ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

জেরুজালেম প্রশ্নে ওআইসি চুপ থাকতে পারে না: রাষ্ট্রপতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২০:০৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, যুক্তরাষ্ট্রের ওই বৈরী সিদ্ধান্তের পর ওআইসি চুপ করে বসে থাকতে পারে না। আরব দেশগুলোর আহ্বান উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়ায় ওআইসির বর্তমান চেয়ার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান জোটের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এ সম্মেলন ডেকেছেন। ওআইসির বিশেষ এ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য- ‘আল-কুদসের (জেরুজালেমের আরবি নাম) প্রতি সংহতিতে সম্মিলিত উদ্যোগ’।

ইস্তাম্বুল কংগ্রেস অ্যান্ড এক্সিবিশন সেন্টারে বুধবার এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি হামিদ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশের আগের অবস্থানেই অটল থাকার কথা বলেন। জেরুজালেম মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- সব ধর্মের অনুসারীদের কাছেই পবিত্র নগরী। ইসরায়েল বরাবরই জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী বলে দাবি করে আসছে। অন্যদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চান ফিলিস্তিনের নেতারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ৬ ডিসেম্বর এক ঘোষণায় জানান, জেরুজালেমকে তিনি ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করতে পররাষ্ট্র দফতর নির্দেশ দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের অনুভূতিতে একটি আঘাত হয়েছে এসেছে এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মুসলিম বিশ্বে নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হলে তা সহিংস উগ্রবাদকে আরও উসকে দিতে পারে, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পরপরই জেরুজালেম, গাজা, পশ্চিম তীর, রামাল্লা, হেব্রন, বেথেলহেম, নাবলুসসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। আরব ও ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘও ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দেয়।

ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলনের দল হামাসও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন ইন্তিফাদা (গণআন্দোলন) শুরুর ডাক দেয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ ডিসেম্বর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের স্বতঃপ্রণোদিত ওই ঘোষণা মুসলিম বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে তিনি মনে করেন না।
পরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতেও বলা হয়, জেরুজালেমের স্বীকৃতির বিষয়টি অবশ্যই জাতিসংঘের রেজুলেশনের কাঠামোর মধ্যে রাখতে হবে।

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর যে সীমানা ছিল, সে অনুযায়ী জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়টিও ওই বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানিয়ে ওআইসি সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই ঘোষণায় মুসলমানদের পবিত্র শহর আল কুদস বা জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে। তাতে ওই শহরের ঐতিহাসিক ও আইনি পরিচয়, অধিবাসীদের জাতিয়তার ধরন এবং এর আরব-ইসলামিক চরিত্র যাবে। মুসলিম বিশ্ব তা কখনোই মেনে নেবে না।

আবদুল হামিদ বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ৪৬৭ নম্বর প্রস্তাবে জেরুজালেমের রাষ্ট্রীয় পরিচয় পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। আর ৪৭৮ নম্বর প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ওই ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন বন্ধ করে জেরুজালেমের আইনি পরিচয় এবং জনমিতিক বৈশিষ্ট্য বদলে দেওয়ার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ওআইসির বিশেষ সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের ওই সিদ্ধান্ত জেরুজালেমের মুসলমান ও খ্রিস্টানসহ ফিলিস্তিনি জনগণের আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ফিলিস্তিনের ‘ভাই-বোনদের’ অধিকার ও ন্যায় বিচারের প্রশ্নে পূর্ণ সমর্থন নিয়ে পাশে আছে বাংলাদেশের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র যাতে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং এই সঙ্কটে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে, সেই দাবিতে মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।

আবদুল হামিদ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া পুররুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র নীতির আলোকে গঠনমূলক এবং বাস্তবমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

ওআইসিকে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ইসরাইলকে তাদের নীতি ও কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে বাধ্য করার চেষ্টায় আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জেরুজালেম নিয়ে ওআইসির এ পর্যন্ত যেসব বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে ওআইসি মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন এবং ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসও বক্তব্য দেন।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি