ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চাকরির নামে প্রতারণা

অভিনব কৌশলে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:২৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৮:২৩, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠল মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। দেশের শীর্ষ একটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগকারী একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানান।

অভিযোগকারীরা জানায়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উপজেলা পরিদর্শক ও কর্মসূচি সংগঠকসহ পাঁচটি পদের বিপরীতে মোট ৮৮৪ জন নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে আগ্রহী প্রার্থীদের তিন কপি ছবি ও মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত আবেদনপত্র আগামী ১২ দিনের মধ্যে পরিচালক মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বরাবর পাঠাতে বলা হয়। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেওয়া হয় বাড়ি নং-৪৯, রোড নং-১০/এ, নিকুঞ্জ-১, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯। এ ঠিকানায় আবেদন করা হলে আবেদনে উল্লেখিত নম্বর অনুযায়ী চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে ফোন করে ১২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন কথার মারপ্যাচে প্রার্থীর কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অভিযোগকারী বরিশাল সদরের মার্জানা আক্তার তিনা একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি আবেদন করি। আবেদনের পর আমাকে ০১৮৫৮৯২৩৮৪০ নম্বর থেকে ফোন দিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য ১২০০ টাকা চাওয়া হয়। নারী কণ্ঠের ওই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে বলছি বলে জানায়। এরপর আমি বলি আমার স্বামী নেই, এতো টাকা কোথা থেকে দিব? উত্তরে আমাকে ৫০ শতাংশ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। বাকি টাকা নিয়োগের পর দিতে হবে বলে জানায়।

তিনা আরো বলেন, আমাকে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রেনিং হবে বলে জানায়। আমি জানতে চাইলাম, আমাদের বরিশালে প্রতিষ্ঠানের কোন শাখা আছে কী না। তিনি উত্তরে আমাকে বলেন যে, দেশের কোথাও আমাদের এখনও কোনো শাখা নেই।  তবে পরে শাখা খোলা হবে।

তিনা আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের বরিশালে এক র‌্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে কথাও বলেছি। তখন র‌্যাব কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, আপনি আগে যারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তাদের অবহিত করেন। আমরা অ্যাকশানে যাব।

একইভাবে কথিত ওই প্রতিষ্ঠানে কামাল হোসাইন নামের আবেদনকারী অভিযোগ করে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে জানায়, আবেদন করার পর ওই অফিস থেকে কল করে ১২৫০টাকা বিকাশ করতে অথবা অফিসে গিয়ে জমা দিতে বলে। এ আবার কেমন চাকরি? পরীক্ষা নেই, সাক্ষাৎকার নেই আগেই চাকরির ট্রেনিংয়ের নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে। সারা দেশ থেকে তো তারা লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে। কেউ কী দেখার নেই?

স্নিগ্ধা নামের অন্য আবেদনকারীরও একই অভিযোগ।

তবে অভিযোগের সূত্র ধরে কথিত ‘মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে’র হিউম্যান রির্সোর্সের পক্ষ থেকে বিকাশে টাকা চাওয়া ওই ফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাওকে পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে কথিত প্রতিষ্ঠান মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দেওয়া ঠিকানার নিকটবর্তী খিলক্ষেত থানায় যোগাযোগ করলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল হক একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে এ বিজ্ঞপ্তির ঠিকানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কিছুদিন আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে দেওয়া এক ভুয়া বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া  ঠিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা উপ-কমিশনার মাসুদ রহমান বলেন, চাকরি প্রত্যাশীদের উচিত চাকরির আবেদন করার আগে জেনে বুঝে যাচাই-বাছাই করে আবেদন করা। আর গণমাধ্যমেরও উচিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে যাচাই করা। এ ধরণের বিজ্ঞপ্তি ছাপানো থেকে বিরত থাকায় গণমাধ্যমের নৈতিকতার ভিতরে পড়ে। তিনি জানান, মা ও শিশু কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই অ্যাকশনে যাব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ এর  আশপাশের এলাকা বিশেষ করে টঙ্গী, গাজীপুর, মতিঝিল, মহাখালী ও খিলক্ষেতে কাজ করছে এমন প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্রটি প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি নাম দিয়ে অভিনব কৌশলে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করে। সম্প্রতি রাজধানীতে থাকা এ ধরনের একটি চক্রের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা হয়। এদের মধ্যে প্রতারক দম্পত্তিও ছিল। ওই চক্রের দুই নারীসহ পাঁচ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সূত্র জানায়, চাকরির প্রতারক চক্রের সদস্যরা একেক সময় একেক এনজিওর নাম ব্যবহার করে। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর গুটিয়ে নেয় অফিস। এমনই ভাবে গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ২০৯০টি পদে নিয়োগের জন্য ‘বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন বাস্তবায়নে শিশু বিকাশ কেন্দ্রর  নামে ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ধরা পড়ে প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্য।

দ্বীপক কুমার দেব নামে এক চাকরি প্রার্থীর মামলা এবং ২০ থেকে ২৫ জন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে রাজধানীর মতিঝিল থানা পুলিশের একটি দল তাদের মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করে। তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুরুল আহসান খান। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তারা হলো- মাহবুবুর রহমান, সুজিত কুমার ঘোষ, রোকসানা আক্তার,  রবিন ও মায়া রানী রায়।

আরকে/টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি