ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

গণপরিবহনে নারী হয়রানি বাড়ছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৭, ২০ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১৫:০৮, ২২ জুন ২০২৩

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী মিষ্টি বড়ুয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তাই রোজ তাকে পাবলিক বাসে চড়তে হচ্ছে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি স্বীকার করেন, নিতান্ত বাধ্য হয়েই তারা বাসে উঠে যাতায়াত করেন। তার ভাষায়, যদিও এখন পুরুষ ও নারী যাত্রীর সংখ্যা সব জায়গায় সমান, তবুও মেয়েদের জন্য বাসে সিট থাকে গুটিকয়েক। তার ওপর সেই সিটগুলো সব সময় পুরুষের দখলে থাকে। অনেক সময় বাসের হেল্পার-চালক বলার পরও সেসব পুরুষ যাত্রীরা সিট ছাড়ে না। পুরুষ যাত্রীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে দাঁড়ানোর মতো পরিবেশ আমাদের দেশে এখনো সৃষ্টি হয়নি। কারণ অনেক পুরুষ যাত্রী ইচ্ছাকৃতভাবেই গায়ে পড়ে অশোভন আচরণ করার সুযোগ খুঁজে।

কিছুদিন ধরে মেয়েদের জামার পিছন দিকে ব্লেড দিয়ে কেটে দেওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়টিও সম্প্রতি মিষ্টির মত অনেক তরুণীর ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফৌজিয়া হাসনাত জানালেন, ভিড়ের মধ্যে বাসে ওঠতে বেগ পেতে হয়। কারণ একই দরজা দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে ওঠা কষ্টকর। ছাড়া এক্ষেত্রে কিছু পুরুষ যাত্রী পেশীর জোর দেখায়, নয়তো গায়ে হাত দিয়ে অশোভন আচরণ করে। তাছাড়া সাধারণত সিটে বসলে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ যাত্রী ইচ্ছা করেই মেয়েদের গা ঘেষে কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করে।

উপরের অভিযোগগুলোর পুনরাবৃত্তি করেই নতুন সমস্যার কথা জানালেন স্কুল শিক্ষিকা নুসরাত হেনা। তিনি বলেন, বাসে ওঠার সময় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা হেল্পার গায়ে হাত দিবেই। বিনা প্রয়োজনে পিঠে হাত দেওয়া হেল্পারদের বদ অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরো জানালেন, টেম্পুতে জায়গা সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে অনেক পুরুষ যাত্রী হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু লাগিয়ে অশোভন আচরণ করে বা কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।

হেনা, ফৌজিয়া বা মিষ্টিদের এসব অভিযোগ নতুন নয়। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারী যাত্রীর সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাসে নারীদের জন্য সিট সংখ্যা বাড়ছে না। নারী যাত্রীর জন্য বিআরটিসি কিছুদিন আগেও আটটি বাস চালু রেখেছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত নারী যাত্রী নেই, তাই লস দিতে হচ্ছে- এমন অজুহাতে বাসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ওই আটটি বাসও নারীদের জন্য রাজধানীতে অপর্যাপ্ত ছিল। রাজধানীর ৭৩টি মোড়ে প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় ভিড় থাকে। এ ভিড়ের মধ্যে নারী যাত্রীদের পোহাতে হয়- এসব সমস্যা। অপরাধী অপরিচিত হওয়ায়ও আমাদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি না পাওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের এসব ভোগান্তি মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া উপায় থাকে না।

শুধু পুরুষ যাত্রী নয়; বাসের চালক ও হেল্পারদের আচরণও নারীদের জন্য বিব্রতকর। এমনটাই মনে করেন, ফিমেল এডুকেশন ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান জিনাত রেহানা ইলোরা। তিনি বলেন, নারীদের অসম্মান বা বিব্রত করার সস্তা একটা ধরন হল, নারীদের উদ্দেশ্য করে বা তাদের সামনে অশ্লীল শব্দ, বাক্য ও অঙ্গভঙ্গি করা। এ বিষয়ে লোকাল বাসের ড্রাইভার ও হেল্পাররা বেশ পারদর্শী।

তবে এ ব্যাপারে শিক্ষা ও সামাজিক-সচেতনতার বিকল্প নেই, এমনটাই বোঝা যায়, কবি ঋতুপর্ণা আজাদ অর্চির কথায়। তিনি বলেন, গণপরিবহনে বেশি সমস্যা তৈরি করে মধ্যবয়স্ক লোকজন। তারা গায়ে পড়ে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন শুরু করে, যা কোনোভাবেই অপরিচিত লোকের কাছে কাম্য নয়। এখনকার শিক্ষিত সচেতেন তরুণরা এ ব্যাপারে বেশ ভদ্র। তবে শ্রমিকশ্রেণির লোকেরা গায়েপড়ে নোংরামী করে। এটাকে যৌন হয়রানি ছাড়া অন্য কোনোভাবেই অভিযুক্ত করা যায় না।

প্রতিনিয়ত নারী যাত্রীরা এভাবে হয়রানির শিকার হলেও নীরব প্রশাসন। নেই বিকল্প কোনো উদ্যোগ। কেন? এ ব্যাপারে আইন কী বলে? হ্যা, আইন জানতেই যোগাযোগ করেছিলাম ব্যারিস্টার মিতি সানজানার সঙ্গে। তিনি বলেন, এ জাতীয় অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে মানবিক সচেতনতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। পেনালকোড, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন- এ ধরনের হয়রানিমূলক আচরণের জন্য শাস্তির বিধান রেখেছে। কিন্তু খুন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে যেভাবে চিহ্নিত করা যায়, গণপরিবহনে নারীকে হয়রানির ক্ষেত্রে সেভাবে শনাক্ত করা যায় না। পুরো ব্যাপারটিতে নারীদের ঝামেলা পোহাতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নারী মুখ খোলার বা বিচার চাওয়ার ঝামেলায় যান না। এ ব্যাপারে মহামান্য হাইকোর্টে ২০০৮ সালের দিক নির্দেশনা আছে। যতক্ষণ কোনো আইন নেই, ততোক্ষণ এ দিক নির্দেশনা আইন হিসেবে গণ্য হবে। তবে সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতা গড়ে তোলার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। সামাজিকভাবে আমরা এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সক্ষম হবো, জনসচেতনতা গড়ে উঠবে- এটাই প্রত্যাশা।

 

/ডিডি/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি