ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

এক নজরে কফি আনান

কূটনীতিক থেকে মহাসচিব, বদলে দিয়েছেন জাতিসংঘও

প্রকাশিত : ১৭:৩০, ১৮ আগস্ট ২০১৮

ইরাক যুদ্ধের শুরু থেকেই কফি আনান নামটি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি পেতে থাকে। যুদ্ধ বন্ধে বিশ্বের এপাড়-ওপাড় দৌড়ঝাপসহ নানা পদক্ষেপ নিলেও যুক্তরাষ্ট্র সব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরাক আক্রমণ করে। তখন জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ এ মহাসচিব। জাতিসংঘের আর কোনো প্রেসিডেন্ট জনপ্রিয়তায় তাকে ছাড়িয়ে গেছেন বলে এখনও পর্যন্ত কেউ দাবি তুলেননি। কেবল মহাসবিচ থাকাকালেই নয়, পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার রক্ষায় গড়ে তুলেন আনান কমিশন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশটি থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তাদের মানবেতর জীবনের অবসানে আনান কমিশনের ব্যানারে কফি আনান কয়েক দফা সুপারিশ করেন। তবে বিশ্বকে সুখের সাগরে ভাসিয়ে মহাসিন্ধুর ওপাড়ে পাড়ি
দিয়েছেন খ্যাতিমান এ মহাসচিব।

কফি আনান জাতিসংঘের সপ্তম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন ১৯৯৭ সালে। এরপর টানা দুই মেয়াদে বিশ্বের জাতিসমূহের প্রধান সংগঠন জাতিসংঘের দায়িত্ব পালন করেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। আফ্রিকার দেশ গানার কোনো সদস্য হিসেবে এই প্রথম জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটিতে বসছিলেন তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পরই কফি আনান জাতিসংঘকে পম্চিমা বিশ্বের করায়ত্ত থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন আফ্রিকার মানবাধিকার, আইনের শাসন, সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি বিষয়
নিয়ে কাজ করেছিলেন।

জাতিসংঘ যে কারণে কফি আনানের নামটি আজীবন স্মরণ রাখবে তা হলো, সংস্থাটিতে শান্তি রক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি। তার আমলেই যাত্রা শুরু করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের। মানবাধিকার কমিশন বর্তমানে রোহিঙ্গা সমস্যা, ফিলিস্তিন সংকট, শরণার্থী সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী কমিশনও।

এদিকে একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে যখন বিশ্ব এইডস নামক মহামারির সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তখন বিপুল অংকের ফান্ড যোগাঢ় করেছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ এ ব্যাক্তিটি। এদিকে ১৯৯৮ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার উপক্রম হলে দেশটির নাগরিকদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে দিনরাত কাজ করে গেছেন। ইরাক যুদ্ধ যাতে সংঘটিত না হয়, সে জন্য দেশটিতে বারবার জাতিসংঘের পরিদর্শক প্যানেল পাঠানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি নিজে দেশটিতে কয়েকবার সফরে গেছেন। এদিকে ইন্দোনেশিয়া থেকে তিমুর-লেস্টের স্বাধীনতা অর্জনে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখেন।

২০০৬ সালে ইসরায়েল যখন লেবানন দখলে নিতে যাচ্ছিল, তখন দেশটি থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমনকি দুই শত্রু হিজবুল্লাহ ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ প্রশমনেও তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘে তার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ নানা অঙ্গ সংঘটনের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

জন্ম:

১৯৩৮ সালের ৮ এপ্রিল ঘানার কুমাসিতে জন্মগ্রহণ করেন কফি আনান। একইদিন উপকূলীয় এলাকায়, তারই বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেন আরেক মেয়ে এন্না। এন্না তার জময বোন ছিল। ১৯৯১ সালে এন্নার মৃত্যু হয়। তার দাদা ও নানা দুইজনই উপজাতীয় এলাকার ওই গোষ্ঠীটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ছোটো বেলা থেকেই নেতৃত্ব দেওয়ার সব গুণ তার মধ্যে দেখা যায়। শুক্রবারে জন্ম গ্রহণ করায় তার নাম রাখা হয় আন্নান। ওই উপজাতি আন্নান শব্দটি সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করতো।

শিক্ষা: কফি আনান ১৯৬১ সালে গানার ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি’ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এরপর জেনেভার ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ডিগ্রি নেন। এরপর ১৯৭২ সালে ম্যাসাচুটস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের উপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

পুরস্কার: ২০০১ সালে জাতিসংঘের সঙ্গে মিলিতভাবে শান্তিতে নোবেল পান তিনি। নোবেল পুরস্কার ছাড়াও বহু দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার, মেডেল ও সম্মাননা পেয়েছেন।

সূত্র: জাতিসংঘের ওয়েবসাইট, সিবিসি, বিবিসি
এমজে/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি