ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

আবারও আলোচনায় বোফর্স কেলেঙ্কারি মামলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৪:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

ভারতের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ানো বোফর্স কেলেঙ্কারি মামলা নিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে ভারতের রাজনীতিক অঙ্গন। বোফর্স কেলেঙ্কারি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছেন বিজেপি নেতা অজয় আগারওয়াল। এদিকে বিজেপি নেতা অজয় আগারওয়ালের আপিল করার কোন এখতিয়ার আছে কি নেই তা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বোফর্স কেলেঙ্কারি মামলার রায়ের উপর আগারওয়ালের আপিলের কোন এখতিয়ার আছে কি নেই, আর থাকলে কোন আইনে আছে তা জানতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আগামী ২ ফেব্রুয়ারি আগারওয়ালকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আজ বুধবার সর্বোচ্চ আদালত এ আদেশ দেন। এছাড়া তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কিভাবে আগারওয়াল কিভাবে এ মামলায় যুক্ত তারও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিসরার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এসময় দীপক মিসরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যখন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ২০০৫ সালে দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি, তখন একজন তৃতীয় পক্ষের ব্যক্তি কিভাবে এই মামলায় আপিল করতে পারেন।

আদালত আরও বলেন, “মামলার প্রসিকিউটররা যখন এ মামলায় নীরব, তখন আমরা কেন এই মামলা নিয়ে মাথা ঘামাবো। ১৯৮৬ সালে বোফর্স কেলেঙ্কারি নামের ঘটনাটি ঘটে। ৩১ বছর পাড় হয়ে গেল, কেউ এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্চ করেনি। আপনি (আগারওয়াল) তৃতীয় পক্ষ, তাই আপনি জবাব দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের সন্তুষ্ট করতে হবে।” জানা যায়, হাইকোর্টের রায়ে তিন হিন্দুজা ব্রাদার, সুইডেনের সেই বোফর্স কোম্পানি, সেনা কর্মকর্তা ও রাজীব গান্ধীকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট।


এদিকে সিবিআইকেও এই মামলায় ডাকা হয়েছে। আদালত সিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইনি পরামর্শক মনিধর সিংকে বলেন,আপনি গত ১২-১৩ বছরেও আদালতে কোন আপিল করেন নি। এখন এ বিষয়ে কি বলতে চান। তবে মনিধর সিংক বলেন, সিবিআই আপিল না করলেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত একটি পক্ষ লিভ পিটিশন দায়ের করেছিল। পরবর্তীতে তা উঠিয়ে নেওয়া হয়।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, আগারওয়াল ২০০৫ সালে বোফর্স কেলেঙ্কারি মামলার ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন। এর আগে তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেসের তৎকালীন সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে নির্বাচনে একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। হাইকোর্টের রায়ে ওই মামলার মূল আসামী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীসহ সুইডেনের অস্ত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বোফর্স ও সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধতন কর্মকর্তাকে মামলা থেকে রেহাই দেন।

এদিকে আগারওয়াল আপিল করার পরই সিবিআই--এর টনক নড়েছে। গত বছরের অক্টোবরে সংস্থাটি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছিল। আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এক গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সিবিআই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে সেটা আলোর মুখ দেখেনি। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সরকার ওই ঘটনার তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছেন। তাই জাল ছেড়ে বেরিয়ে গেছেন রাজীবসহ রাঘব বোয়ালেরা।

এদিকে মামলার সুত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ ভারত ও সুইডেনের বোফর্স কোম্পানির মধ্যে ১৪৩৭ কোটি রুপির অস্ত্র কেনার চুক্তি করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এর পরের বছরই সুইডিশ রেডিও দাবি করে, ওই অস্ত্র বিক্রি করতে বোফর্স কোম্পানি ভারতের শীর্ষ রাজনীতিক ও সেনা কর্মকর্তাদের বড় অঙ্কের ঘুষ দিয়েছে। এরপরই ১৯৯০ সালের ২২ জানুয়ারি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই তদন্তে নামে। তারা অভিযোগ করে, দেশ ও দেশের বাইরে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও বোফর্স প্রতিষ্ঠান এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত। তবে ২০০০ সালের ৯ অক্টোবর সিবিআই একটি সম্পূরক চার্জশীট দায়ের করে। সেখানে তিন হিন্দুজা ভাইকে অভিযুক্ত করা হয়।

এদিকে ২০১১ সালে সিবিআইয়ের একটি নিজস্ব কোর্ট পালিয়ে বেড়ানো কুতোরসিসহ বাকিদের খালাস দেন। ওই কোর্টের দাবি তাদেরকে গ্রেফতারে ইতোমধ্যে ২৫০ কোটি রুপি খরচ হয়ে গেছে। আর কোন অর্থ তারা খরচ করতে চায় না। তবে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর নথিতে দেখা যায়, সুইস সরকার বোফর্সের হিসাবনিকাশের নীরিক্ষা করিয়েছিল। এতে দেখা যায়, ১৫০ কোটি ডলারে সুইস সংস্থাটি ভারতকে কামানগুলি বিক্রি করেছে। আর চার কোটি ডলার ঘুষ হিসেবে খরচ হয়েছে। সুইডিস আইন অনুসারে এটি বেআইনি। ১৯৮৭ সালের জুন মাসের মধ্যেই নীরিক্ষার কাজ শেষ হয়। এই নীরিক্ষা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করে সুইডিশ পুলিশ। কিন্তু পরে আর তদন্ত এগোয়নি। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতেই তদন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয় সুইস ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুত্র: এনডিটিভি
এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি