ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আসছে এইচআইভির টিকা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৩, ১৪ জুলাই ২০১৮

এইচআইভি এইডস হলে কোনো রক্ষা নেই। নেই কোনো টিকা, নেই চিকিৎসা। সারাটি জীবন দুর্ভোগ সঙ্গী করে বয়ে বেড়াতে হয়। গোটা পরিবারের জন্য কান্নার কারণ হন ওই ব্যাক্তি।

তবে এইআইভি এইডস রোগী ও তার স্বজনদের জন্য কিছুটা হলেও সুসংবাদ। এইচআইভি-১ ভাইরাসের এই সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষায় এখন কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের একটি নিরাপদ টিকা আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি উঠেছে সম্প্রতি।

৬ জুলাই যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, এইচআইভি-১-এর টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এই টিকা শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখে।

ইতোমধ্যে এই টিকা পরীক্ষামূলকভাবে রেসাস প্রজাতির বানরের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে টিকাটি নিরাপদ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। সীমিত পরিসরে মানুষের শরীরেও টিকাটির পরীক্ষা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ফল মিলেছে।

বিজ্ঞানীরা জানান, প্রাথমিক ফলাফল ইতিবাচক হওয়ায় এখন এই টিকার পরীক্ষা আরও বৃহৎ পরিসরে করা যাবে। নিরাপদ হওয়ায় আরও বেশিসংখ্যক মানুষকে এই পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এইচআইভি ভাইরাস সারা বিশ্বে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার ৩৫ বছর পর এটি একটি বড় অগ্রগতি। এখন পর্যন্ত এই মাত্রার ফল দিতে পেরেছে মাত্র পাঁচটি টিকা। এর আগে মাত্র চারটি টিকা মানুষের শরীরে প্রয়োগ করার মতো পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এইচআইভির সত্যিকারের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এইডস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ১৮ লাখ নতুন মানুষ। বিশ্বে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ এই রোগ নিয়ে বেঁচে আছে। এই রোগের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। ফলে যেকোনো সাধারণ রোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রায় চার দশক ধরে এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। চেষ্টা করা হচ্ছে, অন্তত রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এই রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো প্রতিষেধক বা টিকা মানুষের হাতে আসেনি। এই অবস্থায় নতুন এই টিকা কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এইডস রোগীদের মধ্য থেকে ৩৯৩ জনের ওপর নতুন এই টিকার প্রয়োগ করেছেন বিজ্ঞানীরা। মূলত মানুষের শরীরে এই টিকার প্রয়োগ কতটা নিরাপদ এবং এর প্রয়োগমাত্রা কী হবে, তা নির্ধারণের লক্ষ্যেই এই পরীক্ষা চালানো হয়। মানুষের পাশাপাশি রেসাস প্রজাতির ৭২টি বানরের শরীরেও এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে।

এতে দেখা গেছে, এই টিকা প্রয়োগের কারণে রেসাস প্রজাতির বানরের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে। বিশেষত, সিমিয়ান-হিউম্যান ইমিউন ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট ক্ষতের বিপরীতে ৬৭ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম এই টিকা। তবে এটি মানুষের শরীরেও একই মাত্রায় কার্যকর হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে ইতিবাচক ফলাফলের কারণে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই টিকা এখন আরও বেশিসংখ্যক এইডস রোগীর শরীরে প্রয়োগের ঝুঁকি নেওয়া যেতে পারে। বিশেষত, যাঁদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, তাঁদের ওপরই দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষাটি চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন সাব-সাহারা অঞ্চলের ২ হাজার ৬০০ নারী, যা শুরু হবে আগামী শীতে।

গবেষণা কার্যক্রমটিতে অন্যতম গবেষক হিসেবে ছিলেন হার্ভার্ড মেডিসিন স্কুলের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর ভাইরোলজি অ্যান্ড ভ্যাকসিনের পরিচালক ড. ড্যান এইচ বারুচ। গবেষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া ফলে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমাদের এই ফল বিশ্লেষণের বিষয়ে সাবধান হতে হবে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে এইচআইভির পূর্ণাঙ্গ টিকা আবিষ্কার এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের বিষয়। একইসঙ্গে এও স্বীকার করতে হবে যে আমরা এখনো জানি না, এই টিকা মানুষকে আদৌ সুরক্ষা দেবে কি না, দিলে কতটা। এখন পর্যন্ত বানরের শরীরে এর ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। তবে এই টিকা বিভিন্ন ক্ষতের বিপরীতে একইভাবে কাজ করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সূত্র : সিএনএন।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি