ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ঘরে ভাইরাস জ্বর-চিকনগুনিয়া-ডেঙ্গু: চিকিৎসকদের পরামর্শ

প্রকাশিত : ১৭:২৭, ৯ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৭:৫৮, ১২ জুলাই ২০১৮

রাজধানীর বাংলামোটরের বাসিন্দা তাহমিনা আক্তার (৩২) হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গে তার বমি, মাথা ও শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। সোমবার সকালে তার জ্বরের মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ ডিগ্রিতে। পরে স্বজনরা নাহিদাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখানকার একজন চিকিৎসক রোগের লক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, চিকনগুনিয়া ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এ নারী। চিকিৎসক তাকে ওষুধ প্রেসক্রাইব করে বাসায় পাঠিয়ে দেন। গল্পের শেষ এখানেই নয়। তার পরিবারের সবাই ক্রমান্বয়ে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। তাহমিনার আক্রান্ত হওয়ার দু’দিন পর তার ছোট ভাই ফারুক একই রকম জ্বরে আক্রান্ত হয়। কিছু সময় পর পর জ্বরের মাত্র বাড়তে থাকে। জ্বর না কমায় তাকে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ধরা পড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

গণমাধ্যম কর্মী রিজাউল করিম গত ৩দিন ধরে জ্বর আক্রান্ত সঙ্গে বমি হচ্ছে। মাঝে মাঝে জ্বরের মাত্র ১০৩ডিগ্রি ছাড়াচ্ছে। ডাক্তার দেখে্ কিছু ওষুধ দেন। তার জ্বর কমছে না। পরে ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ধরা পড়ে ভাইরাস জ্বর। শুধু নাহিদা আক্তার, ফারুক, রিজাউল নন, তাদের মতো আরও অনেকেই হঠাৎ করে ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিশেষ করে রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় গেলে ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তদের লম্বা লাইন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজ কম করে হলেও দুই শতাধিক রোগী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার দেখাতে আসছেন।

জ্বরের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, অবহেলা না করে প্রয়োজনমতো বিশ্রাম ও ওষুধ সেবন করলে মুক্তি মিলবে এই রোগ থেকে। বৃষ্টিবাদলের এই সময়ে জমে থাকা জলে মশা বিস্তার লাভ করায় এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। বেশিরভাগ রোগী দ্রুত সুস্থ্য হলেও, চিকিৎসকরা বলছেন, চিকনগুনিয়ার জীবানু কিছু রোগীর শরীরে বয়ে বেড়াতে হয় সারা জীবন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এডিস মশার অবাধ বিচরণই চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু বিস্তারের মূল কারণ। আক্রান্ত হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ তাদের।  

চিকিৎসকরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনও এসব রোগের জন্য অনেকাংশেই দায়ী। তাই এর বিস্তাররোধে নীতিনির্ধারকসহ সর্বস্তরের মানুষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ তাদের।

পরিসখ্যান বলছে চলতি বছর এই জ্বরে গত রোববার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩৩ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন। তাদের একজন শক সিন্ড্রোমে মারা গেছেন। বাকি চারজন হেমোরেজিক (রক্ত বের হয়ে মৃত্যু) হয়ে মারা গেছেন।  

করনীয়

ভাইরাস জড়িত জ্বরের বিষয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ভাইরাস জ্বর সাধারণত তেমন কোনো ভয়াবহ রোগ নয়। তাই এই জ্বরে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এই জ্বরের জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক জরুরি নয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই হয়। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম প্রয়োজন। ভাইরাস জ্বর হলে খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। খাবারের মধ্যে ভিটামিন সি ও জিঙ্কযুক্ত খাবার প্রাধান্য দিতে হবে।

সাবধানে চলাফেলা করতে হবে। গরম এড়িয়ে চলতে হবে। পরিশ্রমের কারণে শরীরে ঘাম দেখা দিলে অবশ্যই পরিস্কার করতে হবে। যাদের অধিকাংশ সময় বাড়ি ও অফিসের বাইরে থাকতে হয় তারা অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবেন।

পোষাক হতে হবে অবশ্যই আরামদায়ক ও ঢিলেঢলা। যাতে খুব সহজে শরীরের ঘাম বের হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা শ্রমিক, বাচ্চা এবং বয়স্কদের বাড়তি সর্তক থাকতে হবে। এছাড়া রাস্তার খোলা খাবার পরিত্যাগ করে হবে সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হলে বাড়িতে তৈরি খাবার খেতে হবে।

তবে যারা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হবে তাদের অবশ্যই কিছুক্ষণ পরপর শরীর পাতলা গামছা বা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে ও মাথায় পানি দিতে হবে। শরীর গরম হলেই থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মেপে ওষুধ খেতে হবে। জ্বর আক্রান্ত স্থায়িত্বকাল ৪-৫ দিন। তবে জ্বরের তীব্রতা বাড়লে অবশ্যই ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে।

চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক। এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে ওষুধ খেতে হবে।

গিঁটের ব্যথার জন্য গিঁটের উপরে ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। তবে প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিঁটের ব্যথা ভালো না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। কোনো কারণে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে দ্রুত নিকটস্থ সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।

টিআর/ এআর

 

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি