ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের লক্ষণ ও প্রতিকার

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল

প্রকাশিত : ১০:১৭ এএম, ১১ আগস্ট ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:৪৮ এএম, ১১ আগস্ট ২০১৮ শনিবার

জন্ডিস মানেই লিভারের রোগ। লিভারে এ, বি, সি, ডি, ই ইত্যাদি ভাইরাসের সক্রমণ আর কখনও বা ওষুধপত্রের সাইড এফেক্ট, জন্ডিসের কথা শুনলেই আমাদের মাথায় চলে আসে এই বিষয়গুলো। জন্ডিস কিন্তু হতে পারে আরও অনেক কারণেই। এমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ অবস্ট্রাকশান বা পিত্তনালীতে পিত্তের চলাচল কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ ধরণের জন্ডিসকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় আমরা বলি অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস।

পিত্তনালীতে পিত্তের চলাচলে এই যে, অবস্ট্রাকশান তার কারণ বহুবিধ এবং খুব বিচিত্রও বটে। যেমন পেটের ভিতরে থাকা কৃমিও পিত্তনালীতে ঢুকে পিত্তের চলাচল বন্ধ করতে পারে। একইভাবে পিত্তনালীতে যদি পাথর হয়, তাহলেও এ ধরনের জন্ডিস দেখা দিতে পারে। তবে অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের সবচেয়ে খারাপ কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। আর এই ক্যান্সার হতে পারে পিত্তনালীতে, অগ্নাশয়ে আর কখনও বা পিত্তথলি কিংবা ক্ষুদ্রান্তেও।

অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের কারণগুলো এত বিচিত্র বলেই কখন কিংবা কেন অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস হবে তার কোনও ঠিক ঠিকানা থাকে না। ভাইরাল হেপাটাইটিস বা প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা জন্ডিস বলে জানি সেসব রোগীরা সাধারণতঃ হলুদ চোখ আর পেশাব নিয়ে হাজির হন। সঙ্গে থাকে খাওয়ায় অরুচি, বমি বা বমি-বমি ভাব ইত্যাদি। অন্যদিকে, অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের রোগীদের চোখ আর পেশাব হলুদ হয়ে যায় ঠিকই, কিন্তু তাদের অন্য লক্ষণগুলো থাকে না বরং এসব রোগীরা ম্যালেরিয়ার মতো কাপুনি দিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হন, যাকে আমরা বলি কোলানজাইটিস। সঙ্গে থাকে অসহ্য চুলকানি। পায়খানা সাধারণতঃ সাদা হয় আর চুলকানির কারণে রোগীদের কাটে দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত।

রক্ত পরীক্ষা বা লিভার ফাংশান টেস্ট করলে সাধারণতঃ এই দুই ধরণের জন্ডিসকে আলাদা করা যায়। আর সঙ্গে রোগের লক্ষণগুলো তো আছেই। তবে এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে কাজের পরীক্ষা হলো লিভারের ইমেজিং, যেমন আল্ট্রাসনোগ্রাফী। একজন ভাল সনোলজিস্ট সাধারণতঃ সহজেই অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসকে সহজেই ঠিকঠাক ধরে দিতে পারেন। কারণ এ ধরণের জন্ডিসে পিত্তজমে-জমে লিভারের ভিতরে-বাইরের পিত্তনালীগুলো ফুলে যায় যাকে আমরা বলি বিলিয়ারী ডাইলেটেশন। তবে অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের জন্য সবচাইতে ধনন্তরি পরীক্ষাটির নাম এমআরসিপি, যা আসলে এক ধরণের এমআরআই পরীক্ষা।

অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের চিকিৎসাও বিচিত্র। কোনও ওষুধে সারে না এই জন্ডিস। ওষুধ দিয়ে শুধু এই রোগের লক্ষণগুলো যেমন জ্বর, চুলকানি ইত্যাদি কমিয়ে রাখা যায়। তবে জন্ডিস কমাতে হলে যে কারণে পিত্তনালীতে পিত্তের চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে সেই বাধাটা সরিয়ে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। আর এই চিকিৎ সা পদ্ধতিটির নাম হচ্ছে ইআরসিপি। এটি আসলে এক ধরণের বিশেষায়িত এন্ডোস্কোপি টেকনিক যেখানে পিত্তনালীর ভিতরে ঢুকে অবস্ট্রাকশনের চিকিৎসা করা হয়। যেমন পিত্তনালীতেপাথর বা কৃমি থাকলে তা বাস্কেট দিয়ে ধরে বের করে নিয়ে আসা হয়। আর জন্ডিসের কারণ যদি হয় কোনও টিউমার তবে সে ক্ষত্রে পিত্তনালীতে স্টেন্ট বসিয়ে আসা হয়।

অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের এই আধুনিক চিকিৎসা এখন এ দেশেই সম্ভব। ফলে সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং তারপর পরই আরসিপি করে এখন এ দেশের অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিসের রোগীরা এ দেশে বসেই এই রোগের সর্বাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন।

লেখক: চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

একে//