ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

একটি মেয়েকে পাওয়ার জন্য অভিনয়ে আসি: চিকন আলী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১১, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

কৌতুক অভিনেতা চিকন আলী। বাংলা চলচ্চিত্রের খুবই পরিচিত একটি নাম। মানুষকে হাসানো সবচেয়ে কঠিন একটি কাজ। আর সেই কাজটিই তিনি করে যাচ্ছেন দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। বাঙালী জন্মগতভাবেই রসিক। আর বাংলার চিরায়িত সেই রসবোধ ঠাঁই করে নিয়েছে নাটক ও সিনেমায়। এক সময় টেলিসামাদ, দিলদার কৌতুক অভিনয় দিয়ে মানুষকে টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখতেন। আর এখন সেই কাজটিই করছেন চিকন আলী। ২০০৬ সালে ‘রঙিন চশমা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এ জগতে পা রাখেন তিনি। তারপর আর পেছনে ফেরা নয় শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় গুণে তৈরি হয়েছে অগণিত ভক্ত। হাস্যরসের জন্য চিকন আলীকে ছাড়া বাংলা সিনেমায় এখন অন্য কাউকে আর ভাবা যায় না।

ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় তার সাম্প্রতিক কাজ, ব্যস্ততা ও জীবনের নানা দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আউয়াল চৌধুরী।        

ইটিভি অনলাইন: কিভাবে চলচ্চিত্রের মতো এই বিশাল জায়গায় এলেন? 

চিকন আলী:  আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছাছিল কিছু একটা করার। কিন্তু কি করবো সেটা খুঁজে পাই না। আমার শৈশব কেটেছে জয়পুর হাটে। পরবর্তীতে পড়াশোনা করেছি বগুড়াতে। পরিবারের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আমার অভিমান ছিল। ফলে একসময় বাড়ী থেকে ঢাকায় চলে আসি। তারপর এখানে এসে কাজের খোঁজ করতে থাকি। কিন্তু কেউতো কাজ দিতে চায় না। কতজনের কাছে গেলাম কেউ সুযোগটা দিতে চায়নি। স্কুলে পড়াকালীন ওই সময়ের আমার একজন শিক্ষকের কথা তখন মনে পড়লো। তিনি আমাকে বলেছিলেন তুই যদি জীবনে কিছু করতে না পারিস, চাকরি না পাস, তাহলে কমেডিয়ান হবি। এই কাজটা তুই ভালো পারবি।  

ইটিভি অনলাইন: আপনার শিক্ষক কেন কমেডিয়ান হতে বললেন?

চিকন আলী:  স্যার এই কথা বলার কারণ হলো, আমি যখন স্কুলে পড়তাম ওই সময় বিভিন্ন কথার মাধ্যমে সবাইকে হাসাতাম। ক্লাসে সবাই আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো এবং খুব মজা পেত। স্কুলের স্যাররা যে কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে দিয়ে জোকস বলাতো। আমি এই কাজটা ভালো পারতাম। তখন আমার এক স্যার আমাকে কাছে নিয়ে বলে তুই যদি কিছু হতে না পারিস, তবে কমেডিয়ান হতে পারিস। স্যারের এই কথাটা আমার মনে গেঁথে গেছে। ফলে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে, চাকরি না পাওয়ার কারনে মনে মনে ঠিক করলাম কমেডিয়ান হবো। তারপর শুরু করলাম।

ইটিভি অনলাইন: কিভাবে চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করলেন?

চিকন আলী:  আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘রঙিন চশমা’। এই ছবির পরিচালক এমবি মানিক। তিনিই আমাকে প্রথম সুযোগটি দেন। প্রযোজক ছিলেন এনায়েত করিম। ২০০৪ সালে এর কাজ শুরু হয়। ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালের জুন মাসে। ছবিটি মুক্তির পর আমার কাজ দেখে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। আমিও সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। এরপর জাকির হোসেন রাজু স্যার এর ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’ চলচ্চিত্রে কাজ করে ব্যাপক প্রশংসা পাই। এরপর অসংখ্যা ছবিতে অভিনয় করি। ‘তোর কারণে বেঁচে আছি’ ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায়না’ ‘বসগিরি’ ‘শুটার’ ‘অনেক দামে কেনা’ ‘হানিমুন’ ‘ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম’সহ এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছি।

ইটিভি অনলাইন: চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে কারো প্রেমে পড়েছেন?

চিকন আলী:  হা হা হা কি- যে বলেন। প্রেম কি গাছের ওপর থাকে যে আমার ওপর এসে পড়বে বা আমি পড়বো। আসলে সে রকম কিছু কখনো ঘটেনি। সব সময় কাজ নিয়েই চিন্তায় থাকি। নিজের কাজটি ভালোভাবে কিভাবে করা যায় সেই চেষ্টাতেই থাকি। তবে একটা বিষয়ে বলতে চাই সেটা হলো আমাদের দেশে এখনো কমেডিয়ানদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। কমেডিয়ানরা একটা চলচ্চিত্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গল্পকে টেনে নেওয়ার জন্য, প্রাণবন্ত করার জন্য, দর্শকদের হলে বসিয়ে রাখার জন্য কমেডি খুবই প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের এখানে কমেডি নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা নেই। অনেকে হঠাৎ ফোন করে বলে কাল থেকে শ্যুটিং চলে আসেন। কমেডির জন্য আলাদা সময়, গল্প বা স্ত্রীপ্ট কি হবে এ নিয়ে খুব একটা পরিকল্পনা দেখা যায় না। অথচ সিনেমার অনেক বড় একটি পার্ট হলো এই কমেডি। কমেডিকে গুরুত্ব কম দেওয়ার কারণে সিনেমাও সেভাবে হিট হচ্ছে না। কোনো রকম ভাবে সবাই কাজ শেষ করতে চায়। কৌতুক অভিনেতাদের সম্মানীও তেমন একটা বাড়াতে চায় না। তবে টাকা পয়সা যতটুকুই পাই। আমার প্রেম এখন কাজের সঙ্গে। 

ইটিভি অনলাইন: বললেন প্রেম এখন কাজের সঙ্গে। তাহলে কি আগে কারো সঙ্গে প্রেম ছিল?     

চিকন আলী:  কঠিন প্রশ্ন করে ফেলেছেন। হ্যাঁ, স্কুল জীবনে একটি মেয়েকে ভালোবেসে ছিলাম। সেই ভালোবাসার কারণে বলতে পারি এই ঢাকা শহরে এসেছি। তাকে পাওয়ার জন্যই এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমি সাধারণ পরিবারের একটি ছেলে। আর তাদের অবস্থা ছিল অনেক ভালো। আমাদের সম্পর্ক তৈরি হয় অষ্টম শ্রেণি থেকে। সে আমার থেকে এক ক্লাস ওপরে ছিল। আমার জন্য সে যেমন পাগল ছিল, আমিও ছিলাম সেরকম। সব সময় আমাদের দেখা হতো, কথা হতো। সে বলেছিল তুমি ভালো কিছু কর। এমন কিছু কর যেটা বলার মতো। তার কথাতেই ভালো কিছু করার আশায় ঢাকা শহরে আসি। চেষ্টা করতে থাকি নিজের ভাগ্যে পরিবর্তনের। তাকে পাওয়ার জন্য এই জগতে আসি। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও তাকে পাওয়া হলো না।  

ইটিভি অনলাইন: সে এখন কোথায়। কেন সম্পর্ক ভেঙে গেল?  

চিকন আলী:  সে আছে তবে অনেক দূরে। ঢাকায় আসার পরও নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। চলচ্চিত্রে কাজ করার জন্য সে উৎসাহ দিত। আমিও অনেক বড় হওয়ার নেশায় পুরোপুরি ঢুকে গেলাম এই জগতে। এখন অনেক মানুষ আমাকে চেনে। আমার পরিচিতি বাড়লেও কিন্তু সে আমার জীবনে নেই। সে এখন অন্যের ঘরনি। একজনকে বিয়ে করে চলে গেছে আমার জীবন থেকে। অথচ কথা ছিল আমি ভালো কিছু করলে তারপর বিয়ে হবে। কিন্তু তার পরিবার অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়। আর আমি পড়ে আছি সিনেমা নিয়ে। কাজ করছি। যেহেতু জীবন থেকে সে চলে গেছে কিছুতো আর করার নেই।

ইটিভি অনলাইন: চলচ্চিত্রকে কিভাবে দেখতে চান?

চিকন আলী:  চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক চিন্তা আছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমি মনে করি প্রত্যেকটা সিনেমাতে কমেডি থাকা দরকার। গল্প বা স্ক্রীপ্ট তৈরির সময় কৌতুক নিয়ে ভাবা উচিৎ। গল্পকে সেভাবে তৈরি করা প্রয়োজন। এখন সিনেমায় কৌতুক নিয়ে বিশেষভাবে না ভেবে অনেকে হঠাৎ করে কিছু যুক্ত করতে চায় যা ঠিক নয়। যে কারণে সঠিক এবং ভালো জিনিষটি বের হচ্ছে না।

      

ইটিভি অনলাইন: অনেকে নতুনদের কাজের সুযোগ দিতে চায় না। আপনি সুযোগ দিবেন? 

চিকন আলী:  কেন দেব না। অবশ্যই দেব। ইতিমধ্যে অনেককে আমি সেই সুযোগ করে দিয়েছি। আমার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে সেখানে আমি প্রতি সপ্তাহে দুইটি ভিডিও আপ করি। সেটি সিলভার বাটন পেয়েছে। আমার এসব কাজের জন্য অনেক নতুনকে সুযোগ দিয়েছি। এখন যারা ভালো করবে তারা টিকে থাকবে। তারা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। জোর করেতো আর মানুষকে হাসানো যায় না। যারা এই স্পেশাল কোয়ালিটিটা অর্জন করতে পারবে তারা সব জায়গায় ছোট পর্দা বা বড় পর্দা সবখানে ভালো করবে। আর আমার সহযোগিতাতো আছেই।

ইটিভি অনলাইন: চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার কোনো প্রত্যাশা আছে কি না?

চিকন আলী:  হ্যাঁ আছে। সেটা হলো আমি চাই সবাই কমেডি নিয়ে একটু যত্নবান হউক। কমেডি যদি ভালো হয় তাহলে সিনেমার গল্পের গাঁথুনীতে অন্য কোথাও সমস্যা থাকলে সেটা কিন্তু অনেকটা পার হয়ে যাবে। শুধু শুধু কমেডিযুক্ত করার চেয়ে স্ক্রীপ্ট ভালোভাবে করে যুক্ত করলে অনেক ভালো কিছু হবে। কমেডি ছাড়া সিনেমা প্রাণহীন।

আর একটি বিষয়ে বলতে চাই, আমাদের দেশে অনেক অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রত্যেকটা ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু কমেডিয়ানদের জন্য কোনো সম্মাননা নেই। তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ণ করা হয় না। আমি চাই যারা কমেডি করছে তাদের জন্যও সম্মাননার ব্যবস্থা রাখা হউক। কারন চলচ্চিত্রে কমেডি গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট। অথচ এই মানুষদের কোনো ধরণের ক্যাটাগরিতে রাখা হয় না। এটা খুবই কষ্টের একটি বিষয় বলে মনে করি।   

ইটিভি অনলাইন:  চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে এমন কানো তিক্ত অভিজ্ঞতার কি মুখোমুখি হয়েছেন যা বলা যায়?

চিকন আলী:  আমি সব সময় মানুষকে শ্রদ্ধা করে চলি। কখনো কেউ বলতে পারবে না কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি। আমি আমার একদিনের সিনিয়রকেও সম্মান দিয়ে কথা বলি। চলচ্চিত্রে অসংখ্যা মানুষ কাজ করছে সবার সঙ্গে আপন মানুষের মতো ব্যবহার করি। এত ভালোভাবে চলার পরও কিছু ঘটনা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। তম্মধ্যে শ্যুটিং এ একদিন ফাইট ডিরেক্টর আরমান ভাই আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। আমি তার ব্যবহারে অবাক হয়ে যাই। পরে সে আমার গায়েও হাত তোলে। এটি আমাকে ভিষণ কষ্ট দিয়েছিল। এর জন্য কারো কাছে অভিযোগ করিনি। সমিতিতেও তার নামে নালিশ দেই নাই। আমি জানি যে সহে, সে রহে।   

এসি/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি