কাঁদলেও বুঝতে দিলেন না মুশফিক

খেলার মান নিয়ে ভক্ত কিংবা বোর্ডে কোনো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা হতেই পারে। সেই খেলোয়াড় দায়িত্ববান হলে এসব সমালোচনার মধ্যে নিজেকে শুধরে নিতে পারেন, নিজের যোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু কোনো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা, দলের মধ্যে গ্রুপিংয়ের অভিযোগ তোলা হলে তখন সেই খেলোয়াড় বিষয়টাকে খুব সহজভাবে নেবেন না- এটাই স্বাভাবিক। আর অভিযোগ যদি পুরোপুরি মিথ্যা হয়, তবে সেই খেলোয়াড় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে পারেন।

জাতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমকেও এমন একটি অভিযোগ খুব মর্মাহত করেছে। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ কখনও কেউ তুলবে, সেটা তিনি ভাবতেই পারছেন না।

আনীত অভিযোগ নিয়ে মুশফিক এতটাই মর্মাহত হয়েছেন যে, এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে তার কান্না চলে এসেছিল। চোখ ছলছল করে উঠছিল। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত কান্না চেপে রেখে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান তিনি।

বিপিএলের ফ্রাঞ্চাইজি বরিশাল বুলসের অন্যতম মালিক আউয়াল চৌধুরী ভুলু মুশফিকুর রহীমের বিরুদ্ধে একদিন আগে কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন। একইসঙ্গে মুশফিকের অধিনায়কত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। এছাড়া মুশফিকের বিরুদ্ধে দলের ভেতর গ্রুপিংয়েরও অভিযোগ তোলেন তিনি।

বিপিএলের গত আসরে মুশফিকুর রহীম আইকন ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছিলেন বরিশাল বুলসের হয়ে। তখনকার কোনো বিষয়ে দু’পক্ষের মনোমালিন্যের জেরেই হয়তো মিডিয়ার সামনে এসে এভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন ভুলু। আর কোনো ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকতেই পারে। ভুলুর কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে জানাতে পারতেন। ডিসিপ্লিনারি কমিটি আছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারত। কিন্তু প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ করায় মুশফিকুর রহীম অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন।

ভুলুর এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জেরে মুশফিকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল এবং বিসিবি। মুশফিককে নিয়েই তারা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার চৌধুরী মল্লিক নিজেও বলেছেন, ‘মুশফিকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি (ভুলু) আমাদের জানাতে পারতেন; কিন্তু প্রকাশ্যে এমন মন্তব্য করা তার মোটেও ঠিক হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে মুশফিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, আপনি এ ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন? জবাব দিতে গিয়ে মুশফিক ধরে আসা গলায় বললেন, ‘গত ১২ বছর ধরে আমি জাতীয় দলে খেলছি। আমার সম্পর্কে এমন অভিযোগ এর আগে কখনও ওঠেনি। তিনি আমাকে খারাপ খেলোয়াড় বলতে পারেন; কিন্তু আমাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলতে পারেন না। আমি আশা করব, মল্লিক ভাইয়েরা বিষয়টা দেখবেন। আমি তাদের জানিয়েছি। আজ আমার সাথে হয়েছে, সামনে যে অন্য কোনো খেলোয়াড়ের সাথে হবে না, তার গ্যারান্টি কি? এইটুকু সম্মান তো একজন খেলোয়াড় পেতেই পারেন।’

কথা বলতে বলতে অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন মুশফিক। এসময় তার কণ্ঠরোধ হয়ে আসছিল বারবার। চোখও ছলছল করতে থাকে এবং একপর্যায়ে কান্না চেপে তিনি লাউঞ্জ থেকে সংবাদ সম্মেলন শেষ না করেই বেরিয়ে চলে যান।

ডব্লিউএন