ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

রাজীবের খালার আর্তি

আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয় (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১০:৫১, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ১১:১০, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

টানা ১৪ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজীব হোসেন (২৩)। দুই বাসের চিপায় পড়ে ডান হাত হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব। তিনি মাথায়ও গুরুত্বর আঘাত পেয়েছিলেন। বেশ কয়েকদিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইনটেনসিভ কেয়ারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার  রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রাজীবের হৃদস্পন্দন কমতে শুরু করে। স্বজনদের অনুরোধে ইসিজি করানো হয়। রাত ১২ টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ৭ টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রাজীবের পরিবারের। তখন তার স্বজনদের কেউ কেউ ধরেই নিয়েছে রাজীবের জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে। টগবগে তরুণের স্বপ্ন এভাবে নি:শেষ হয়ে যাবে সেটি মেনে নিতে পারছিলেন না তারা।  

কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের চোখ তখন রাজীবের শয্যাপাশে মনিটরের সিগন্যাল বাতির দিকে। অন্যদিকে কিছুক্ষণ পরপর আইসিইউতে স্বজনদের আনাগোনা, হৃদয় নিংড়ানো আর্তনাদ আর সজল চোখের প্রার্থনায় ভিজে যাওয়া হাতের পরশে রাজীব ফিরে আসবে। কিন্তু রাজিব চোখ মেলে না বহুদিন, কথা বলে না। প্রাণ যায় যায়। এ যেন এক অন্তহীন অপেক্ষা!

রাত তখন দেড়টা রাজীবের খালা জাহানারা বেগমকে এ প্রতিবেদক ফোন করলে তিনি একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, আপনারা শুনেন আমার রাজীব আর নেই। দেশের মানুষকে জানান রাজিব আর ফিরবে না। আর যেন কোন মায়ের বুক এভাবে যেন খালি না হয়। আমার আর কিছু বলার নাই।

জাহানারার এমন হৃদয়বিদারক আর্তনাদ সন্তান হারানোর বর্হিপ্রকাশ।  সন্তানের নিথর দেহ সামনে নিয়ে তার এই মর্মস্পর্শী শোকের মাতমের কাছে কোনরুপ সমবেদনা জানাবার ভাষা ছিলো না এই প্রতিবেদকের।

শোকে মূহ্যমান জাহানারার বুকফাটা আর্তনাদ যেন তাঁর মাতৃত্বের মমতাকেই প্রকাশ করে। কেননা শৈশবে এতিম হওয়া রাজীব ও তার দুই ভাইয়ের লালন পালনের দায়িত্ব এসে পরে খালা জাহানারার কাছেই। ছোট্ট তিন মাছুম বাচ্চাদের বুকে তুলে নিয়েছিলেন। তাদের লেখাপড়া আর ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব তার কাঁধে থাকলেও সন্তানের মতোই মানুষ করছেন তাদের। সেই স্মৃতিগুলো স্মরণ করে বিলাপ করছেন জাহানারা।

অপরদিকে রাজীবের মৃত্যুতে তাঁর দুই ছোট ভাই বাকরুদ্ব হয়ে আছে। কোনরূপ কথা বলছে না তারা। তাদের চোখে মুখে ঘোর অমানিশা। কারণ রাজীব পড়ালেখার পাশাপাশি যা আয় করতেন তা দিয়ে ছোট্ট দুই ভাইয়ের খরচ চলত। এখন কী হবে এমনটি ভেবেই হয়তো ছোট্ট দুটি হৃদয় ভেঙ্গে খান খান।

জানা গেছে, সকালে  ময়নাতদন্ত শেষে রাজিবের মরদেহ পটুয়াখালীর  বাউফলে রাজিবের গ্রামের বাড়িতে তাঁর মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

নিভে গেলো রাজিবের জীবন প্রদীপ। থেমে গেলো জীবনযুদ্বে  লড়াকু এক সৈনিকের পথচলা। এক রাজিব অনন্তের পথে যাএা করলেও, অন্য কোনো রাজিবের জন্যে জায়গা করে দিল সে। শূণ্য থাকবে না আইসিইউর বেডগুলো। কারো শূণ্যতায় হয়তো জীবন থেমে থাকে না। কেবল চালকের অসচেতনতার কারণেই পোর খাওয়া জীবনের প্রতিনিধিত্বকারী রাজিবদের জীবন দিতে হয় এভাবে।

আইসিইউতে স্বজনদের আনাগোনা যেন থেমে গেলো এক নিমিষেই। স্বজনদের  হৃদয় নিংড়ানো আর্তনাদ আর সজল চোখের প্রার্থনায় ভিজে যাওয়া হাতের পরশের বিনিময়ে রাজীব ফিরে আসলো না। অবশেষে  অন্তহীন অপেক্ষার ইতি ঘটিয়ে সে চলে গেলো পরপারে!

তাকে লাইফ সার্পোটে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রাজীবকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। তার হার্ট কিছুটা নড়াচড়া করলেও মস্তিস্ক একেবারেই কাজ করছিল না। জিসিএস বা গ্লাসগো কমা স্কেল মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে রোগীর কনসাসনেস লেবেল নির্ধারণ করা হয়। জিসিএস লেবেল সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বনিম্ন ৩ থাকে। ৭-৮ পর্যন্ত থাকলেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু সোমবার রাজিবের জিসিএস লেভেল সর্বনিম্ন ৩ ছিলো।

বাসের চাপায় রাজীব ডান হাত হারালেও মস্তিষ্কের মাঝামাঝি ডানদিকে থেতলে যাওয়াই কাল হয়ে হয়েছে রাজীবের। শারীরিক অবস্থার অবনতি এ কারণেই। এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং এর কোন চিকিৎসা নেই বলে চিকিৎসকরা আগেই জানিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের চাপায় তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে হাতের অস্ত্রোপচারের পর বুধবার (৪ এপ্রিল) বিকালে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও খবর

ফিরে আসুক বুকের ধন, স্রষ্টার কাছে স্বজনদের প্রার্থনা

রাজিবের স্বপ্ন ঘুমায় আইসিইউর বিছানায়

কেআই/ এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি