ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

এখনো জমেনি ঈদের বাজার: আশাবাদী বিক্রেতারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:০১, ২৩ মে ২০১৮

ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

রোজা শেষ হলেই ঈদ। ঈদের আনন্দের বড় একটি অংশ জুড়ে থাকে কেনাকাটা। ধনী গরীব নির্বিশেষে ঈদ উপলক্ষে কেনা কাটা করে থাকে। নিজ নিজ সামর্থের কেনা কাটায় বড় অংশ থাকে পোশাক। এবারো ঈদ উপলক্ষে পোশাকের বাজার কেমন জমেছে তা দেখতে গতকাল দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন যমুনা ফিউচার পার্কে গিয়ে ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

দুপুর একটা। বাইরে বৃষ্টি। এর মধ্যেও দেখা গেল যমুনা ফিউচার পার্ক- এর মেইন গেইটে মানুষের জটলা। মার্কেটের ভিতরে শুনশান নীরবতা হলেও কয়েকটি দোকানে দু`এক জন করে ক্রেতাকে ঘুরা ফেরা করতে দেখা গেল। তেমনি একজন ক্রেতা আবুল মনছুর। তিনি বাড্ডা এলাকায় থাকেন। পেশায় ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী। আবুল মনছুর তার ৬ বছর বয়সী সন্তানের জন্য শার্ট, পাঞ্জাবী ও প্যান্ট কিনেছেন। বাকি কেনা কাটা কখন করবেন জানতে চাইলে তিনি বললেন, আরো কয়েকদিন যাক। ছেলে বায়না ধরেছে। তাই নিয়ে যাচ্ছি।

তেমনি আরেকজন ক্রেতা মাহবুবুল আলম। পেশায় তিনি একজন প্রকৌশলী।  অনেকগুলো প্যাকেট দেখা গেল তার হাতে। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, পরিচিত আত্মীয় স্বজন, বাসার কাজের লোকজনদের জন্য কিনে ফেললাম। আরো কিছুদিন যাক। তখন নিজেদের জন্য কেনাকাটা করবো।

♦জমে উঠেনি ঈদের বাজার

ঈদের বাজার বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে পরিচিত দৃশ্য। শপিং মলগুলোতে নারী পুরুষের ভীড়, দরদাম, দোকানের কর্মচারীদের নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা। তার ছিঁটে ফোঁটাও এখনো শুরু হয়নি রাজধানীর অভিজাত শপিংমল হিসেবে পরিচিত যমুনা ফিউচার পার্কে। বরং এক ধরনের শান্ত নিরিবিলি ভাব। কেন এমন অবস্থা জানতে চাইলে কে ক্রাফট- এর শোরুম ম্যানেজার আমানউল্লাহ খান বলেন, রোজা শুরু হয়েছে মাসের শেষের দিকে। মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই। বেতন বোনাস হয়নি এখনো। বেতন বোনাস হলে ক্রেতাদের চাপ বাড়ে।

আমানউল্লাহ খান আরো বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেচাকেনা বাড়লেও এটাকে ঈদের বাজার বলা যায় না। তবে আগামী শুক্র ও শনিবার থেকে বেচা কেনা বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

অনেকটা একই কথার পুণরাবৃত্তি করলেন অঞ্জন`স- এর যমুনা ফিউচার পার্ক শাখার শো`রুম ম্যানেজার আবুল হাসনাত। তিনি বলেন, বেচা কেনা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। তবে ঈদের আমেজ নিয়ে এখনো বেচা কেনা শুরু হয়নি। সামনের শুক্রবার থেকে জমে উঠতে পারে। গত বছর এমন সময়ে বেচা কেনা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর আরেকটু ভালো ছিল। তবে মাসের শেষ দিকে রোজা শুরু হওয়ায় মানুষ এখনো শপিং মুখী হচ্ছেনা।

আড়ং যমুনা ফিউচার পার্ক শাখার ম্যানেজার পারভীন শায়লা মিতা বলেন, রোজা রেখে মানুষের শপিং করার এনার্জী থাকে না। সাধারণত রোজার আগে বেচা কেনা যা থাকে রোজা শুরু হওয়ার পর প্রথম সাত আট রোজা পর্যন্ত তাও থাকেনা। পারভীন শায়লা মিতার সাথে কথা বলে জানা যায়, গত দু`বছর আড়ং শবে বরাত থেকে তাদের ডিসপ্লে দিয়েছে। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়। আড়ং- এর বেশ কিছু নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষে নতুন ক্রেতাও যোগ হয়। পনের রোজার আগ পর্যন্ত দুপুরের আগে বেচাকেনা হলেও পনের রোজার পর থেকে ইফতারের পরেও বেচা কেনা হওয়া শুরু হয়।

বৃষ্টির কারণে বেচা কেনা কম কি না এমন প্রশ্নের জবাবে একমত হলেন না রঙ বাংলাদেশ- এর শোরুম ম্যানেজার মো. সুমন। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, যমুনা ফিউচার পার্কে যারা শপিং করতে আসে তাদের অনেকেরই গাড়ী আছে। বৃষ্টি এখানে বেচা কেনায় কোনো প্রভাব ফেলেনা। তবে এখনো মানুষ ঈদের আমেজ নিয়ে শপিং করতে বের হয়নি।

পোশাকের জগতে অভিজাত ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত জেন্টল পার্ক। যমুনা ফিউচার পার্কে জেন্টলপার্ক- এর যে শো রুমটি আছে তার ম্যানেজার এমডি মামুন সরকার। এখনো অফিসগুলো বেতন-বোনাস না হওয়ায় মানুষ শপিং করতে আসছে না এমন যুক্তি মানতে নারাজ তিনি। তার ভাষায়, অধিকাংশ ক্রেতার ধারণা সময় যতো যায়, বাজারে পোশাকের বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব ততো বাড়ে। তাই পনের রোজার পরেই মানুষ শপিং মুখী হয়। তাছাড়া প্রথম দিকের রোজাগুলোতে মানুষ আরাম আয়েশে কাটাতে চায়। ঘরে ইফতার করে। তাই এখনো জমে উঠেনি ঈদের বাজার।

ক্যাটস আই-এর শোরুম ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সামনে কী হয় বুঝা যাচ্ছেনা। তবে এখনো অবস্থা খুব মন্দা। তার ভাষায়, রোজার আগেও ভালো বেচা কেনা হতো। কিন্তু প্রথম রোজায় বেচা কেনার অবস্থা খুব খারাপ।

কয়েকবছর ধরে পোশাকের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইনফিনিটি। প্রতিষ্ঠানটির যমুনা ফিউচার পার্ক শাখায় আলাপ হলো তাদের সহকারী ম্যানেজার শোভন-এর সাথে। শোভন আশা করছেন, দশ-বারো রোজার পর ক্রেতা সমাগম বাড়বে।

 

♦পাঞ্জাবি ও শাড়ির চাহিদা বেশি

পুরুষের জন্য ঈদ পোশাক মানেই পাঞ্জাবি। তবে পাশাপাশি শার্ট প্যান্টের চাহিদাও আছে। মেয়েরা কিনছে থ্রি পিস। কয়েকটি দোকানে কথা বলে দেখা গেল ওয়েস্টার্ন ড্রেস-এর চাহিদা ও আছে। যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানগুলোতে থ্রি পিস এর মূল্য সর্বনিম্ন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা। মেয়েদের কুর্তি বিত্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। স্কার্ট ও টপস পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন  এক হাজার ৫০০ টাকা সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকায়।

সবচেয়ে বেশি চাহিদা শাড়ির। শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। বাচ্চাদের নানা ধরণের পোশাক পাওয়া যায় সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা। ছেলেদের বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবি সর্বনিম্ন ১,৬০০ টাকা সর্বোচ্চ ৮,০০০ টাকা। ছেলেদের ফরমাল শার্ট পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ৯৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ২০০০ টাকা। ক্যাজুয়াল শার্টের মূল্য ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। ছেলেদের পলো শার্ট ৭৫০ টাকা থেকে ১৯৫০ টাকা। প্যান্ট (ডেনিম) ২৪৫০ টাকা থেকে ৩৫৫০ টাকা, প্যান্ট (গ্যাভার্ডিন) ২২০০ থেকে ৩২০০ টাকা। মেয়েদের ওয়েস্টার্ন ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে ১৩৫০ টাকা থেকে ১৭৫০ টাকায়, টিনএজ কালেকশন-এর সর্বনিম্ন মূল্য ১৪৫০ টাকা। বিভিন্ন পার্টি ড্রেস পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। মেয়েদের আকর্ষণীয় গাউন পাওয়া যাচ্ছে এখানে ৪ হাজার ৭৯০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৪৫০ টাকা।

টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি