ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঈদের বাজারে ভারতীয় পোশাকের অাধিপত্য

অালী অাদনান

প্রকাশিত : ০৭:৪৩ পিএম, ৭ জুন ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও জমে উঠেছে ঈদ বাজার। রমজানের শুরু থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন শপিং সেন্টার ও মার্কেটগুলোতে ক্রেতা সমাগম থাকলেও এখন ঈদ বাজার হয়ে উঠেছে বেশ সরগরম। যদিও বিক্রেতারা বলছেন অন্যান্য বছরের মতো এবার বেচাকেনা প্রত্যাশিত হচ্ছে না, তথাপি তাদেরকে বেশ ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। ক্রেতাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে শপিং সেন্টারগুলো খোলা থাকছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।

অাজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর নিউমার্কেট ও তার অাশে পাশের মার্কেটগুলোতে ভিড় থাকতে দেখা যায়। তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় দুপুর ১২টার মধ্যেই মার্কেটগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।

নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোতে বেশিরভাগ দোকানে ঝুলছে ভারতীয়, পাকিস্তানি সালোয়ার-কামিজ। ভারতীয় সিরিয়ালের চরিত্রের নামে এগুলোর দেওয়া হয়েছে বাহারি নাম। মার্কেটগুলোতে শাড়ির বেশিরভাগই হয় ইন্ডিয়ান কাতান নয়তো, পাকিস্তানি সিল্ক। আছে লেহেঙ্গা ও টপসসহ অন্যান্য পোশাকও। পিছিয়ে নেই পুরুষরাও। তাদের পোশাকে প্রাধান্য পাচ্ছে থাইল্যান্ড, জাপান ও চীন থেকে আসা সব পণ্য। তবে পুরুষদের পাঞ্জাবিতেও প্রতিবেশী দেশের প্রভাব চোখে পড়ার মতো।

সিদ্ধেশ্বরী থেকে সপরিবারে গাউছিয়া মার্কেটে শপিং করতে আসেন রোমানা অাযমী। তিনি বললেন, ‘আজ দুই বাচ্চার জন্য ঈদের পোশাক কিনতে এসেছি। এখানে এলে সবার জন্য সবকিছু কেনাকাটা একসঙ্গে করা যায়। এ ছাড় একই এলাকায় হাতের নাগালে অনেক কিছু পাওয়ার সুবিধা থাকায় ঘুরেফিরেই এ মার্কেটে আসি। তবে বিক্রেতারা ঈদ পোশাকের দাম একটু বেশি হাঁকলেও দরদাম করে কিনতে পারলে ক্রয়মূল্য সামর্থ্যের মধ্যে রয়েছে বলে জানান তিনি।
রাজধানীর নিউমার্কেটে তিল ধারনের ঠাঁই নেই। বুঝা যায়, এখনো অসংখ্য মার্কেট বা বিপনী বিতানের ভিড়ে নিউমার্কেটই সেরা। উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত সবাই কেনাকাটা করছেন সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে।

নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে বুঝা যায় ক্রেতাদের মধ্যে নারী ও শিশুদের অাধিক্য বেশি। দোকানিরা জানালেন রোজার শুরু থেকেই এখানে ক্রেতা আসতে থাকে। অন্যান্য মার্কেটের চেয়ে বিক্রিও হয় ভালো। তবে মধ্য রোজার পরে ক্রেতা সামাল দিতে বেগ পেতে হয় বিক্রেতাদের।
♦পোশাকে ভারতীয় অাধিপত্য

বিক্রেতারা জানান, বরাবরের মতো এবারো শিশু ও মেয়েদের পোশাকে ভারতীয় ছাপ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলোর চাহিদাও অনেক বেশি। ঝিলিক, আশিকি-২, রেশম কা জরি, শের খান, মন মানে না, ও মাই গড, মেনে পেয়ার কিয়া, আয়শা টাকিয়া, বিপুল, বিশাল, সোনিয়া, সানি লিওন, গঙ্গা এমনসব বাহারি নামের থ্রিপিসে ছেয়ে গেছে নিউমার্কেটের প্রতিটি দোকান। এসব পোশাক পাওয়া যাবে তিন হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে।

