ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

অামার বাবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২০, ১৯ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৭:০৪, ২০ জুলাই ২০১৮

আমার বাবা, গোলাম মওলা চৌধুরী। ২০০৮ সালের ২০ জুলাই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। বাবা ২০০৮ থেকে ২০১৮ অনেকটা বছর তোমাকে ছাড়া। আমার বাবা অনেক বিনয়ী ও সুদর্শন ছিলেন। উচ্চপদস্থ সরকারি ককর্মচারী হিসেবে সুনামের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন।

বাবার সঙ্গে আমি বাংলাদেশের অনেক জেলায় গিয়েছি। আমি ছোটবেলাতে যখন উদয়ন স্কুলের ছাত্রী তখন বাবার পোষ্টিং হয় বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলায়। যেখানে বিদ্যুৎ ছিল না পুরোপুরি, সেই উপজেলায় বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম। যখন হারিকেনের আলোতে পড়তে বলতেন মা, বাবা বলতেন, ‘আরে মেয়েরা চিঠি লিখতে পারলেই হবে। অথচ বাবাই চাইতেন আমরা অনেক পড়ি। আমাদের একটু খুশী করতে এমনটা বলতেন বাবা।

আমার বাবার মধ্যে অনেক ছেলেমানুষী ছিল। মায়ের কাছে শুনেছি, বাবা মায়ের বিয়েতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো ক্যাবিনেট নিয়ে এসেছিলেন নাতনির (আমার মা) বিয়ে খেতে। আমার বাবা তাকে দেখে স্টেইজ থেকে নেমে পরেন। বঙ্গবন্ধুর আশির্বাদ পেয়েছেন আমার বাবা। সেই আশির্বাদ আমাদের পুরো পরিবারকে সম্মান এর সঙ্গে এখনও রেখেছে।

কুমিল্লা ও রাজবাড়ী জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি সফলভাবে কাজ করেছেন। এখনও যদি কুমিল্লার কোন রোগী আমার কাছে আসে আর কথায় কথায় আমি তাকে যদি বলি যে আমি কুমিল্লা ছিলাম। আমার বাবা ডি.সি ছিলেন বেশীর ভাগ রোগীই আমাকে বলে, উনি বড় ভাল মানুষ ছিলেন। এটাই আমাদের প্রাপ্তি। অতি সাধারণভাবে মানুষের সঙ্গে মিশতেন আমার বাবা। কুমিল্লাতে যখন ডিসি তখন আমার বাবার গাড়িতে সাইরেন ছিল, নিয়ম ছিল রাস্তায় চলার সময় বাজাবে যাতে রাস্তা ক্লিয়ার থাকে।

বাবা কোনদিন বাজাতে দিতেন না ড্রাইভারকে। আমি মাঝে মধ্যে বলতাম কেন বাজাতে দাও না বাবা? উনি বলতেন, আমি সাধারণ মানুষের সেবার জন্য, তাদের কাছে তাদের মত থাকতে চাই। সাইরেন বাজিয়ে নিজেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আলাদা করতে চাই না। এই ছিল আমার বাবা। ফেরি ঘাটের একটা সিদ্ধ ডিম, ২ টাকার বাদাম, এককাপ দুধ চা এই ছিল আমার বাবার পছন্দের। সামান্যতেই খুশী হওয়া মানুষটি অনেক তারাতারি চলে গেলো।

ছোটবেলাতে আমি মাকে বন্ধু ভাবতাম। মা হলো আমার স্কুলের বন্ধুর মতো। আর একটু বড় হওয়ার পর বাবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। বাবা আমার কলেজের বন্ধুর মতো। মনের কথা বলার একমাত্র জায়গা ছিল। সদা হাস্যোজ্জ্বল, আস্তে কথা বলার একজন মানুষ। আমরা তিন বোন ছিলাম আব্বার সবকিছু। আব্বা সবাইকে খুশি করার ভিষণ চেষ্টা করতো। আমি কই মাছ খুব ভালোবাসতাম।

আমি একদিন মাছ খাচ্ছি, আব্বা আমাদের বাসার মেয়েটিকে বলে, "তামান্নার পিছে একটু দাড়িয়ে থাক আর খেয়াল রাখ যেন মুখে কোন কাটা না যায়"। এ হলো সেই বাবা। অনেক কষ্ট করছে শেষ সময়ে। মারা যাওয়ার তিন চার দিন আগে, আব্বার রক্ত লাগবে, আমি রক্ত দিয়েছিলাম। আব্বা কিছুতেই আমার রক্ত নিবে না।

আমি জোড় করে রক্ত দেই। আব্বার রক্ত নেওয়া শেষ হলে, আব্বা ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে," মা আমি শেষপর্যন্ত তোর রক্ত নিলাম, জীবনে তুই অনেক বড় হবি। আজ আমি যা পেয়েছি আমার কিছুই আমার বাবা দেখেনি। বাবার কাছ থেকে আমি শিখেছি মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয়, মানুষের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়।

আব্বার কাছ থেকে গ্রামকে ভালোবাসতে শিখেছি। খুব সাধারণভাবে থাকতেন আমার বাবা। জেমসের সেই গানটা মনে পরে" এযে রক্তের সাথে রক্তের টান সার্থের অনেক উর্ধ্বে, হঠাৎ ঝড়ে তোমায় হারালাম, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো, বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়"। আল্লাহর কাছে তুমিও ভালো থেকো বাবা।

আআ/এসএইচ/


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি