ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা কোন পথে?

প্রকাশিত : ১৫:৩৬, ৩১ অক্টোবর ২০১৭ | আপডেট: ১৮:৪১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

কাতালোনিয়া স্পেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যা স্পেনের উত্তর-পূর্ব দিকে আইবেরিয়ান পেনিনসুলার কাছাকাছি অবস্থিত। কাতালোনিয়ানদের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষা। অঞ্চলটি বহুকাল ধরে পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধ ও আধুনিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।

১৯৩৬-১৯৩৯ পর্যন্ত স্পেনে যখন গৃহযুদ্ধ চলছিল তখনও কাতালোনিয়ান অঞ্চলটি পূর্ন স্বাধীনতা ভোগ করে। তাই বলা যেতে পারে যে, কাতালোনিয়ানদের ধমনীতে স্বাধীনতার রক্তপ্রবাহ বহুকাল ধরেই চলে আসছে, যা এখনো হচ্ছে।

গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালের আগ পর্যন্ত স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিস ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাসনের সময় কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ছিল। কিন্তু ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর কাতালোনিয়ার জাতীয়তাবাদী জনগণের তীব্র আন্দোলনের ফলে তাদেরকে আবার পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার।

মাঝেমধ্যেই কাতালোনিয়ানরা বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এবং স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। একপর্যায়ে কাতালোনিয়ানরা তাদের নিজেদেরকে একটি স্বাধীন স্বত্তা হিসেবে দেখতে চাইল। স্পেনের কেন্দ্রীয় শাসন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র ঘোষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করল।

কাতালান স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি মূলত ৪টি  (বার্সেলোনা, জিরনা, লেইদা এবং তারাগোনা) প্রদেশ নিয়ে গঠিত। এই প্রদেশগুলোর মধ্যে বার্সেলোনার পরিচিতি ফুটবলের স্বর্গরাজ্য ও পর্যটন নগরী হিসেবে।

কাতালোনিয়ানদের দীর্ঘ দিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ১ অক্টোবর গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র বাধা সত্ত্বেও কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাকামী মানুষ দমে যায়নি বরং তারা তীব্র প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার জন্য গণভোট অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে ৯০% ভোট পড়ে। 

যদিও স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার কাতালোনিয়ানদের এই গণভোটকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা দিয়েছে। স্পেনের সংবিধানের ১৫৫ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বিদ্রোহী অঞ্চলের কর্তৃত্ব নেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় সরকারের আছে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবে স্পেনের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকার ভেঙ্গে দিয়েছেন এবং আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনসহ অন্যদের বহিস্কারও করেছে। সেই সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছে যে, আগামী ২১ ডিসেম্বর কাতালোনিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচন পূর্ববর্তী মাঝখানের এই সময়ে কাতালোনিয়ার শাসনভার স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় এর নেতৃত্বে গঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকবে বলে ঘোষণা করেন।

এখন প্রশ্ন হলো, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন তাহলে কোন দিকে যাচ্ছে ? কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে অটল থাকলেও সত্যিই কি তারা বিশ্বের বুকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে? আন্তর্জাতিক রাজনীতিক পর‌্যবেক্ষকদের বেশিরভাগই মনে করছেন, কাতালোনিয়ানদের স্বাধীনতা বাস্তবে রূপ নাও নিতে পারে। এর একটি কারণ হলো কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্ট গত ২৭ অক্টোবর স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের পরাশক্তিধর দেশগুলোর একটিও তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেনি। কোনো দেশ এই স্বাধীনতাকে স্বীকৃতিও দেয়নি।

এছাড়া পরাশক্তিধর দেশগুলোসহ জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অধিকাংশ দেশই কাতালোনিয়ার এই স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচ্ছিন্নতাবাদী অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী আন্দোলন হিসেবে মনে করছে।

সবশেষে বলা যেতে পারে, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলন কোথায় গিয়ে গড়ায় তা দেখতে এই গ্রহের বাসিন্দাদের আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে অবস্থাদৃষ্টে এ কথা বলা যেতে পারে যে, কাতালোনিয়ানদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বাস্তবতা সুদূর পরাহত-ই মনে হচ্ছে।

লেখক

সহকারী সচিব

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন

E-mail: mamunugcbd@gmail.com

 //এআর //


** লেখার মতামত লেখকের। একুশে টেলিভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে।
Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


টেলিফোন: +৮৮ ০২ ৫৫০১৪৩১৬-২৫

ফ্যক্স :

ইমেল: etvonline@ekushey-tv.com

Webmail

জাহাঙ্গীর টাওয়ার, (৭ম তলা), ১০, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

এস. আলম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি