ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

রমজানপণ্যের অস্বাভাবিক দাম

কৃষক বঞ্চিত হলেও পকেট ভারী মধ্যস্বত্বভোগীর

প্রকাশিত : ১১:৫৬, ২০ মে ২০১৮ | আপডেট: ১০:০৫, ২১ মে ২০১৮

অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে রমজাননির্ভর কৃষিপণ্যের দাম। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত এ পণ্যগুলোর দামে দেখা গেছে বিশাল পার্থক্য। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত ধাপে ধাপে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীরা কারসাজি করে মুনাফা পেলেও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। উৎপাদকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হলেও পকেট কাটা যাচ্ছে ভোক্তার। খুচরা বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন ভোক্তারা।

দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি বেগুন ৩০ টাকায় বিক্রি হলেও ঢাকার খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। একইভাবে ১৫ টাকা কেজিদরের কাঁচামরিচ ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে রমজানের সব কটি পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত হলেও দাম বাড়ানো হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। যে যেভাবে পারছে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বেগুন ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ৯০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা, পুঁদিনাপাতা ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইদিন কুমিল্লার নিমসারে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি বেগুন ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৫ টাকা, দেশি শসা ৩০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা, পুঁদিনাপাতা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেখা গেছে, কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায় প্রতি কেজি বেগুনের দামের ব্যবধান ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এছাড়া প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, শসা ৫০ টাকা, ধনেপাতা ৬০ টাকা ও পুঁদিনাপাতায় ১৫০ টাকা দামের ব্যবধান ছিল।

কুমিল্লার নিমসারের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, হাতবদল হয়ে সবজি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায় যায়। পরিবহন খরচ ও পথে পথে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত হয়ে খুচরা বাজারে যেতে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যায়। খুচরা বিক্রেতারা সবজির দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি করেন।

বগুড়ার সর্ববৃহৎ সবজি বাজার মহাস্থানহাটে কৃষকেরা যে কাঁচামরিচ ১৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি করেন তা আড়তদার (মধ্যস্বত্বভোগী) বিক্রি করছেন ১৮ টাকা দরে। আর মাত্র ১০০ গজ দূরে মহাস্থান বাজারে ২৫ টাকা; ১২ কিলোমিটার দূরে শহরের বিভিন্ন বাজারে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সেই কাঁচামরিচ ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বগুড়ার শিবগঞ্জের মানকোর গ্রামের কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, সব ধরনের সবজি বিক্রি করেই তারা লোকসান গুনছেন। কারণ মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে তারা কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হন। অপরদিকে মধ্যস্বত্বভোগীরা বেশি লাভে পণ্য বিক্রি করায় ভোক্তারা পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।

রাজশাহীর মোহনপুরের কেশরহাট মোকামের ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনেন। রোজ এ মোকাম থেকে বেগুন, গাজর, শসা, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি নিয়ে শতাধিক ট্রাক ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। মোকামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার কৃষক পর্যায় থেকে প্রতি কেজি বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকায় কেনা হয়। এছাড়া শসা ৩০ টাকা ও লেবু ৮ টাকা থেকে ১০ টাকা হালি ধরে কেনা হয়েছে। অথচ কয়েক হাত ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্য চার থেকে পাঁচগুণ দামে বিক্রি হয়। বাগমারার সাইপাড়া গ্রামের সবজি চাষী আবদুস সামাদ বলেন, চার বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে বেগুন উৎপাদনে খরচ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। ১৫ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। অথচ এই বেগুন কয়েকগুণ দামে ভোক্তারা কিনছেন। তিনি বলেন, ফড়িয়াদের কারণে তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি