ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

গাজীপুর সিটি নির্বাচন

আ’লীগ-বিএনপির এসিড টেস্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২০, ১৯ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৮:২০, ১৯ জুন ২০১৮

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। গত ১৫মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আইনি জটিলতায় নির্বাচন পিছিয়ে ঈদের পরে নেওয়া হয়। তাই এতদিন আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ ভোটারদের কাছে ভোট চাইতে পারেননি। তবে গতকাল (১৮ জুন) থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় জোরোশোরে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রভাব ফেলবে এমন ভাবনায় দুই দলই সিটি নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে।

এদিকে এতদিন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারলেও, পুরো রমজান মাসব্যাপী প্রার্থীরা নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ইফতার আয়োজন, ঈদ-বস্ত্র বিতরণ, ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ নানা আয়োজনে ব্যস্ত থেকেছেন প্রার্থীরা।


জানা গেছে, আসন্ন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট প্রার্থী সাত জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের মধ্যে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একদিকে যেমন উভয় দলের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রেস্টিজ ইস্যু তেমনি উভয় নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন হতে পারে অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।ফলে এই নির্বাচন হয়ে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি`র নির্বাচন। ইতোমধ্যে উভয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।

সুষ্ঠুভাবে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শেষ করা আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীকে একদিকে জিতেয়ে আনা যেমন দলটির জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে তেমনি নির্বাচনকে দলীয় প্রভাব মুক্ত রেখে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ও বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিটি কর্পোরেশনটির গত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয় লাভ করায় প্রমাণ হয়েছিল, গাজীপুর সিটিতে বিএনপি`র সাংগঠনিক অবস্থা ভাল। সেই অবস্থায় নিজ দলের প্রার্থীকে জেতাতে বেগ পেতে হবে আওয়ামী লীগকে এমন ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা এ প্রসঙ্গে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে বলেন, গাজীপুরে বিএনপিকে দুর্বলভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। নানা কারণে সেখানে বিএনপি প্রার্থী আওয়ামী লীগের তুলনায় এগিয়ে আছে। এখানে হেরে গেলে দলীয় ইমেজের জন্য যেমন ক্ষতি তেমনি জেতাতে গিয়ে কোন অন্যায় করার বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই সামনে একটাই পথ খোলা। সেটি হলো ভোটারদের কাছে যাওয়া, তাদের মন জয় করা।

এদিকে বিএনপি এ নির্বাচনকে নিয়েছে আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুর এসিড টেস্ট হিসেবে। দলটির চেয়ারপার্সন দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দী। গত সংসদ নির্বাচনে দলটির সমর্থকরা ভোট দিতে পারেননি। গাজীপুরে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেয়র হিসেবে বিজয় লাভ করলেও অর্ধেকেরও বেশী মেয়াদকাল সময় তিনি নানাধরণের মামলা হামলায় দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পাননি। ফলে বিএনপি সমর্থিত ভোটাররা ক্ষোভে ফুঁসছে বলে দাবি করেছেন গাজীপুর জেলা বিএনপি`র সাধারন সম্পাদক ছায়েদুল আলম বাবুল। একুশে টেলিভিশন অনলাইনের কাছে তিনি দাবি করেন, যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে তাহলে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটবে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে আওয়ামীলীগ যতই গুরুত্বের সাথে নিক না কেন দলীয় অন্তর্কোন্দল আগামী নির্বাচনে হয়ে দাঁড়াতে পারে অন্যতম বাধা। এ ব্যাপারে সংশয় কাটিয়ে উঠতে পারছেন না খোদ দলটির কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারাও। দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে বিভক্ত। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেই বিভাজন প্রথম প্রকাশ্যে আসে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সেবারের নির্বাচনে আজমত উল্লাহ খানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনে পরাজয়ের পর আজমত উল্লাহ খান দাবি করেন নির্বাচনে তাকে জাহাঙ্গীর আলম ও তার সমর্করা সহযোগিতা করেন নি।

ইতোমধ্যে উভয়ে ( আজমত উল্লাহ খান ও জাহাঙ্গীর আলম) জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এক সাথে দায়িত্ব নিলেও উভয়ে হেঁটেছেন দু`দিকে। দিনে দিনে বেড়েছে দূরত্ব। এবারো উভয়ে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এবার মনোনয়ন দেওয়া হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। কিন্তু এবার জাহাঙ্গীর আলমকে আজমত উল্লাহ খান সাহায্য করছেন না এমন অভিযোগ দলের হাইকমান্ড শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়ায়। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী জাহাঙ্গীর আলমকে নির্দেশ দেন আজমত উল্লাহ খানকে সাথে নিয়ে কাজ করার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ কতোটুকু বাস্তবায়িত হবে, আদৌ এই চির ফাটলে জোড়া লাগবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কিত দলটির নেতা-কর্মীরা।

এদিকে সারাদেশের মতো গাজীপুরেও বিএনপি নেতা কর্মীদের অন্যতম বাধা মামলা। মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়তা থাক বা না থাক মামলার কারণে নির্বাচনের আগে মাঠে কাজ করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে দলটির নেতা কর্মীদের জন্য। গত নির্বাচনে গাজীপুরে বিএনপি প্রার্থী বিজয় লাভ করলেও মেয়াদের অর্ধেকেরও বেশী সময় তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারেন নি। গাজীপুরে এখনো তৃণমূল নেতাকর্মীদের অধিকাংশই নানা ধরনের মামলায় জড়িত। যদিও দলটির নেতারা নির্বাচনী পরিকল্পনা করতে গিয়ে মামলা নেই এমন পরিচ্ছন্ন নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তবে সেইপরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত কতোটুকু বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে দলটির নেতাদের বিশ্বাস, নির্বাচনী প্রচারনায় যদি পুলিশী বাধা না আসে বা নির্বাচন যদি সুষ্ঠ হয় তাহলে জনরায় আসবে বিএনপি`র পক্ষে।

গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে। সেই শঙ্কার ব্যাপারে কী বলবেন জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, গাজীপুরে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী বিজয় লাভ করেছিল। দেশের অনেক সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিএনপি প্রার্থী বিজয় লাভ করে। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তারা বিজয় লাভ করে কীভাবে?

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অপেক্ষাকৃত তরুণ ও অনভিজ্ঞ। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থীর বিজয়ের ব্যাপারে কতোটুকু আশাবাদী এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, তরুণ হলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী, নৌকা তার প্রতীক। তাই নৌকাকে যারা ভালবাসে দলের প্রতি যাদের সমর্থন আছে তারা নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে ভোট দিবে - একথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগে অন্তর্কোন্দলের বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা প্রতীকের ব্যাপারে আবেগ প্রবণ। কিছু ভুল বুঝাবুঝি থাকলেও ভোট দিতে এসে নিজ দলের প্রার্থীকেই দিবে। আওয়ামী লীগের এই নেতা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব দিকে সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন। কেউ যদি নিজ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করে বা কৌশলে অবস্থান নেয় তাহলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। সাংগঠনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে গাজীপুর জেলা বিএনপি`র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি`র সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া থেকে বুঝা যায় সরকার এ নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। সরকার ভালোভাবেই জানে, গাজীপুর বিএনপি`র ভোট ব্যাংক। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি প্রার্থী বিশাল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে। খুলনায় বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হয়েছে - এমন ইঙ্গিতে বিএনপি`র কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, খুলনা ও গাজীপুর এক কথা নয়। গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে কোন টালবাহানা করা হলের গাজীপুরের ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। তার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে খুব গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে উভয় দল। উল্লেখ্য, গত ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে করা রিটের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছিল আদালত। পরে বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার, আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও নির্বাচন কমিশনের করা আপিলের প্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয়। সে হিসেবে আগামী ২৬ জুন এ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি