ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘তথ্য’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০০, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২৩:১১, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশ থেকে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে ‘ডাটা’ বা ‘তথ্য’। তৈরি পোশাক বা অন্যান্য পণ্যের মতই ডিজিটাল তথ্য বহির্বিশ্বে পাঠানো হচ্ছে। ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’ মেলায় এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বা আইপি ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার হামিদুল মেসবাহ।

মেলায় ৩য় দিনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের গ্রিন ভিউ হলে আয়োজিত ‘আইপিআর ইন ডিজিটাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে কী-নোট স্পিকারের বক্তব্যে এসব কথা বলেন মেসবাহ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বা বুদ্ধিভিত্তিক সম্পত্তি নিয়ে কাজ করে আসা হামিদুল মেসবাহ বলেন, “সাইবার জগতে এখন সব থেকে বেশি গুরত্বপূর্ণ কনটেন্ট বা ডাটা। আর এ ডাটাই বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য বিষয়ক ডাটা বা তথ্যগুলো”।

তবে বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এর স্বত্ব আইন লংঘনেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। জানান, বিশ্বের প্রায় ১৩৫টি দেশের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সুরক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭ তম। তবে বিগত ২ থেকে ৩ বছর ধরে বাংলাদেশ উন্নতির দিকে আছে বলেও জানান তিনি।

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি এর সুরক্ষায় প্রটেকশন, ম্যানেজমেন্ট এবং এনফোর্সমেন্ট; এই তিন স্তরে কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এ আইনজীবী।

বাংলাদেশে পাইরেসির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের যথাযথ বিচার পাওয়া যায় না বলেও সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে অনেকেই বুঝে না যে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি কী! পাইরেসির ঘটনায় মামলা করা থেকে বিচারের রায় কখনও কখনও কাঙ্খিত আকারে হয় না।”

এ সময় মামলার দীর্ঘসূত্রতার বিষয়েও আলোকপাত করেন তিনি। বলেন, “পেটেন্ট এণ্ড ডিসাইন এক্ট ১৯১১ সালের। এ আইন এখনকার সময়ে চলে না। তাও যা একটু প্রয়োগ হয়, এ আইনের ক্ষেত্রে তাতে অনেক সময় লাগে। এছাড়া মামলা পরিচালনায় খরচ অনেক। যে কারণে আইনের প্রয়োগ প্রায় শূণ্যের কোঠায়।”

পাইরেসির কারণে দেশের সংগীত ইন্ডাস্ট্রি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে মেসবাহ বলেন, “পাইরেসির কারণে আমাদের দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি আজ প্রায় ধ্বংস। যতটুকু চলছে খুবই সীমিতি পরিসরে। এখনই এ বিষয়ে কাজ করা উচিত।”

তবে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টিকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রনালয়ের অধীনে নেয়া, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি সম্পর্কে নিয়মিত সভা-সেমিনার হওয়া, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আওতাধীন এক্সেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে নেয়া কিছু কাজের কারণে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলেও জানান তিনি।

পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নতুন করে আইন প্রণয়ন এবং তা প্রয়োগের প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার মেসবাহ। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমরা নিজ থেকে চিন্তা করতে সক্ষম রোবট তৈরি করছি। সোফিয়ার কথাই যদি ধরি, তাহলে এই সোফিয়া কাল যদি কোনো অপরাধ করে তাহলে এর দায়ভার কার? যিনি সোফিয়াকে তৈরি করেছেন নাকি সোফিয়া নিজেই; কারণ সে তো নিজে থেকে চিন্তা করে কাজটি করেছে? এসব বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এখন এসেছে। অন্যরা ভাববে আর আমরা বসে বসে দেখব আর অপেক্ষা করব; এমনটা ভেবে থাকলে আমরা ভুল করছি।”

বর্তমান সময়ে মানুষ তাদের নিজেদের নামের ট্রেডমার্ক করে নিচ্ছেন। ডেভিড বেকহাম, শচীন টেন্ডুলকারের মতো তারাকারা নিজেদের নামের ট্রেডমার্ক করছেন। বাংলাদেশের খ্যাতিমান উপস্থাপক নাভিদ মাহমুদ নিজের নামে পেটেন্ট করিয়েছেন বলেও তথ্য দেন হামিদুল মেসবাহ।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ইউএস পেটেন্ট এণ্ড ডিসাইন অফিসের (ইউএসপিটিও) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান শিল্পী ঝা। তিনি বলেন, “আমরা অনেক সময়েই নকল পণ্য বা ডাটা ব্যবহার করছি। এরজন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যেমন ধরুন টাকা সাশ্রয়ের জন্য ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানের টুথপেস্ট ব্যবহার না করে ১০টাকা দিয়ে একটি ভেজাল পেস্ট কিনলেন। এতে দাতের ক্ষতিই হচ্ছে। এই ১০টাকাই আপনার লস। তাই অন্যের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টির ন্যায্য মূল্য দিতে হবে।”

ইউএসপিটিও এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা ইভানসি উইলিয়ামস বলেন, “পাইরেসি যারা করছে তাদের বিচার করা যাচ্ছে না। যে কারণে অন্যরা উৎসাহী হচ্ছে। পাইরেসি করে এমন কিছু ব্যক্তিদের যদি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয় তাহলে অন্যরা নিরুৎসাহিত হবে।”

সেমিনারের সঞ্চালনা করেন বেসিস এর সভাপতি আবদুল জব্বার। মেধা স্বত্ব আইনের দুর্বল দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি যখন ১৯৮৯ সালে আমার সফটওয়্যার বিজয়ের পেটেন্ট করতে যাই, তখন আমাকে ‘লিটারেরি ওয়ার্ক’ হিসেবে পেটেন্ট করতে হয়। ২০১৭ সালে এসেও আমাকে তাই করতে হয়। সফটওয়্যারের পেটেন্ট এটি এখনও অনেক জায়গায় স্বীকৃত নয়।”

দেশের কপিরাইট বোর্ডের অন্যতম এ সদস্য বলেন, “আমি কপিরাইট বোর্ডের সদস্য। তবে শেষ কবে আমারা বোর্ড সভায় বসেছি তা ভুলে গেছি।”

সভায় অংশ নেয়া প্রতিনিধিরা জাতীয় ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান।

 

/ডিডি/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি