ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

গুগল তথ্য দেয় ডিএসই দেয় সমাধান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০৫, ১৬ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১২:৩৪, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘অনলাইন কমিউনিটি’র ধারণা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর তাই ফেসবুকের বিভিন্ন ‘গ্রুপে’ ব্যবহারকারীদের কার্যক্রম দিন দিন বেড়েই চলছে। ফেসবুকের বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের মধ্যেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে যে কয়েকটি বহুল আলচিত এবং প্রশংসিত গ্রুপ আছে তার মধ্যে অন্যতম ‘ডু সামথিং এক্সেপসনাল’ বা ‘ডিএসই’। ধরুন আজিমপুর থেকে কেউ উত্তরা যাবে। যাবার পথ বলে দিতে পারে গুগল। কিন্তু কোন বাহনে দ্রুত যাবেন তা বলে দিবে ডিএসই।

গ্রুপের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পথ চলা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে অংশ নেয় গ্রুপটির এডমিনিস্ট্রেটর বিথী হক এবং জেবিন ইসলাম। সাক্ষাৎকার নেন একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের সহ-সম্পাদক সোলায়মান হোসেন শাওন।

ইটিভি অনলাইন: ডিএসই গ্রুপের যাত্রা শুরু হল কীভাবে ?

জেবিন: গ্রুপটি চালু হয় প্রায় চার বছর আগে। এটি চালু করেন আশফাকুল ইসলাম ভাই। পরবর্তীতে এর সঙ্গে ইমন খান যুক্ত হন। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এডমিন প্যানেলে সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধানের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্য নিয়েই আমাদের গ্রুপের যাত্রা আরম্ভ হয়। খুব ছোটখাটো সমস্যা থেকে গুরুতর সমস্যা হলেও এর সমাধানে সম্ভাব্য উপায় কী কী হতে পারে তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করাই এ গ্রুপের উদ্দেশ্য।

ইটিভি অনলাইন: এ গ্রুপে কারা কোন ধরনের সমস্যার জন্য পোস্ট করেন? এবং সমাধান কীভাবে দেওয়া হয়?

জেবিন: এখানে যেকোন ব্যক্তিই তার সমস্যার জন্য সাহায্য কিংবা মতামত চেয়ে পোস্ট দিতে পারেন। যেকোন সদস্যের জন্যই এ সুবিধা বিদ্যমান। আর সমাধানগুলো আমাদের গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে থেকেই দেওয়া হয়। কোন সমস্যার জন্য যদি কেউ মনে করেন যে, তার মতামত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে তাহলে সে সেখানে মন্তব্যের মাধ্যমে সমাধান দিতে পারেন। এখন যিনি সমস্যা জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে এখান থেকে পাওয়া কোন সমাধানের রাস্তা অনুসরণ করবেন কী না। অনেক ধরনের সমস্যা আছে যা আমরা আমাদের কাছের মানুষগুলোর সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। আর এর ফলাফল আরও ভয়াবহ হয়। বিষন্নতা গ্রাস করে ফেলে আমাদের। এ ধরনের সমস্যাগুলোও আমাদের গ্রুপে উঠে আসে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান পেলে ওই ব্যক্তি বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

বিথী: এখানে একটি বিষয় উল্লেখ থাকে যে, বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ অথবা অবৈধ এমন কোন বস্তু বা বিষয়ের ব্যাপারে কোন সাহায্য চেয়ে পোস্ট দেওয়া যাবে না। যেমন- কোন একটি অবৈধ জিনিসি একজন ব্যক্তি কোথায় গেলে সন্ধান পাবেন – এমন প্রশ্ন দেওয়া যাবে না। আবার বাবা-মা এর ওপর রাগ করে তাদেরকে দোষারোপ করে কোন পোস্ট অথবা তাদেরকে ছোট করতে পারে এমন কোন কিছু আমরা সমর্থন করি না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে গুরুতর কোন ইস্যুতে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ যেসব সদস্য আছেন আমাদের গ্রুপে তাদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়ে থাকে। এখানে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, আমরা গ্রুপের পক্ষ থেকে কোন সমাধান দেই না। আমাদের কোন সদস্য দিবেন এটাও আমাদের কোন পলিসি না। সমস্যার সমাধান হতে পারে এমন কিছু উপায়ের পরামর্শ দেই আমরা শুধু। ক্ষেত্র বিশেষে সমাধান দিতে পারবেন এমন ব্যক্তি অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেই।

 

ইটিভি অনলাইন: এ গ্রুপের সদস্য হবার যোগ্যতা কী বা কারা এর সদস্য হতে পারেন?

বিথী: এ গ্রুপের সদস্য হতে আলাদা কোন যোগ্যতা বা বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন নেই। এদের আইন এবং আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপর শ্রদ্ধাশীল এমন যে কোন ব্যক্তিই এ গ্রুপের সদস্য হতে পারবেন। একে অপরকে হেয় করা কিংবা হেনস্তা না করে যিনি গ্রুপে পোস্ট বা কমেন্ট করতে চান তিনিই গ্রুপে থাকবেন।

তবে আমাদের সৌভাগ্য যে, আমাদের গ্রুপে বিভিন্ন শ্রেণি এবং পেশার মানুষ আছেন। ছাত্র-ছাত্রী, কবি, সাহিত্যিক, পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীর কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ আছেন আমাদের গ্রুপের সঙ্গে। বিভিন্ন পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ আছেন আমাদের গ্রুপের উপদেষ্টা মন্ডলীতে।

ইটিভি অনলাইন: শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ সদস্য। কীভাবে সম্ভব হল?

জেবিন: বিষয়টা খুব সহজ ছিল না। তবে সবার অংশগ্রহণে সম্ভব হয়েছে। ‘মেম্বার অব দ্য উইক’ নামে আমরা একটি সেগমেন্ট চালু করি। পুরো সপ্তাহে যে সদস্য গ্রুপে সবথেকে বেশি সক্রিয় ছিল তাকে আমরা পুরুষ্কৃত করি। পরবর্তীতে ‘মেম্বার অব দ্য মানথ’ চালু করি আমরা। এ পুরুষ্কারগুলো দিয়ে থাকেন আমাদের গ্রুপের একজন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক চৌধুরী সেরনিয়াবাদ। আমাদের এই সেগমেন্টটি গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। সদস্যদের গ্রুপে সক্রিয় থাকতে আগ্রহ জোগায়। এভাবেই আস্তে আস্তে সবাই গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়।

ইটিভি অনলাইন: গ্রুপের কার্যক্রম কেমন চলছে?

বিথী: আমরা বলব গ্রুপের কার্যক্রম খুবই ভালো চলছে। বিগত প্রায় দেড় বছর যাবত আমরা অনলাইন বা ভার্চুয়াল কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি অফলাইন বা বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। এরজন্য আমরা রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কমিশন বরাবর আবেদন করেছি। আশা করছি অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে এবং আমরা একটি এনজিও হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব। এতে আমাদের কার্যক্রম আরও গতি পাবে।

জেবিন: আমাদের একটি উল্লেখযোগ্য ক্যাম্পেইন ছিল ‘বানান শুদ্ধকরণ’। আমাদের চারপাশে দেখা যায়, অনেক বাংলা ভুল বানানের ছড়াছড়ি। এগুলো শুদ্ধিকরণের একটা উদ্যোগ আমরা নেই। ক্যাম্পেইনটি অনেক প্রশংসিত হয়। এর বাইরে আমরা পথশিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করছি। এর বাইরে আমরা চাকরি প্রার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার ক্লাব, পাত্র-পাত্রী সন্ধানের জন্য ম্যাচ মেকিং এবং চাকরিদাতা এবং চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ক্যারিয়ার ম্যাচসহ গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

ইটিভি অনলাইন: শুরুতে নাম ছিল ডেসপারেটলি সিকিং এক্সপ্লিসিট। এখন ডু সামথিং এক্সেপশনাল। নামের এ পরিবর্তন কেন?

বিথী: ইতোমধ্যে বলা হয়েছে যে আমরা একটি এনজিও হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার লক্ষ্যে জয়েন্ট স্টক কমিশনের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেছি। মূলত এ লক্ষ্যেই গ্রুপের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের ব্যতিক্রমী কিছু করার উদ্দেশ্য আছে এবং আমাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যেন অন্যরাও সমাজের সেবায় অংশগ্রহণ করে এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের নামের মাধ্যমেই আমরা একটি বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে, ব্যতিক্রমী কিছু করুণ।

ইটিভি অনলাইন: নারীদের অধিকার আদায়ে এবং হয়রানি রোধে ডিএসই গ্রুপকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। বিশেষত একটি বিতর্কিত গ্রুপ যেখানে নারীরা হয়রানির শিকার হয় এমন কর্মকাণ্ড বেশি হত তা বন্ধ হতে ডিএসই গ্রুপ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

বিথী: নারীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমাদের গ্রুপ সবসময়ই ভূমিকা পালন করে। আর নারীদের সমস্যাগুলো বেশিরভাগই এমন ধরনের হয় যা পরিবারের কারও সঙ্গে শেয়ার করতে ইতস্তত বোধ করেন তারা। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের গ্রুপের ব্যাপক প্রশংসা আছে। আর আপনি যে গ্রুপ বন্ধের কথা বললেন সেটা আসলেই আমাদের উল্লেখযোগ্য একটি সাফল্য। সে গ্রুপটিতে যেভাবে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছিল তা বন্ধে আমরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি দল গঠন করি। এ দলে আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য বিশেষত পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ আরও কিছু সদস্য ছিল। আমরা সবাই মিলে গ্রুপটাকে বন্ধ করতে সমর্থ হই এবং নারীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের ন্যাক্কার কাজে জড়িতে গ্রুপটির যে সব এডমিন জড়িত ছিল তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সমর্থ হই।

জেবিন: শুধু এগুলোই না। যখনই আমরা নারীদের বিরুদ্ধে এমন কোন হয়রানির খবর পাই চেষ্টা করি সাহায্য করতে। একটি ঘটনার উদাহরণ দেই। এক ব্যক্তি এক মেয়ের ভুয়া ফেসবুই আইডি খুলে সেখানে অনেক আপত্তিকর বিষয় উল্লেখ করেন। এমনকি মেয়েটির বাসার ঠিকানাও দিয়ে দেওয়া হয় সেই ভুয়া আইডিতে। লোকটির উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করা। সেই মেয়েটি যখন আমাদের কাছে সাহায্য চাইল তখন আমরা ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সাহায্যে সেই ব্যক্তিকে আটক করা হল। নারীদের বিরুদ্ধে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা সব সময়ই সরব।

ইটিভি অনলাইন: এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে কখনো আপনারা নিজেরাও হয়রানী বা হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন কী?

বিথী: সত্যি কথা বলতে এমন পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে পরতে হয়। কোন একটি কাজ করলেই একদল মানুষ থাকবেই যারা পিছনে লাগবে। মাঝখানে একবার আমাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল যে, আমাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই আক্রমণ করা হবে। যাই হোক, সবার সহযোগিতায় প্রতিদিন এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। তবে এখানে বলে রাখি, যেদিন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সমাজের জন্য কিছু করব সেদিনই মন মানসিকতা সেভাবেই গড়ে নিয়েছি যে, এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।

ইটিভি অনলাইন: ফেসবুকে অনেক গ্রুপই যেমন জনপ্রিয় তেমনি অনেক গ্রুপই বিতর্কিত। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন আপনারা?

বিথী: আমরা সরাসরি কোন মন্তব্য করব না। তবে এটুকু বলব যে কোন কাজই সততা নিয়ে করতে হয়। যখন কাজের সততা অথবা উদ্দেশ্যে ঘাটতি পরে তখনই কোন জিনিস ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহণ করে। সেই গ্রুপগুলোও হয়তো এমনই কিছু করেছে। কোন বিশেষ অসৎ উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেতে হয়েছে।

ইটিভি অনলাইন: ফেসবুক গ্রুপগুলো মূলত নিজ উদ্যোগের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। এখান থেকে পাওয়া সেবাগুলোও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। তাহলে কী অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে?

বিথী: অনেক কিছুই। যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া, নিজের ক্ষমতা জাহির করার মানসিকতা। অনেকে তো শুধুমাত্র লোক দেখানোর উদ্দেশ্য গ্রুপ খুলে বসে থাকে। সবাইকে দেখায় যে, সে একটি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি। লোক দেখানো ভাব এবং অহংকারই এর জন্য দায়ী।

ইটিভি অনলাইন: আপনাদের গ্রুপের সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু বলুন।

জেবিন: আমাদের গ্রুপের সব কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায় সামাজিক কাজগুলো। পথশিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করি আমরা। আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা শহরে পথশিশুদের শিক্ষা সেবা দিয়ে থাকে এমন স্কুলগুলোকে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি আরও যেসব সহায়ক জিনিস দরকার হয় সেগুলোর যোগান দেবার। সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও পাঠ্য বইয়ের বাইরে কোন বই অথবা কর্মকাণ্ডে খুব একটা সক্রিয় দেখা যায় না। সেখানে একটি পথশিশু গল্পের বই পড়বে এ তো অনেকের কল্পনার বাইরে। কিন্তু আমরা এমন উদ্যোগ নিচ্ছি। এছাড়াও ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা শহরে বিভিন্ন সাইনবোর্ড বা ব্যানারের ভুল বানানগুলো শুদ্ধ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

বিথী: এছাড়াও গত ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশীতে আমরা ৩০০ জন রিক্সা চালকের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি। তাদের বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষাও করে দেই আমরা। সেখানে চিকিৎসা দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা। সাধারণত রিক্সা চালকেরা সে অর্থে স্বাস্থ্য সেবা পান না। তাদের জন্য আমাদের এ উদ্যোগ। এর সঙ্গে আমরা একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রায় তিন লাখ সদস্য। প্রতিটি সদস্য একটি করে গাছ লাগাবে এমন একটি উদ্যোগ নিতে কাজ করছি আমরা।

ইটিভি অনলাইন: আমরা জানতে পেরেছি গত বছরের শেষ দিন আপনারা একটি বৃদ্ধাশ্রমে কাটিয়েছেন। সেখানে থাকা সদস্যদের সঙ্গে আপনারা সেই মুহূর্তটি ভাগাভাগি করেছেন।

বিথী: জ্বী। আমরা চেষ্টা করি বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে এসব নিঃসংগ মানুষদের সঙ্গে সময় কাটানোর। তাদের সন্তানরা যখন তাদেরকে এমন নিঃসঙ্গ অবস্থায় রেখেছেন তাদের খানিকটা পরিবারের স্বাদ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

ইটিভি অনলাইন: নিজেদের পেশাগত কাজের পাশাপাশি গ্রুপের জন্য সময় দিতে হয়। এর বাইরে ব্যক্তি জীবনে আর কতটুকু সময় পাওয়া যায়?

বিথী: একেবারেই সময় পাওয়া যায় না। আমি নিজে সাংবাদিকতা পেশায় আছি। এ পেশার জন্য এমনিতেই অনেক সময় আর শ্রম দিতে হয়। তারপর আবার গ্রুপের কিছু কাজ থাকে। কিছু কিছু ব্যাপার এড়ানোও যায় না। তখন দেখা যায় দিনশেষে নিজের জন্য আর সময় থাকে না। অনেক সময় পরিবারকেও সময় দেওয়া যায় না।

জেবিন: একবারের ঘটনা বলি। আমাদের গ্রুপের একটি কাজে এডমিন ইমন ভাই এত ব্যস্ত ছিলেন যে, তার ছোট বোনের জন্মদিনের কথা ভুলেই যান। সে খুব অভিমান করে। সময় স্বল্পতার কারণে মাঝে মাঝে আমাদের কাছের মানুষগুলোর কাছে বিব্রত হতে হয়।

ইটিভি অনলাইন: মাঝে মাঝে আশেপাশ থেকে কেউ বলে ওঠে না যে, আরে আপু, আপনি না ডিএসই এর এডমিন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?

বিথী: এটা প্রায়ই হয় (লাজুক হাসি)। সত্যি কথা বলতে তখন খুবই ভালো লাগে। অনেক সময় অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তখন ভাললাগাটা আরও বেশি কাজ করে।

জেবিন: একবারের ঘটনা বলি। ঢাকা থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া যাচ্ছি। আসন পাইনি তাই দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম। এক ভাইয়া আমাকে চিনতে পেরে নিজে উঠে গিয়ে আমাকে বসতে বলেন। অনেক বার মানা করেও নিস্তার পাইনি। সারা পথ আলাপচারিতায়

ইটিভি অনলাইন: কখনও এমন হয়েছে যে, আপনাদের আশেপাশে থেকে কেউ একজন ডিএসই গ্রুপের প্রশংসা করছে কিন্তু সে জানে না যে আপনারাই ডিএসই এর অভিভাবক। তখন কেমন লাগে ?

বিথী: এরকম হয় মাঝে মাঝে। একদিন বাসে থাকা অবস্থায় পাশের সিটে দুই ব্যক্তির আলাপচারিতা শুনতে পারি। তারা একে অপরকে বলতেছিল যে, ডিএসই গ্রুপটা অনেক সাহায্যকারী। এমন শুনলে মনে হয় এত কষ্ট সার্থক।

ইটিভি অনলাইন: আমরা একদমই শেষ দিকে। জানতে চাইব গ্রুপের সদস্যদের প্রতি আপনাদের কোন বার্তা আছে কী না?

জেবিন: আমরা আমাদের গ্রুপ সদস্যদেরকে শুধু এটুকুই বলব যে, তাদের সবার সাহায্য সহযোগিতায় আমাদের গ্রুপটা এত পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। আশা করি, ভবিষ্যতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। সবাই সবাইকে সাহায্য করব এই আশা রইল।

বীথি: এটুকু বলব যে, মানুষকে ভালবাসি। সেই ভালবাসা এবং দায়বদ্ধতা থেকেই কিছু কাজ করার চেষ্টা করি। তবে শুধু আমরা করলেই হবে না। আমাদের প্রত্যেককে একজন একজন করে নিজেদের জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। শুধু নিজেদেরটা চিন্তা না করে সমাজের জন্য দেশের জন্য কাজ করলে দেশটা এগিয়ে যাবে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি