ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ৫ বছর

কাজে ফিরতে পারেনি ৪৮ শতাংশ শ্রমিক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২৩, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২১:২৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৪৮ শতাংশ কাজে ফিরতে পারছেন না। শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় তাদের এই করুণ ভাগ্য বরণ করে নিতে হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ পোশাক-কারখানা দুর্ঘটনার ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে একশন এইড বাংলাদেশ’র একটি গবেষণা বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ঢাকায় ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গবেষণা ও বিশ্লেষণপত্র তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। এতে সরকার, মালিক, বিদেশী ক্রেতা, শ্রমিক সংগঠন এবং রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকসহ সব পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিষ্ঠানটির গবেষণায় বলা হয়, ওই দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও পোশাক খাতের উন্নয়নে সরকার, মালিক ও ক্রেতারা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিশেষ করে শ্রমিকদের নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকর, মজুরি ও ভবন নির্মাণ বিষয়ে যথাযথ আইন ও উদ্যোগের অভাবে এখনও পোশাক খাতের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর প্রতি বছরের মত এবারও গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটি। গবেষণায় বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে দুর্ঘটনার শিকার জীবিত ২০০ শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে একশনএইড। গবেষণায় দেখা যায়, জীবিত শ্রমিকদের মধ্যে ১২ শতাংশের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর ২২ শতাংশ শ্রমিক এখনো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। গবেষণায় অংশ নেয়া ৪৮ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক এখনও কোন কাজ করতে পারছেন না। অন্যদিকে মাত্র ২১ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমিক পোশাক কারখানায় আবারও যুক্ত হতে পেরেছেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন একশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার নুজহাত জেবিন।

শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরার পাশাপাশি রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী পোশাক খাতের উন্নয়নে যে সমস্ত সংস্কার ও নীতগত উদ্যোগ সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষ নিয়েছিল তারও পর্যালোচনা করা হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের শিল্প খাত: উদ্যোগ ও পরিবর্তন’ নামক বিশ্লেষণটি উপস্থাপন করেন ডেভেলপমেন্ট সিনার্জি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা নানাভাবে সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে এই ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে কোন মানদন্ড ঠিক করা হয়নি। নেই আইনী কোনো কাঠামোও। আবার দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার এবং বিদেশী ক্রেতারা। তবে তাদের কাজের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভবনের উন্নয়ন অর্থাৎ কারীগরি সংস্কার। শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে খুব কমই কাজ হয়েছে’।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকরা প্রথমদিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দ্রুত কিছু টাকা পেয়েছেন। তবে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা। এই ধরণের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আমরা ১৫ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। তবে আইনে মাত্র ১ লাখ টাকা দেয়ার কথা উল্লেখ আছে, যেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আর আইনের দোহাই দিয়ে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দিতে চান না।

তিনি আরও বলেন, ভবনের কাঠামাগত উন্নতি হয়েছে, তবে সেটি হয়েছে ক্রেতাদের আগ্রহে। ভবনের প্রতিনিয়ত পরিদর্শন ও মান ঠিক করার ব্যাপারে খুব বেশি নজর দেয়া হয়নি। কারণ এখনও মাত্র ৩১২ জন পরিদর্শক দিয়ে পুরো শিল্প খাতের পরিদর্শন করা হয়। যেখানে পোশাক শিল্প কারখানার সংখ্যাই ৫ হাজারের উপর।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান (অব:) বলেন, সাভারের দুর্ঘটনার পরও আমাদের টনক নড়েনি। এখনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিধিমালা মানা হচ্ছে না। যে যার মত করে ভবন তৈরি করছেন। আবার সাভার দুর্ঘটনার পর অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এখোনো তা ভাঙ্গা হচ্ছে না। কারখানার যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কিনা তা দেখারও কেউ নেই। নেই জবাবদিহিতা।

ভবনের ঝুঁকিপূর্ণতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)’র আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, সঠিকভাবে ভবন নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছিল সেই ৯০-এর দশকে। তবে সেটি এখনও আইনে রূপান্তরিত হয়নি। ফলে মানুষ বিধিমালা মানে না। ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয় না। সাভারের ঘটনা তার জ্বলন্ত উদাহরণ।

আরকে/ এমজে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি