হয়। জোয়ার সাহারা বাসস্টপে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও জিয়া কলোনি তথা হাসপাতালের সামনে কোনো ফুটওভারব্রিজ নেই। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের রাস্তা পার হতে হয়।

রোগীরা যা বললেন
ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন হওয়ায় কুর্মিটোলা হাসপাতালটি সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য তৈরি হাসপাতাল মনে করে সাধারণ মানুষ এটি এড়িয়ে যেত। তবে, এ চিত্র বদলে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি। লোকমুখে শুনে এখন অনেকেই সেবা নিতে হাসপাতালটিতে আসছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আবুল মনছুরের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি এসেছেন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলা থেকে। এ বছরের ২৬ মে তিনি তার স্ত্রীকে এ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এত দূর থেকে কেন এখানে আসা- এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল মনছুর জানান, তার স্ত্রীর মেয়েলি একটা সমস্যা আছে। জেলা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছেন। তারা সবাই ঢাকায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। তার আত্মীয়স্বজন টঙ্গীতে থাকে। তাদের কাছ থেকে এই হাসপাতালটির নাম শুনে এসেছেন। এখানকার ডাক্তাররা পরীক্ষা করে রোগী ভর্তি করেছেন। সিট পেতে কোন সমস্যা হয়নি। ডাক্তার অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২-৩ দিনের মধ্যে অপারেশন করবেন। আবুল মনছুর হাসপাতালের সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সামনে টিকিট নিয়ে দাঁড়ানো মাত্র মোক্তাদির বিল্লাহ ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন। ডাক্তার দেখিয়ে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘লাইন ধরতে হয়নি। লোকের চাপ কম বিধায় খুব সহজেই ডাক্তার দেখাতে পেরেছি।’
হাসপাতালটির নিচতলায় ওষুধ বিতরণের কাউন্টার থেকে ওষুধ নিয়ে ফেরার মুহূর্তে কথা  হয় মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তিনি এসেছেন রামপুরা থেকে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এখানে আসার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়েছেন। আমাকে ২ সপ্তাহ ওষুধ খাওয়ার জন্য বলেছেন। হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে তিন দিনের ওষুধ দিয়েছে। বলেছেন, তিন দিন পর এসে ফের ওষুধ নিতে। মনোয়ারা বেগমের মতো আরও কয়েকজন রোগি এ প্রতিবেদকে জানান, সরকারি যে ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয় তা মাত্র তিন দিনের জন্য। এই ওষুধ পেতে হলে আবার এখানে আসা লাগবে এটি একটি বড় সমস্যা। এছাড়া পর্যাপ্ত ফ্রি ওষুধও নেই।

দিন দিন বাড়ছে রোগীর চাপ

সাধারণ মানুষের সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১২ সালের ১৩ মে যাত্রা শুরু করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। শুরুর অল্প দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। তবে এখন চাপ যেন বেড়েই চলছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৫ মে বহির্বিভাগে ১৮২৬ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। আর ইনডোরে ১২ জুন সর্বোচ্চ ২৭৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। গত বছরের প্রথম ৫ মাসে জটিল অপারেশন হয়েছে ৫৪০ জনের। আর সাধারণ অস্ত্রোপচার হয়েছে ৩১৮ জনের। সেই হিসাবে রোজ ৬টি জটিল অস্ত্রোপচার আর চক্ষুসহ ৮টি সাধারণ অপারেশন হয় হাসপাতালটিতে। বিশেষ করে সার্জারি বিভাগে গত জুন মাসে জটিল ৭টি, সাধারণ ৪২টি আবার একই মাসে গাইনি ও প্রসূতি বিভাগে জটিল ১২টিসহ নাক-কান-গলা বিভাগে জটিল ৭টি ও আর্থো-সার্জারি বিভাগে জটিল ১০টি, সাধারণ ১টি, এমনকি মে মাসে চক্ষু বিভাগে জটিল ৪৬টি অস্ত্রোপচার হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে হাসপাতালটির আয় হয় ১৭ লাখ ২০ হাজার ৪৫০ টাকা আয় হয়। এই টাকা প্যাথলজি, এক্সরে, আলট্রাসনো, ওপিজি, সিটি স্ক্যান, এন্ডোস্কপি, ইসিজি, ওপিডি, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবা থেকে এসেছে। বর্তমানে রোজ গড়ে প্রায় তিন হাজারের মতো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে ভর্তি হচ্ছেন প্রায় সাড়ে ৩০০ রোগী।

নানা সঙ্কটে ধুঁকছে
দেশের অন্য অনেক হাসপাতালের মতোই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকারি এ হাসপাতাল। এখনও অনেক বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব বিভাগেই লোকবল সংকট রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান নিজেও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে তিনি বলেন, লোকবল ও বাজেট সংকটের কারণে হাসপাতালটি পরিপূ্র্ণভাবে সেবা দিতে পারছে না। মেডিকেল কলেজ অধিভুক্ত না থাকায় হাসপাতালটিতে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের কোনো পোস্ট নেই। ফলে অনেক রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না এখানে।

জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৩৯৬ জন কর্মরত রয়েছেন হাসপাতালটিতে। চিকিৎসক হিসেবে নিয়োজিত আছেন ১০২ জন। সার্বিক তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭ জন নার্স। শিক্ষানবিশ বা ইন্টার্নি চিকিৎসক ও জুনিয়র নার্সরা সেবার কাজে ভূমিকা রাখছেন। ৫০০ বেডবিশিষ্ট এ হাসপাতালে বিশেষ রোগীদের জন্যও রয়েছে ১২টি কেবিনের ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রাপরবর্তী সময়ে রোগীর ভিড় খুব বেশি না থাকলেও এখন তা কয়েক গুণ বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল দিয়ে এখানে সেবা কার্যক্রম চলছে। আরও ৫৭০ জন জনবল চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। এই চাহিদা পূরণ হলে চিকিৎসা সেবার মান বাড়বে।

যেসব সেবা পাওয়া যায়
জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে হাসপাতালটিতে মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, গাইনি অ্যান্ড অবস, চর্ম ও যৌন, নাক-কান-গলা, চক্ষু ও ডেন্টাল বিভাগ চালু আছে। পাশাপাশি বার্ন ইউনিট, সোয়াইন ফ্লু ও ইবোলা ইউনিটও খোলা হয়েছে। এছাড়া নিউরো সার্জারি, কার্ডিয়াক সার্জারি, ইউরোলজি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি, মনোরোগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন, এনআইসিইউ, ডায়ালাইসিস আর ব্লাড ব্যাংক। রয়েছে টিবি ডটস কর্নার, টিকাদান কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগও।

গরীব-মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

সিটি স্ক্যান, আলট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোসকপি, এমআরআই, এক্সরে, রক্তের বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করার সুবিধা রয়েছে হাসপাতালটিতে। হাসপাতালটির নিচতলার বেজমেন্টে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে উন্নত মেশিন দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষার সুবিধা আছে। ঢাকা শহরের সরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে পরীক্ষা করার জন্য যে চার্জ নেওয়া হয়, এখানেও একই চার্জ প্রযোজ্য। তবে গরিব ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে পরীক্ষা করা হয়। এখানকার চিকিৎসা সরঞ্জামাদিও ভালো মানের।

নির্মল পরিবেশ
১২ তলার এই হাসপাতালটি ৫০০ বেডের। এটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট হচ্ছে নির্মল পরিবেশ। ফাঁকা জায়গায় হওয়ায় প্রচুর আলো বাতাস পাওয়া যায়। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সুবিধা বিদ্যমান এবং আইসিইউ এবং সিসিইউ ব্যবস্থাও রয়েছে। বেজমেন্টে ২ তলা। হাসপাতালটিতে লিফট রয়েছে ৭টি। ৫৬টি কেবিন, ২টি ভিআইপি কেবিন আছে। শিশু ওয়ার্ডের পাশে শিশুদের অত্যাধুনিক খেলার রুম, রোগী এবং চিকিৎসকদের জন্য দুটি বিশাল ক্যাফেটেরিয়া, বসার জায়গাসহ অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। রোগী বহনের জন্য ২টি এম্বুলেন্স আছে। হাসপাতালে লাশ রাখার ফ্রিজের ব্যবস্থাও রয়েছে। পুরো হাসপাতালটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

মুখোমুখি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার সাইদুর রহমান একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, সব ধরণের রোগী আমাদের এখানে আসছেন। হাসপাতালে আসা-যাওয়া অনেকটাই নির্ভর করে হাসপাতালটির অবস্থান, রোগীদের আসা-যাওয়ার সুযোগ সুবিধার ওপর। আমি স্বীকার করে নিচ্ছি এই হাসপাতালে রোগী আসা-যাওয়ায় কিছুটা অসুবিধা হয়। বিশেষ করে কুড়িল, বাড্ডা থেকে যারা আসেন, তাদের রাস্তার ওপারে অর্থাৎ আমাদের হাসপাতালের বিপরীত দিকে নামতে হয়। হাসপাতালটির সামনে ফুটওভার ব্রিজ না থাকার কারণে রোগীদের আসায় অসুবিধা হচ্ছে। আর মহাখালী থেকে যারা আসেন, তাদের জিয়া কলোনিতে নামতে হয়। তারপর হেঁটে আসতে হয়। সেনাবাহিনীর এলাকা বলে কিছু বিধিনিষেধও রয়েছে। ফলে অনেকটা পথ তাদের হেঁটে আসতে হচ্ছে। শীতের সময়টায় অসুবিধা কম হলেও গরমের সময়টায় রোঁদে ঘেমে একাকার আবার কখনো বৃষ্টিতে ভিজে আসতে হয়। এসব বাধা সত্ত্বেও হাসপাতালের সেবা এবং পরিবেশ ভালো থাকায় রোজ প্রায় ৩ হাজার রোগী আসছে।

তিনি আরও বলেন, বেশি রোগী এলেও আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হবে। ঠিকমতো সেবা দিতে পারব না। কারণটা হলো, সেবা দিতে আমার চিকিৎসক ও নার্সসহ যে লোকবল প্রয়োজন তা আমাদের নেই। লোকবল সংকট নিরসনের উদ্যোগ কতটুকু-এমন প্রশ্নের জবাবে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকেই জানিয়েছি। ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী কয়েকবার এসেছেন। মন্ত্রী হাসপাতালটির জন্য অত্যন্ত আন্তরিক। লোকবল সংকটের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। যা বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কী কী অপারেশন হয় জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে জটিল সার্জারি সপ্তাহে ৬ দিনই হচ্ছে। এরমধ্যে আবার জটিল রুটিন অপারেশনগুলো হচ্ছে। ট্রেনিং পোস্ট এবং ইন্টার্নি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ চালু না করতে পারায় হাসপাতালটি পূর্ণোদ্যমে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম করা যাচ্ছে না। এসময় তিনি বলেন, আমার এখানে সর্বোচ্চ ডাক্তার হলো জুনিয়র কনসালটেন্ট। তারপরও আমি বলব তারা সপ্তাহের ৬ দিনই মেজর অপারেশনগুলোই করছে। সপ্তাহের ৬ দিনে ৬টি করে ৬টি বিষয়ে সপ্তাহে ৩৬টি অপারেশন চলছে। এই ৩৬টি অপারেশনে সহায়তা করছেন মাত্র ২ জন এনেসথেসিস্ট। এর মধ্যে যদি ১ জন এনেসথেসিস্ট নৈমিত্তিক ছুটিতে যায় অথবা একজন অসুস্থ হয়ে পড়লে আর একজন থাকেন। এই একজনকেই চাপ নিতে হচ্ছে। সুতরাং তারা প্রকৃতই অনেক চাপ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান জানান, হাসপাতালটিতে বার্ন ইউনিটও রয়েছে। বার্ন ইউনিটের জন্য দরকার এনেসথেসিস্টের। শিশুরোগের জন্য এনআইসিইউর সব যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু এনেসথেসিস্টের অভাবে সেগুলো কাজে লাগানো যাচ্ছে না। জনবল ও বাজেট ঘাটতি পূরণ হলে কুর্মিটোলা হাসপাতাল মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন পরিচালক।

/ এআর /