নিউমার্কেটের যে কোনো শাড়ির দোকানে গেলে দেখা যাবে ক্রেতার সামনে যে শাড়িগুলো তুলে ধরা হচ্ছে তার প্রায় সবগুলোই ভারতীয় শাড়ি। বাংলাদেশের বেনারসি কিংবা জামদানি শাড়ির সুনাম থাকলেও ঈদের বাজারে ক্রেতারা ঝুকছেন বিচিত্র নাম আর বাহারি ডিজাইনের ভারতীয় শাড়ির দিকে। প্রায় প্রতিটি দোকানে এক হাজার থেকে এক লাখ টাকা দামে হাজারো নকশার হাজারো ভারতীয় শাড়ি রয়েছে। রহিমা অাক্তার নামে এক ক্রেতা একুশে টেলিভিশন অনলাইনের কাছে অভিযোগ করলেন, বাংলাদেশের থ্রিপিস ও শাড়ির নকশায় বৈচিত্র্য কম।
ডিজাইনেও তেমন কোন নতুনত্ব নেই।

♦ কেমন পছন্দ ক্রেতাদের
ম্যাচিং সেন্টারের বিক্রয়কর্মী শাহনেওয়াজ জানান, এবার ঈদের কাপড়ের মূল আকর্ষণ লেইস লাগানো কাপড়। এছাড়া বিভিন্ন কারুকাজ করা সুতি, সিনথেটিক, ভারতীয় জরিসহ লিলেনের মাঝে পাড় লাগানো কাপড় বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। এছাড়া রয়েছে এম্ব্রয়ডারি করা কাপড়। পিওর জর্জেট, চিনন জর্জেট, সুইট হার্ট ও মসলিনের মাঝে ছোট চুমকির কাজ করা ভারতীয় কাপড়গুলো বেশ পছন্দ করছেন ক্রেতারা। আবার আছে ছোট ও বড় ফুলের প্রিন্টের চায়না ডিজিটাল লিলেন কাপড়। এসবের দাম প্রতি গজে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা।

তরুণদের জন্য রেডিমেইড জিন্স ও গাবার্ডিং কাপড়ের প্যান্ট বেশি চলছে। আর এ জন্য নিউমার্কেটে আছে রেভলন, ক্র্যাফট ক্যাসলের মতো অত্যাধুনিক সব শোরুম। ঈদ বাজারে তরুণদের জন্য রঙিন পাঞ্জাবি, নানা ধরনের ফরমাল ও ক্যাজুয়াল শার্ট, পোলো শার্ট বিক্রি হচ্ছে। এসব পোশাকের দাম ৩২০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও এখানে পাওয়া যাচ্ছে প্রিন্ট শার্ট, ডেনিম, সিঙ্গেল অাইটেম ও টপস।

♦নিউমার্কেটে অাসছেন ঢাকার বাইরের ক্রেতা
শুধু রাজধানীবাসীই নয় বরং ঢাকার বাইরে থেকেও ক্রেতারা অাসছেন নিউমার্কেটে। সাভার থেকে এসেছেন ফৌজিয়া সুলতানা। পেশায় এনজিও কর্মকর্তা। ঢাবির সাবেক এই ছাত্রী পুরো পরিবারের জন্য কিনেছেন কাপড়। জানালেন, ভার্সিটি লাইফে এখান থেকে কেনাকাটা করতাম। অভ্যাসটা এখনও ছাড়তে পারিনি। তাছাড়া সব ধরনের কাপড় এখানে পাওয়া যায়। দামটাও থাকে সাধ্যের মধ্যে।

কুমিল্লা থেকে বাজার করতে এসেছেন রায়হান জামিল। সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন এক সময়। এখন নিজের এলাকায় ব্যবসা করেন। শুধু নিজের জন্য নয়, অাত্মীয় স্বজনের জন্য প্রচুর শপিং করতে দেখা গেল তাকে।
বিক্রেতারা অাশা করছেন অাগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রীর পরিমাণ অারো বাড়বে। সব কিছু ঠিক থাকলে টার্গেট পূরণ করার ব্যাপারেও অাশাবাদী বিক্রেতারা। বছরের এই সময়টিতে বিক্রীর অাশার সারা বছর অপেক্ষার প্রহর গুণেন অনেক বিক্রেতা।

এসএইচ/